মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল বুদ্ধ পূর্ণিমা। এটি ভগবান বুদ্ধের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পালন করা হয় এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বার্ষিক উৎসব এটি। এই বছর বুদ্ধ পূর্ণিমা ১৬ মে গোটা দেশে উদযাপিত হবে। ভগবান বুদ্ধই বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার বলেও মনে করা হয়। আসুন এই উৎসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বুদ্ধ পূর্ণিমার সময়
১৬ মে, ২০২২ (সোমবার)
বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভ মুহূর্ত
পূর্ণিমা তিথি শুরু -২৫ শে মে ২০২১ মঙ্গলবার সন্ধে ৮টা ২৯ মিনিট।
পূর্ণিমা তিথি শেষ – ২৬ শে মে ২০২১, বুধবার বিকেল ৪টে ৪৩ মিনিট পর্যন্ত।
ইতিহাস
ভগবান বুদ্ধ বা গৌতম বুদ্ধ নেপালের লুম্বিনী-তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম রাজা শুদ্ধোধন এবং মাতা ছিলেন মায়াদেবী। জন্মের পর তাঁর নাম ছিল সিদ্ধার্থ গৌতম। তাঁর জন্মের পরে একজন সাধু তাঁকে দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই শিশু পরবর্তীকালে একজন রাজচক্রবর্তী অথবা একজন সিদ্ধ সাধক হবেন। রাজকুমার নিজেকে পার্থিব বাসনা এবং বস্তুবাদী বন্ধন থেকে দূরে রাখবেন।
কথিত আছে, উনত্রিশ বছর বয়সে রাজকুমার সিদ্ধার্থ প্রাসাদ থেকে কয়েকবার ভ্রমণে বেরোলে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, একজন অসুস্থ মানুষ, একজন মৃত মানুষ ও একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। এই দৃশ্যগুলি দেখে সিদ্ধার্থ তাঁর রাজজীবন ত্যাগ করে একজন সন্ন্যাসীর জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধার্থ এক রাত্রে তাঁর পরিবারকে নিঃশব্দ বিদায় জানিয়ে রাজ প্রাসাদ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি আধ্যাত্মিকতার পথে হাঁটেন এবং শীঘ্রই তিনি বিহারের বুদ্ধগয়াতে বোধি গাছের নীচে সত্য জ্ঞান অর্জন করেন।
বুদ্ধ পূর্ণিমা কী ?
গোটা দুনিয়া জুড়েজু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং হিন্দুরা গৌতম বুদ্ধের জন্ম বুদ্ধ জয়ন্তী হিসাবে উদযাপন করে। ৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের লুম্বিনিতে পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধের রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম হিসাবে জন্ম হয়েছিল। সুতরাং, তাঁর জন্মবার্ষিকীর দিনটি বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বুদ্ধজয়ন্তী বা ভেসাক নামেও পরিচিত। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, জাভা, ইন্দোনেশিয়া, তিব্বত, মঙ্গোলিয়ায় উৎসবের মধ্য দিয়ে বুদ্ধজয়ন্তীর বিশেষ দিনটিকে ‘ভেসাক’ উৎসব হিসাবে পালন করা হয়।
বুদ্ধ পূর্ণিমার গুরুত্ব
বৈশাখী পূর্ণিমার তিথিতে সূর্যোদয়ের পর স্নান করে শ্রী শ্রী বিষ্ণুর পুজো করা হয়। এদিন ধর্মরাজের পুজো করারও রীতি বেশ প্রচলিত আছে। সত্যবিনায়ক ব্রত করলে ধর্মরাজ প্রসন্ন হন। ধর্মরাজ যম হল মৃত্যুর দেবতা। তাই যমকে প্রসন্ন করলে অকাল মৃত্যুর যে ভয়, তার থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। সাধারণত পূর্ণিমার দিনে তিল ও চিনির দান শুভ বলে মনে করা হয়। এর ফলে অজান্তে হওয়া পাপ থেকে মুক্তি লাভ
করা যায়।
বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য
১) ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন ভোরবেলা স্নান করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ২) এই দিনটিতে অনেকেই দান-ধ্যান করেন, যারা দরিদ্র তাদের খাওয়ান। ৩) প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় বুদ্ধগয়া-য়।
বুদ্ধ পূর্ণিমার আচার-অনুষ্ঠান
১) ভগবান বুদ্ধের ভক্তরা এদিন ভোরে উঠে পবিত্র স্নান সেরে তাঁর জন্মবার্ষিকী পালন শুরু করেন। ২) এদিন ঘর পরিষ্কার করা হয় এবং চারিদিকে গঙ্গা নদীর পবিত্র জল ছেটানো হয়। ফুল এবং পাতা দিয়ে বাড়ি সাজানো হয়। ৩) বাড়ির প্রবেশপথে হলুদ, রোলি এবং গঙ্গাজল দিয়ে স্বস্তিক চিণ্হ আঁকা হয়, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত। ৪) বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয় এবং বৌদ্ধধর্ম অনুসরণকারীরা এই দিনে বুদ্ধগয়া-তে যান। ৫) বোধি গাছের উপাসনা করা হয়। ৬) রঙিন পুষ্পমালা গাছে বাঁধা হয় এবং ভক্তরা গাছের গোড়ায় দুধ ও জল ঢালেন।
+ There are no comments
Add yours