মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বর্ষার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হিমাচলের বিভিন্ন জায়গায় এখন শুধু স্বজনহারানোর কান্না। বৃষ্টির জেরে হড়পা বান আর ধসের তাণ্ডব চলছে গোটা হিমাচল প্রদেশ জুড়ে। সিমলা, সোলান, মান্ডি, চাম্বা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে শুক্রবারও বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বজ্রগর্ভ মেঘ-সহ মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় হাওয়া অফিস। গত রবিবার থেকে হিমাচলে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছিল। টানা তিন দিন ধরে নাগাড়ে বর্ষণের পর, মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমেছে। বৃহস্পতিবারও রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে।
একাধিক জায়গায় ধস
রাজধানী সিমলায় গত কয়েক দিনে মুহুর্মুহু ধস নেমেছে একাধিক জায়গায়। সেই ধসে চাপা পড়ে কেউ নিখোঁজ, কারও দেহ উদ্ধার হয়েছে। কেউ পরিজনদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে শিউরে ওঠা ছবি ভেসে উঠেছে সিমলা-সহ হিমাচলের বেশির ভাগ অংশে। ভূমিধসের কারণে সিমলার বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। বর্ষার মরসুম শুরুর পর থেকে ভারী বর্ষণজনিত দুর্ঘটনায় হিমাচলে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিগত কয়েক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জনের। হিমাচলের চারিদিকে এখন শুধুই হাহাকার, মৃত্যু যন্ত্রণা।
#WATCH | Himachal Pradesh: Search & rescue operation underway at the landslide-affected areas of Shimla.
— ANI (@ANI) August 18, 2023
(Visuals from Summer Hill Area) pic.twitter.com/aOjTfpHjmA
কেন বারবার ধস
পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পরিবেশগতভাবে হিমালয় ভঙ্গুর। সেখানে, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্মাণ হয়েছে। বনভূমি কেটে কেটে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। অবৈজ্ঞানিক নির্মাণের ফলে মাটি নীচে জলপ্রবাহ বাধা পাচ্ছে। এর ফলে ঘন ঘন ধস নামছে। চলতি বছরে বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে গত ৫৫ দিনে উত্তরের এই পাহাড়ি রাজ্যে মোট ১১৩টি বড় মাপের ধস নেমেছে। বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হিমাচল প্রদেশের সিমলা, কাংড়া এবং মান্ডি জেলার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। একের পর এক ঘরবাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। ভেসে গিয়েছে বহু গ্রাম, চাষের জমি। এমনকি, বদ্রীনাথ, কেদারনাথ যাওয়ার রাস্তাও ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে রাজ্যের ৭০০-র বেশি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জল এবং খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। বিপদের মুখে পড়েছে হিমাচলের জনজীবন।
আটকে বহু পর্যটক
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সূত্রে খবর, হিমাচল প্রদেশের বহু জায়গায় পর্যটক এবং স্থানীয়েরা আটকে রয়েছেন। উদ্ধারকাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ২৯টি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি দল ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বাকি ১৫টি দলও ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা এবং স্থানীয় প্রশাসনও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: আজ বেঙ্গালুরুতে পালিত হবে ‘জিরো শ্যাডো ডে’! জানেন কী এর বৈশিষ্ট্য?
১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
এদিকে, হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু উপদ্রুত অঞ্চলগুলি পরিদর্শনের পর জানিয়েছেন, রাজ্যের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ভূমিধসের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে পরিকাঠামোর। সেগুলির পুনর্নির্মাণের চ্যালেঞ্জ ‘পাহাড় প্রমাণ’। হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাও পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজ্য জুড়ে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি এই রাজ্যের অর্থনীতি মূলত পর্যটন এবং আপেল ব্যবসার উপর নির্ভর করে। এই দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। হোটেল এবং গেস্ট হাউসে লোক নেই, পর্যটকদের অভাবে রোজগার নেই ট্যাক্সিচালকদেরও। হেলিকপ্টার এবং মোটর বোটের মাধ্যমেও উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours