মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আধুনিক ব্যস্ত জীবনে বেড়েছে নানান সমস্যা। তার মধ্যে অন্যতম হল পিসিওডি। পিসিওডি হল পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ। মহিলাদের বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই সাধারণত এই সমস্যা দেখা যায়। দেহে হরমোনের পরিবর্তনের জেরেই এই সমস্যায় ভুগছেন বহু মহিলা। ভারতে এক নিঃশব্দ মহামারির মতো বাড়ছে এই সমস্যা। পিসিওডি একদিকে যেমন বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলছে, তেমনি স্থূলতা, অবসাদের মতো জীবনযাপনের সমস্যাকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে। চলতি বছরে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে প্রায় ৭ কোটি মহিলা পিসিওডি-র সমস্যায় ভুগছেন। ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত মহিলারা এই সমস্যায় ভোগেন।
পিসিওডি-র উপসর্গ
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঋতুস্রাবের পরেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব এই রোগের প্রধান উপসর্গ। নিয়মিত ঋতুস্রাব না হওয়া, অতিরিক্ত পরিমাণ ঋতুস্রাব, দেহে অতিরিক্ত লোম এই ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে পিসিওডি-র লক্ষণ বুঝতে হবে। তাছাড়া, অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলেও সেগুলো পিসিওডি-র উপসর্গ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
কেন বাড়ছে বিপদ?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে বাড়ছে পিসিওডি-র সমস্যা। কারণ, ভারতে অধিকাংশ মহিলারাই নিয়মিত শরীর চর্চা করেন না, যোগাভ্যাস নেই। তাই দেহের হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকছে না। নিয়মিত যোগাভ্যাস দেহে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এই রোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। আধুনিক জীবনে বদলে গিয়েছে খাওয়ার ধরণ। তাই শরীরে তৈরি হচ্ছে নানান নতুন বিপদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যস্ত জীবনে খাবারের মেনুতে থাকে নানান চটজলদি খাবার। তাছাড়া প্রিজারভেটিভ খাবারে অধিকাংশ অভ্যস্ত। পিৎজা, বার্গার, হটডগ, নানা রকমের ফ্রাই এখন দিন রাতের সঙ্গী। আর এগুলো শরীরে নানান হরমোনের তারতম্য ঘটাচ্ছে। স্থূলতার সমস্যা ডেকে আনছে। আর তার ফলেই পিসিওডি-র মতো রোগ দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: শীতের খাদ্য তালিকায় আদা রাখুন, জানুন এর গুণাগুণ
মোকাবিলার উপায়
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পিসিওডি-র সম্পূর্ণ মুক্তি সম্ভব নয়। অর্থাৎ, পিসিওডি সারে না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। জীবনযাপনের ধরণ বদলেই এই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই পিসিওডি-কে কাবু করতে হলে জীবনযাপনের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রথমেই নিয়মিত যোগাভ্যাস করতে হবে। এতে একদিকে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে, অন্যদিকে স্থূলতা কমবে। পিসিওডি নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে দেহের ওজন কোনওভাবেই যাতে অতিরিক্ত না হয়, সে দিকে নজর দিতে হবে। বিরিয়ানি, চাউমিন, পিৎজার মতো অতিরিক্ত তেল মশলা জাতীয় খাবার একেবারেই বাদ দিতে হবে। অতিরিক্ত মাংস, মাছ খাওয়া চলবে না। প্রোটিনের প্রয়োজন মেটাতে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। চিকেন খাবারের তালিকায় থাকলেও মটন, কাতলা মাছের মতো খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় কোনও খাবার একেবারেই উপযুক্ত নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নিয়মমাফিক চললে পিসিওডি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রয়োজন মতো ওষুধ যেমন নিতে হবে, তেমনি জীবনযাপনেও বদল আনতে হবে। জীবনযাপনের বদলই পিসিওডি নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। পিসিওডি নিয়ন্ত্রণে থাকলে বন্ধ্যাত্বের মতো বিপদও আটকানো সম্ভব।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours