মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বেআইনি কাঠ পাচারকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত অসম-মেঘালয় সীমান্ত। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার ভোর রাতে পশ্চিম জয়ন্তীয়া পাহাড়ের অসম-মেঘালয় সীমান্তে অসম পুলিশের গুলিতে যে ছয়জন মারা গিয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন মেঘালয়ের বাসিন্দা ও একজন অসমের বনরক্ষী। সেখানে গতকাল থেকে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে সতর্কতা হিসেবে মেঘালয়ের ৭ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। যে গ্রামে ওই গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছে সেই মুকরো গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
এরপরে এই ঘটনা এখানেই সীমিত থাকে না। সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং-এ অসমের নম্বর প্লেট লাগানো এক এসইউভি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় কিছু দুষ্কৃতি। এই ঘটনার পরেই সেখানে পৌঁছে যায় দমকল বাহিনী। গাড়িটি পুরোপুরি ভাবে পুড়ে গিয়েছে। তবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা নিয়েও তদন্ত চালানো হচ্ছে।
গতকাল ঠিক কী ঘটেছিল?
অসমের পশ্চিম কার্বি আংলং জেলার পুলিশ সুপার ইমদাদ আলি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোর ৩টার দিকে বন দফতরের আধিকারিকরা অবৈধ কাঠ পরিবহনকারী একটি ট্রাককে আটক করে। মুকরো গ্রামে থেকে ওই ট্রাকে চাপিয়ে কাঠ চোরাচালান করা হচ্ছিল। তখন ওই ট্রাকটিকে বনকর্মীরা আটকানোর চেষ্টা করলে প্রবল গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। ট্রাকটিকে থামাতে পুলিশ বনকর্মীরা গুলি চালায়। টায়ার ফেটে গিয়ে সেটি থেমে য়ায়। তারপরই আটক করা হয় ৩ জনকে। কিন্তু ট্রাকে থাকা অন্যরা পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। এরপর বনকর্মীরা নিকটবর্তী জিরিকেনডিং থানায় খবর দেন। পুলিশ সেখানে পৌঁছনো মাত্র, ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আটক ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলে সেই এলাকার বাসিন্দারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় পুলিশের উপর। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতেই পুলিশ গুলি চালায়। আর এতেই এক বনকর্মী সহ এলাকার ৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করেছে আশেপাশের জেলাগুলিতেও।
সিট গঠন মেঘালয় সরকারের
মুকরো গ্রামে এমন ভয়াবহ ঘটনার তদন্ত করার জন্য মেঘালয় সরকারের তরফে ডিআইজি-এর নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, “যদিও আমরা কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন করছি, ততদিনে সিট তদন্ত শুরু করবে। এরপর ভারত সরকার যখন আবেদনটি অনুমোদন করবে, তখন তদন্ত তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, মেঘালয়ের ক্যাবিনেট টিম খুব শীঘ্রই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে এই ঘটনার বিষয়ে জানাবেন ও এই ঘটনার তদন্তভার সিবিআই বা এনআইএ-এর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বলবে।
অসম সরকারের তদন্ত কমিশন গঠন
মুকরোর ওই ঘটনার কথা মাথায় রেখে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অসম সরকার। কমিটির প্রধান হাইকোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। কোন পরিস্থিতিতে গুলিচালনা তা তদন্ত করে ৩ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্র সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মৃতদের ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে অসম সরকার।
+ There are no comments
Add yours