Kali Puja: জনশ্রুতি, তাঁর নামেই হয়েছে রানাঘাট শহরের নামকরণ, জানুন রণ ডাকাতের কালীপুজোর গল্প

Kali Puja: 'ডাকাত কালী' আজও বাঙালির কাছে একটা মিথ হয়ে রয়েছে...
ranaghat-siddheswari
ranaghat-siddheswari

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাঝখানে মাত্র আর ক'টা দিন, তারপরই ভক্তরা মা কালীর (Kali Puja) আরাধনায় মেতে উঠবেন। মাতা কালিকা দশম মহাবিদ্যার একটি বিদ্যা। তিনি ভীষণ দর্শনা। শক্তি ও সাহসের দেবী। ডাকাতরা নাকি কোথাও ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মা কালীর (Goddess Kali) আরাধনা করত - এমন গল্প তো প্রচলিত রয়েছেই। এ নিয়ে বহু গল্প, উপন্যাস সংকলিত হয়েছে। 'ডাকাত কালী' আজও বাঙালির কাছে একটা মিথ হয়ে রয়েছে। রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতোই নদিয়ার রানাঘাটে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে মায়ের (Ranaghat Siddheswari Kali) আরাধনা হবে কালীপুজোর নির্দিষ্ট দিনে।

সপ্তদশ শতকে চূর্ণী নদীর তীরের জঙ্গল। লোক বসতি একদমই নেই। এখানেই থাকতেন ডাকাত দলের সর্দার রণ এবং তাঁর বাহিনী। মায়ের আরাধনা করে তিনি ডাকাতি করতে যেতেন। এমনটাই জনশ্রুতি রয়েছে ওখানে। আরও প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে, মা কালী সমস্ত কামনা পূরণ করতেন, তাই রণ ডাকাত এই মায়ের নাম সিদ্ধেশ্বরী রাখেন। মূলত ডাকাত রণ-র নাম অনুসারে চূর্ণী নদীর এই তীর রাণাঘাট নামে পরিচিত হয় বলেও শোনা যায়। 

আরও পড়ুন: ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী কাল্পনিক নয় বরং ঐতিহাসিক চরিত্র, জানুন তাঁদের কালী পুজোর কথা

মন্দিরের দেবীমূর্তি দক্ষিণা কালিকা বিগ্রহ। জনশ্রুতি রয়েছে, সেসময় বাংলায় ইংরাজের উত্থান সবে শুরু হয়েছে। একদিন এক ইংরাজ সাহেব প্রাণভয়ে ভীত হয়ে দেবীর মন্দিরে ছুটে এসে ঢুকে পড়েছিলেন এবং আত্মত্রাণের জন্য দেবীর চরণ স্পর্শ করে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। তখন ছিল রাত্রিবেলা। ইংরাজটি সে রাত্রে রক্ষা পেয়েছিল কিন্তু ইংরেজদের তখন ম্লেচ্ছ মানা হতো। তাই ম্লেচ্ছ স্পর্শের কারণে তখনকার সংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের বিবেচনায় দেবীকে নদীগর্ভে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল, সেই সঙ্গে দেবীর মন্দিরটিও ভেঙে ফেলা হয়েছিল। 

এরপর সে সময়কার সেবাইতের চেষ্টায় স্থানীয় ঘটক বংশীয় দুইজন ভক্ত ও জমিদার পাল চৌধুরীদের এক কর্তাব্যক্তির সহায়তায় দেবীর শিলাময়ী মূর্তি কাশীধাম থেকে এনে কোঠা মন্দির অর্থাৎ চাঁদনী জাতীয় মন্দির (বর্তমান মন্দিরের গর্ভগৃহ) নির্মাণ করে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তখন থেকেই শিলাময়ী দক্ষিণা কালীর মূর্তিটিই সিদ্ধেশ্বরী নামে রানাঘাটের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসাবে পূজিতা হচ্ছেন। এই মূর্তিটিও প্রাচীন। বয়স দু’শ বছরের কম নয়। মন্দিরের পাশে ছোট একটি মন্দিরে মহাদেব প্রতিষ্ঠিত আছেন। নাটমন্দির অনেক পরে তৈরি হয়। এ ব্যাপারে কতিপয় স্থানীয় লোকের আর্থিক সাহায্য ছিল। 

আরও পড়ুন: জানুন, সাতের দশকের কলকাতার ডন 'ফাটাকেষ্ট ও তাঁর কালীপুজোর গল্প‌'

জনশ্রুতি আছে, নাটমন্দির তৈরি হওয়ার আগে মন্দিরের দক্ষিণপূর্ব কোণে একটি বিরাট অশ্বত্থ গাছ ছিল। ওই গাছটি নাটমন্দির নির্মাণে বা মন্দিরের অন্যবিধ কাজে বাধা সৃষ্টি করেছিল। অথচ বিপদ-আপদ ঘটে যাওয়ার ভয়ে কেউই গাছটি কাটছিল না। তখন একজন নিঃসন্তান ব্যক্তি গাছটিকে কুঠারাঘাতে কেটে ফেলে। আশ্চর্য তারপর অপুত্রক সেই লোকটির ভাগ্য ফিরে যায় এবং আর্থিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর একাধিক সুন্দর স্বাস্থ্যবান পুত্র লাভ হয়। লোকটির প্রত্যেক পুত্রই সুপুত্র এবং তাঁরা জীবনে যথেষ্ট উন্নতি করেছিলেন। 

শ্বেতমর্মর প্রস্তরে তৈরি দুই ধাপ-বিশিষ্ট পঞ্চভুজ বা পঞ্চকোণ পঞ্চমুণ্ডের আসনোপরি দেবী-বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত। সিদ্ধেশ্বরী নাম হলেও দেবী মূর্তিটি সিদ্ধেশ্বরী বিগ্রহ নয়, এই মূর্তি উৎকৃষ্ট কষ্টিপাথর দ্বারা নির্মিত এবং শ্বেতপ্রস্তর খোদিত মহাদেব। প্রতি বৎসর দেবী মূর্তি রং দ্বারা অলঙ্কারিত করা হয়। মূর্তি উচ্চতায় তিন হাতের মতো। মন্দির গৃহ সাবেক আমলের-কড়ি বড়গার ছাদ, মর্মর দ্বারা বাঁধান মেঝে। সম্মুখদ্বারাটি যে প্রাচীনকালের তা দেখলেই বোঝা যায়। মন্দিরের সামনে বলিদানের ‘থান’। 

নাটমন্দিরটি দালান জাতীয় সাদামাটা আচ্ছাদিত স্থান, শিল্প-বৈশিষ্ট্য বর্জিত। সমগ্র মন্দির চত্বরটি বেশ বড়। দেবীর তত্ত্বাবধানের জন্য দেবত্র হিসাবে জায়গা দিয়েছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। এখন তা নেই। রানাঘাটের জনসাধারণ ও অন্যান্য দূর-দূরান্তরের মানুষ দেবী সিদ্ধেশ্বরীকে অতিশয় জাগ্রত মনে করে শ্রদ্ধাভক্তি করেন। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে, মা সিদ্ধেশ্বরী তাঁদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। কালী পুজোর (Kali Puja) সমস্ত রীতি মেনে এই পুজো সম্পন্ন হয়।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles