মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথি থেকে হিন্দু নববর্ষ (Hindu New Year) বিক্রম সংবত ২০৮১ শুরু হল। ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই বিক্রম সংবত শুরু করেন মহারাজা বিক্রমাদিত্য। এই বছর ৯ এপ্রিল ২০২৪ থেকে শুরু হল চৈত্র নবরাত্রি। আর এই দিনটি থেকেই শুরু হল নতুন হিন্দু বছর বিক্রম সংবত ২০৮১ (Vikram Samvat 2081)। পুরাণ মতে, এই দিনেই শ্রী রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। আর এই দিন থেকেই শুরু হয় চৈত্র নবরাত্রি। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু এবং শিখরা এই ক্যালেন্ডার পদ্ধতি অনুসরণ করেন। এখানে সংবত শব্দের অর্থ হল বছর।
চলতি বছরে বিক্রম সংবতের তাৎপর্য
জ্যোতিষ শাস্ত্রে হিন্দু নববর্ষের (Hindu New Year) রাজা ও মন্ত্রীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সম্বৎ কার্যকরী হওয়ার নিয়ম অনুযায়ী যে সময় যে তিথি লাগে, সেই সময় থেকে সংবত বা নববর্ষের অধিপতি বা রাজা নির্ধারিত হয়। বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী চলতি বছর ৮ এপ্রিল রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে প্রতিপদ তিথি শুরু হচ্ছে। এ সময় থেকেই শুরু হচ্ছে বিক্রম সম্বৎ ২০৮১। এই নববর্ষের রাজা চাঁদ না-মঙ্গল, তা নিয়ে অনেকের মনে বিভ্রান্তি রয়েছে। কিছু পঞ্জিকা উদয়া তিথি গণনা করে এ বছরের রাজার পদে মঙ্গলকে বসাচ্ছেন এবং মন্ত্রী হবেন শনি। কিন্তু কিছু জ্যোতিষীদের মতে, যেহেতু চৈত্র শুক্ল প্রতিপদ তিথি ৮ তারিখ রাতে ১২টার আগে শুরু হচ্ছে, তাই বিক্রম সংবত ২০৮১-র রাজা হবে চন্দ্র। চলতি বছর গ্রহের এমন পরিস্থিতির কারণে নববর্ষে ভালো বৃষ্টি হবে, বলে মনে করছেন জ্যোতিষবিদরা। এর ফলে প্রজা সুখী ও সম্পন্ন থাকবে। রসযুক্ত পদার্থের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দেশে অধিক পরিমাণে ধর্ম-কর্মের কাজ হবে। জনতার প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। এমনকি শাসনক্ষমতার ওপর জনতার প্রভাব থাকবে। জনহিতকর কাজে প্রধানের অধিক নজর থাকবে। মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনও বড় ও লাভজনক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রভাব বাড়বে।
হিন্দু ক্যালেন্ডারে কটা মাস
বাংলা বা ইংরেজির মতো হিন্দু ক্যালেন্ডারেও রয়েছে ১২টি মাস, যার মধ্যে প্রথম মাস হল চৈত্র। এরপর বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্রপদ, আশ্বিন, কার্তিক, মার্গশীর্ষ, পৌষ, মাঘ এবং শেষ মাস হল ফাল্গুন। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যেমন জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন বছর, তেমনই চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হয় হিন্দু নববর্ষ। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ২০২৪ সাল হল হিন্দু ক্যালেন্ডারের নতুন বছর ২০৮১ বর্ষ।
প্রকৃতি দেবীর প্রভাব
ভারতীয় কালগণনা প্রকৃতিদেবীর (Hindu New Year) উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে। বসন্ত ঋতু প্রাকৃতিক কারণে নবজীবনের বার্তা বয়ে আনে। এই সময় প্রকৃতিও নবরূপ ধারণ করে। তাই এই দিনটি সমগ্র মানবজাতির নতুন বছরের প্রথম দিন। গোটা দেশেই এই সময়টায় নানা নামে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসাবে পালিত হয়। শুধু ভারতে নয় নেপাল সরকার তার সরকারী ক্যালেন্ডার হিসাবে বিক্রম সংবত ( Vikram Samvat 2081) ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে। এই ক্যালেন্ডারটি নেপালের একটি ঐতিহ্যবাহী ক্যালেন্ডার, মূলত সূর্যের অবস্থান পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে এবং ঐতিহ্যবাহী উৎসব এবং জাতীয় ছুটির দিন সহ বিভিন্ন জাতীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুুন: পদ্মকাননে মাধবীলতা! কে এই মহীয়সী, যাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ খোদ মোদি?
হিন্দু নববর্ষ পালনের ঐতিহাসিক কারণ
হিন্দু নববর্ষ পালনের পিছনে কয়েকটি ঐতিহাসিক কারণও রয়েছে। ব্রহ্মপুরাণ মতে, এই দিনেই প্রজাপতি ব্রহ্মা জগৎ সৃষ্টি করেন। তাই পৃথিবীতে এটি কালগণনার প্রথম দিন। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের শেষে যে যুগাব্দ গণনা শুরু হয়েছিল তা এই দিনটি থেকেই। এ বার শুরু হতে চলেছে ৫১২৬ যুগাব্দ। আবার উজ্জয়িনীর সম্রাট অত্যাচারী শকদের পরাজিত ও বিতাড়িত করে ‘শকারি বিক্রমাদিত্য’ উপাধি গ্রহণ করে ‘বিক্রম সংবত’ প্রবর্তন করেন এই দিন থেকেই। এ বার ২০৮১ বিক্রমাব্দের সূচনা হবে। এখানেই শেষ নয়। চৈত্র মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতেই যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। আবার এই দিন থেকেই চৈত্র নবরাত্রির সূচনা হয়। এই দিনেই শ্রী রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours