Botanical Garden: শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন গঙ্গার ভাঙন ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে

ক্রমশ গঙ্গার গর্ভে চলে যাচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম হাওড়ার বি গার্ডেনের একাংশ?
Botanical_Garden_(1)
Botanical_Garden_(1)

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এশিয়ার বৃহত্তম হাওড়ার শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের (Botanical Garden) ভাঙন ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে ৷ দ্রুত এই ভাঙন রোধ করতে না পারলে ক্রমশ গঙ্গার গর্ভে চলে যাবে বি গার্ডেনের একাংশ। এই ভাঙন রোধে এবার বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হল। বি গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টর দেবেন্দর সিং জানিয়েছেন, হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনের যে অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে কী কী গাছ রয়েছে এবং কীভাবে সেই ভাঙন রোধ করা যায়, সে ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা করে কেন্দ্রীয় বন দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভাঙন রোধে কেন্দ্র না রাজ্য কারা কাজ করবে এবং কীভাবে দ্রুত সেই কাজ শুরু করা যায়, এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তারপরেই কাজ শুরু হবে। উল্লেখ্য, আইলার পর থেকে ভয়াবহ গঙ্গার ভাঙনে বিপন্ন হতে চলেছে এশিয়ার বৃহত্তম হাওড়ার শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন। ‘গ্রেট ব্যানিয়ান ট্রি’র জন্য শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। কিন্তু, ভয়াবহ গঙ্গার ভাঙনে বিপন্ন হতে চলেছে এই জাতীয় উদ্যান। বেশ কিছু জায়গাতেই নেই ফেন্সিং। যার জেরে ভাঙনের ফলে গঙ্গার গ্রাসে চলে যাচ্ছে বহু গাছ।

কপালে চিন্তার ভাঁজ পরিবেশ কর্মীদের

হাওড়া শহরের অনেকটা অংশ গঙ্গাবক্ষে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। গঙ্গার ভাঙন কীভাবে আটকানো যায়, তা দেখতে কিছুদিন আগে নৌকায় করে গঙ্গা বক্ষে ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেন পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলেন, আজ গঙ্গা পুরোপুরি বিপন্ন। যেভাবে ভাঙন প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, হয়তো ১৫-২০ বছর পরে হাওড়া শহরের বেশিরভাগ অংশই গঙ্গায় তলিয়ে যাবে। তাই একদিকে শহরকে রক্ষা করা, অন্যদিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনকে (Botanical Garden) রক্ষা করার জন্য এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, একটা সময় ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল। যেহেতু নোনা জলে এটি বাড়ে এবং গঙ্গাতেও নোনা জল ঢুকছে, তাই ম্যানগ্রোভ বেশি করে লাগানো যেতেই পারে। অন্যান্য যত রকম ভাবে গঙ্গার এই ভাঙ্গন রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। তিনি বলেন, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের জন্য গঙ্গায় পলি তোলার কাজ করে। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র যাহজ চলাচলের রুটটিতেই করা হয়। কিন্তু যদি তার বাইরের অংশতেও পলি তোলার কাজ করা হয়, তাহলে গঙ্গার গভীরতা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে পাড়ের দিকে জলের ধাক্কা ততটা লাগবে না। সেক্ষেত্রে রক্ষা পাবে পাড় ভাঙন।

কী বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা?

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রধান প্রবেশ পথ থেকে বাঁদিকে একটু এগোলেই শিবপুর গঙ্গার ঘাট। এই ঘাটের পাশেই শহরের জল নিকাশির সরু নালা ছিল। সেই নালা সংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাঁচিল অনেক আগেই ভেঙে গেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিবপুর গঙ্গার ঘাটের পাশে বোটানিক্যাল গার্ডেনের (Botanical Garden) দিকে একটি বাঁধানো চাতাল তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু কলকাতার দিকে গঙ্গার পাড় কংক্রিট দিয়ে বাঁধানো, তাই সমুদ্র থেকে আসা ঢেউ কলকাতার অংশে গঙ্গার পাড় ভাঙতে পারছে না। সরাসরি সেই জোয়ারের জল ধাক্কা মারছে শিবপুর গঙ্গার ঘাটের ওই বাঁধানো চাতালে। তারপর সেই ঢেউ ব্যাক ফ্লো করে ধাক্কা দিচ্ছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাড়ে। এর ফলে বিগত কয়েক বছরে ভাঙন অনেকটাই বেড়েছে। ভাঙনের ভয়াবহতা এতটাই যে গার্ডেন সংলগ্ন যে নিকাশি নালা আগে এক লাফে পার করা যেত, সেটি এখন ভাঙ্গনে বেড়ে বেড়ে ৫০ মিটারের বেশি পরিধি নিয়েছে। ভাঙনে গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছে বহু মূল্য উদ্ভিদও।

কী জানালেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা?

ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ভারতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (Botanical Garden) নামে পরিচিত। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে হাওড়ার শিবপুরে ইংরেজ আমলে তৈরি হয়েছিল এই ঐতিহাসিক উদ্ভিদ উদ্যান। এক সময় এটি কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত হলেও প্রতিষ্ঠাকালে এই উদ্ভিদ উদ্যানটি ক্যালকাটা রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে প্রসিদ্ধ ছিল। বিরাট এই  উদ্যান ২৭৩ একর আয়তনবিশিষ্ট । এখনও বহু পড়ুয়া ও পরিবেশপ্রেমীর আকর্ষণ এটি। আবার কলকারখানা সর্বস্ব হাওড়া শহরের ফুসফুসও বটে। এই উদ্যানে বর্তমানে মোট ১৪০০ প্রজাতির প্রায় ১৭,০০০টি গাছ রয়েছে। এই উদ্যানটি সাধারণ মানুষের কাছে শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেও পরিচিত। এই উদ্যানের সব থেকে বড় আকর্ষণ ২০০ বছরেরও প্রাচীন বটগাছ বা মহা বটবৃক্ষ।
বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন গঙ্গার পাড়ের ভাঙন নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন গার্ডেনে প্রাতঃভ্রমণে আসা এলাকার মানুষ। বোটানিক্যাল গার্ডেন ডেইলি ওয়াকার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও বাগান কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে ভাঙন রোধে। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তাপস দাস জানান, তাঁদের ডেপুটেশন কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভাঙন রোধে দ্রুত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাঁরা বিষয়টি দেখছেন।

কী পরিকল্পনা গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টরের? 

বোটানিক্যাল গার্ডেনের (Botanical Garden) জয়েন্ট ডিরেক্টর দেবেন্দ্রর সিং জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা কেন্দ্র সরকারের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। এখন কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গঙ্গার পাড়কে কীভাবে রক্ষা করা যাবে, গার্ডেন কর্তৃপক্ষ করবে না রাজ্য সরকার করবে। কেন্দ্রের কাছ থেকে উত্তর এলেই কাজ শুরু হবে।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles