তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে, সরকারি হাসপাতাল (WB Hospital) নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল, দালালচক্র। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে ওষুধ সবটাই হবে বিনামূল্যে, সম্পূর্ণ নিখরচায়, এমন কথা সব সময় বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলেও টাকা দিতে হয়। সরকারি হাসপাতালে সক্রিয় একাধিক দালালচক্র। অন্য হাসপাতাল থেকে রেফার হোক কিংবা সরকারি হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি, দালালকে টাকা দিলে তবেই সম্ভব। না হলে, 'বেড নেই', এমনই শুনতে হয়।
কী অভিজ্ঞতা হয় রোগীর পরিবারের (WB Hospital)?
সরকারি হাসপাতালে (WB Hospital) ভর্তি নিয়ে নানান অভিযোগ রোগীর পরিবারের। তবে, দালালচক্রের জন্য সবচেয়ে বেশি হয়রানি হতে হয় রোগী ও পরিজনের। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে এক রোগী জ্বর, কাশি ও ফুসফুসের কিছু সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। তাঁকে পরীক্ষার পর চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। ফুসফুসের সমস্যার জন্য তাঁকে ভর্তি হতে বলা হয়। কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে কাউন্টারের কাছে কিছু ব্যক্তি এসে তাঁর পরিজনদের জানান, তাঁরা হাসপাতালের কর্মচারী। পরিবারের কাছে নগদ কয়েক হাজার টাকা দাবি করা হয়। তবেই রোগী ভর্তি করা হবে, এমনও জানানো হয়। পরিবারের সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ ছিল না। তাঁরা রোগী ভর্তি করতে পারেননি। পরে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সেই রোগী আরও জটিল বক্ষঃরোগ নিয়ে ভর্তি হন। মুর্শিদাবাদের ঘটনা ব্যতিক্রম নয়। এমনই অভিজ্ঞতা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের এক রোগী ও তাঁর পরিবারের। তাঁদের অভিযোগ, পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে যান বীরভূমের এক প্রৌঢ়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে হলেও দালালচক্রকে টাকা দিতে হবে বলেই অভিযোগ করেন ওই প্রৌঢ় ও তাঁর পরিবার।ফলে, বিনা চিকিৎসাতেই হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হয়। ভোগান্তির শিকার রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকজন জানাচ্ছেন, কলকাতা হোক বা জেলা, রাজ্যের যে কোনও সরকারি হাসপাতাল বিশেষত যে কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে রোগী ভর্তি করতে হলেই নগদ টাকা দিতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দালালচক্রে যাঁরা সক্রিয় থাকেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্মী। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও অধিকাংশ সময়ই কোনও সদুত্তর পাওয়া যায় না।
দালালচক্র (WB Hospital) নিয়ে সরব খোদ বিধায়ক থেকে সাংসদ?
সরকারি হাসপাতালের (WB Hospital) দালালচক্রের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে শুধু রোগী ও তাঁর পরিবার নয়। এবার তা নিয়ে মুখ খুলছেন তৃণমূলের বিধায়ক থেকে সাংসদ। সূত্রের খবর, সম্প্রতি দলের অন্দরেই একাধিক নেতা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, বারবার বিজ্ঞাপনে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বলা হচ্ছে। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে রোগী হয়রানি বাড়ছে। ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না, সময়মতো চিকিৎসাও পাওয়া যায় না। তবে, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে যেভাবে সরাসরি দালালচক্রের খপ্পরে পড়তে হয়, তা বন্ধ করা দরকার বলে দলের অন্দরেই জানাচ্ছেন নেতারা। তবে শুধু বন্ধ ঘরে নয়, হাসপাতালের দালালচক্র নিয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের বিধায়ক মদন মিত্র থেকে সাংসদ শতাব্দী রায়। সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতালে দালালচক্রের সক্রিয়তা নিয়ে মুখ খোলেন মদন মিত্র। সংবাদ মাধ্যমে জানান, টাকা না দিলে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যায় না।তৃণমূলের সাংসদ শতাব্দী রায়ও অভিযোগ করেন, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের দালালচক্র নিয়ে।
কী বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা?
স্বাস্থ্য দফতর কিন্তু এ নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছে। সরকারি হাসপাতালে (WB Hospital) দালালচক্রের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানায়, অভিযোগ জমা পড়লেই খতিয়ে দেখা হয়। কেউ ভোগান্তির শিকার হলে অভিযোগ জানান। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours