মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ফরাসি রাফাল এম (Rafale-M Fighter Jet) নাকি মার্কিন এফ/এ-১৮ ই/এফ যুদ্ধবিমান— ভারতীয় নৌসেনার (Indian Navy) দুই বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য ও আইএনএস বিক্রান্ত-এর ডেক থেকে কে উড়বে? কয়েক বছর ধরেই সেই নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলছিল, ছিল দাবি-পাল্টা দাবি। কেউ রাফাল-এম বিমানকেই পছন্দ করলে, তো কারও মতে সেরা বাজি ছিল এফ/এ-১৮। প্রায় তিন বছর ধরে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। সূত্রের খবর, ফরাসি রাফালের ওপরই ভরসা রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামিকালই বাস্তিল ডে উৎসবে যোগ দিতে ফ্রান্সে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানেই সম্ভবত, এই মর্মে ঘোষণা করা হবে। জানা যাচ্ছে, ২৬টি বিমানের বরাত দেওয়া হবে ফরাসি দাসো এভিয়েশনকে।
‘রাফাল এম’ বনাম ‘এফ ১৮’ ডগফাইট
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতীয় নৌসেনার (Indian Navy) বরাত পাওয়ার ‘ডগফাইটে’ ঠিক কোন কোন জায়গায় প্রবল প্রতিপক্ষ এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমানকে টেক্কা দিল ফরাসি রাফাল? কীভাবে বোয়িংকে মাত দিল দাসো। নেপথ্যে এক নয়, রয়েছে একাধিক কারণ ও যুক্তি—
ভারতীয় রণতরীর বিশেষ স্কি-র্যাম্প (সামরিক পরিভাষায় STOBAR) ভিত্তিক ডেক থেকে ওড়ার সক্ষমতা থেকে শুরু করে মাঝ-আকাশে ক্ষিপ্রতা, বিভিন্ন ধরনের মিশনে দায়িত্ব সম্পন্ন করার দক্ষতা ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র বহনের ক্ষমতা ও বৈচিত্র্য— এই সব ক্ষেত্রেই দুই যুদ্ধবিমান প্রায় সমান-সমান। কেউ কারও থেকে পিছিয়ে ছিল না। এক কথায় টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ফারাক করা মুসকিল ছিল।
শুধুমাত্র তফাতের মধ্যে মার্কিন এফ/এ-১৮ এর তুলনায় রাফাল-এম (Rafale-M Fighter Jet) অনেকটাই হাল্কা বিমান। যে কারণে, রাফালকে সহজেই জাহাজের ডেকে অবরতণের করানো সম্ভব। কিন্তু, এটা একটা কারণ হলেও, বড় কারণ নয়। মার্কিন বিমানকে অন্য জায়গায় পিছনে ফেলে দিয়েছে রাফাল। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত লজিস্টিক্যাল অ্যান্ড অপারেশনাল কনভিনিয়্যান্স এবং ইন্টার-অপারেবিলিটি— এই জায়গায় রাফালে-এম এর থেকে পিছিয়ে পড়ে এফ/এ-১৮।
ইন্টার-অপারেবিলিটির সুবিধা
প্রথম ও প্রধান কারণ, ইন্টার-অপারেবিলিটি। ভারতীয় বায়ুসেনা ইতিমধ্যেই রাফাল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে। ৩৬টি যুদ্ধবিমান ভারতীয় বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত। ফলত, নৌসেনাতেও (Indian Navy) যদি রাফাল-এম (Rafale-M Fighter Jet) আসে, তাহলে রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি পেতে সহজ হবে। উপরন্তু, বায়ুসেনায় রাফালের যে ৮টি টুইন-সিটার ভেরিয়েন্ট রয়েছে, তাতে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে নৌসেনার পাইলটরাও। যদিও, নৌসেনাও সম্ভবত কয়েকটি টুইন-সিটার রাফাল-এম ভেরিয়েন্ট নিতে পারে। প্রাথমিক স্তরে, সূত্রের খবর ২৬টির মধ্যে ১৮টি সিঙ্গল-সিটার ও ৮টি টুইন-সিটার হতে পারে। যৌথ অভিযানে নৌসেনার রাফাল-এম ও বায়ুসেনার রাফালের মধ্যে সমন্বয়ের কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, এই দুই যুদ্ধবিমানের ৮৫ শতাংশ এক। অন্যদিকে, এফ/এ-১৮ ই/এফ কিনলে, গোটাটাই নতুন হবে। তার প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে কার্যপদ্ধতি, যন্ত্রপাতি, রক্ষণাবেক্ষণ। ফলে, তাতে খরচ বাড়বে।
ভারত-ফ্রান্স প্রতিরক্ষা সম্পর্কের সুদীর্ঘ ইতিহাস
দ্বিতীয় কারণ হল, ফরাসি নিশ্চয়তা। ভারতের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত। ঠিক যেমনটা একটা দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিরক্ষা সহযোগী ছিল ভারত ও রাশিয়া। আজ থেকে নয়, বিগত কয়েক যুগ ধরে ফরাসি যুদ্ধবিমান ব্যবহার কর আসছে ভারত। উরাগন থেকে শুরু করে সিপক্যাট জাগুয়ার, মিরাজ থেকে শুরু করে এখন রাফাল— ভারতীয় বায়ুসেনায় ফরাসি যুদ্ধবিমানের ইতিহাস দীর্ঘ। ভারত যে মিরাজ-২০০০ বিমান ব্যবহার করছে, তাতে কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি। ২০২১ সালে, ভারত ২৪টি সেকেন্ড-হ্যান্ড মিরাজ কিনেছে।
প্রযুক্তি হস্তান্তরের নিশ্চয়তা
তৃতীয়ত, ভারতের দেশে তৈরি নীতিতে ফ্রান্সের সম্মত হওয়া বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রযুক্তি হস্তান্তর নিয়ে কোনওপ্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই মাক্রঁর দেশের। নৌসেনায় (Indian Navy) ব্যবহৃত হচ্ছে, ফরাসি স্করপিন সাবমেরিন। সম্পূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সেগুলি ভারতেই তৈরি হচ্ছে। এছাড়া, সম্পূর্ণ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে মার্ক-৩ লাইট হেলিকপ্টার ইঞ্জিন তৈরিতে সাহায্য করতে ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছে ফ্রান্স। সম্প্রতি, ১০০ শতাংশ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতে নতুন জেট ইঞ্জিন তৈরির প্রস্তাবও দিয়েছে ফ্রান্সের সংস্থা সাফরান। এই ইঞ্জিনগুলি ভারতের ভবিষ্যতে দেশীয় পঞ্চম প্রজন্মের অ্যামকা যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করা হবে। শুধু তাই নয়, অনেকেই জানেন না, ভারতের তেজস যুদ্ধবিমান অনেকটাই ফরাসি নকশায় তৈরি। তাতে একাধিক ফরাসি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়।
ফলত, এত কিছু কারণের জন্যই নৌসেনার জন্য ফরাসি রাফাল-এম (Rafale-M Fighter Jet) যুদ্ধবিমানকে বাছতে চলেছে ভারত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours