Durga Puja 2022: “কলা বৌ” আসলে কার বৌ জানেন কি ?

পুরাণ অনুযায়ী, গণেশের দুটো বৌ। একজন ঋদ্ধি ও অপরজন সিদ্ধি।
Kola_Bou_Snan_Ultimate
Kola_Bou_Snan_Ultimate

শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: মা দুর্গার বড় ছেলের পাশেই তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন। লাল পাড়ের শাড়ি পরিয়ে নারী মূর্তির আদল দেওয়া হয় তাঁকে। আসলে তিনি যে বৃক্ষ। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন "কলা বৌ" (Kola Bou)। ঢাক ঢোল বাজিয়ে,  ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে "কলা বৌ" স্নান করানো হয়, তারপর তা'  স্থাপন করা হয় ঠিক গণেশের পাশে। বধূ বেশে, ঘোমটা টেনে গণেশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা "কলা বৌ" কি তবে গণেশের বৌ ? এ প্রশ্ন অনেকেরই মনে বাসা বাঁধে। আবার কেউ কেউ এই ধারণাটাই সঠিক মনে করেন। 

পুরাণ অনুযায়ী, গণেশের দুটো বৌ। একজন ঋদ্ধি ও অপরজন সিদ্ধি। তাঁরা দুজনেই ব্রহ্মার মানস কন্যা। শিক্ষার উদ্দেশ্যে এই দুজন গণেশের কাছে যান এবং কোনো কারণবশতঃ গণেশ রূষ্ট হয়ে তাঁদের দুজন কে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে ব্রহ্মা আবির্ভূত হন এবং গণেশের সাথেই দুজনের বিবাহ দেন।

"কলা বৌ" তো তাহলে গণেশের বৌ নয়।  তবে "কলা বৌ" আসলে কার বৌ ? এককথায় উত্তর হবে - শিব জায়া অর্থাৎ শিবের বৌ। "কলা বৌ" আসলে মা দুর্গার বৃক্ষ রূপ। এ প্রসঙ্গে জানা দরকার যে - "কলা বৌ" প্রচলিত নাম হলেও এটি ন'টি উদ্ভিদের সমষ্টি বা সমাহার। তাই "কলা বৌ" এর আসল নাম "নবপত্রিকা"। এই ন'টি উদ্ভিদের বর্ণনা রয়েছে এই শ্লোকটিতে -   

রম্ভা কচ্চী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ।
অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা।

রম্ভা (কলা ), কচ্চী (কচু ), হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব( ডালিম), অশোক, মানকচু ও ধান গাছ‌। নবপত্রিকায়, একটি পাতা যুক্ত কলাগাছের সাথে অপর আটটি উদ্ভিদ কে শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। কলা গাছটিকে কে নারী দেহের গঠন দেওয়ার জন্য বেল দুটিকে স্তনযুগলের মতো রাখা হয়।

অতিপ্রাচীন কাল থেকেই প্রকৃতি পূজা ভারতীয় উপমহাদেশের রীতি। অগ্নি,জল, বায়ু, মাটি, পাহাড়, গাছ, নদী সবকিছু তেই ঈশ্বর বিরাজমান - এ ধারণা থেকেই "নবপত্রিকা" বা "কলা বৌ" এর পুজো‌। উদ্ভিদ প্রকৃতির সজীব অংশ। খাদ্য শস্য, নিঃশ্বাসের বাতাস, জীবনদায়ী ঔষধ এসব কিছু তেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উদ্ভিদ। ভক্তদের কল্যাণকারী মা দুর্গা তাই  অধিষ্ঠাত্রী দেবী নবপত্রিকার এই উদ্ভিদ গুলোতে। তিনি সর্বত্র বিরাজমান।নবপত্রিকা মা দুর্গার বৃক্ষ রূপ হিসেবে পরিচিত।

মহাসপ্তমীর সকালে  "নবপত্রিকা" এর পুজোতে মন্ত্র পাঠ করা হয় - 
"নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ"  যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় - নবপত্রিকা বাসিনী নবদুর্গা ।
এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক নবপত্রিকার ন'টি গাছ দেবী দুর্গার কোন কোন রূপের প্রতীক।

১. রম্ভা (কলা গাছ): কলা গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী;
২.কচু : কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা;
৩.হরিদ্রা (হলুদ গাছ): হরিদ্রা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা;
৪.জয়ন্তী: জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী;
৫.বিল্ব (বেল গাছ): বিল্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা;
৬.দাড়িম্ব (ডালিম/বেদানা গাছ): দাড়িম্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা;
৭.অশোক: অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা;
৮.মানকচু: মানকচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা;
৯.ধান: ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।

হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি নীতি বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন ১৯৬১ সালের " আকাডেমিক পুরস্কার " প্রাপক গবেষক ডঃ শশিভূষণ দাশগুপ্ত। নবপত্রিকা পুজো বিষয়ে তিনি তাঁর " ভারতের শক্তি সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য গ্রন্থের " ২৫-২৬ পাতায় লিখছেন - " বলাবাহুল্য এসবই হলো পৌরাণিক দুর্গা দেবীর সাথে এই শস্য দেবীকে ( পড়ুন "নবপত্রিকা") সর্বাংশে মিলিয়ে নেওয়ার এক সচেতন চেষ্টা। এই শস্য দেবী, মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ। সুতরাং আমাদের জ্ঞাতে অজ্ঞাতে দুর্গা পুজোর ভিতরে এখনো সেই আদিমাতা পৃথিবীর পুজো , অনেক খানি মিশিয়া আছে "।

নবপত্রিকার সাথে দুর্গা পুজোর সম্পর্ক নিয়ে পন্ডিত মহলে নানা মত রয়েছে। মার্কন্ডেয় পুরাণে নবপত্রিকার কোনো বিধান নেই, আবার কালিকা পুরাণে সপ্তমীতে "পত্রিকা" পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। কৃত্তিবাসী রামায়ণে , রামচন্দ্র কর্তৃক নবপত্রিকা পুজোর কথা আছে। "বাঁধিল পত্রিকা নববৃক্ষের বিলাস"। পন্ডিত দের মত অনুযায়ী, সম্ভবত শবর সম্প্রদায় কোনও একসময়ে ন'টি উদ্ভিদের মাধ্যমে মা দুর্গার পুজো করতেন। সেই থেকেই হয়তো "নবপত্রিকা" বা "কলা বৌ" পুজো হয়ে আসছে।  

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles