মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনবার। ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৩ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল ১৩ মাস। আর তৃতীয় দফায় (১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত) পুরো পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। এতক্ষণ যাঁর কথা বলা হল, তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বিজেপির অটল বিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee)। এই স্বল্প মেয়াদের ভারত-শাসন কালে দেশকে এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
বাজপেয়ী জমানা
বাজপেয়ীর কথা উঠলেই আমাদের মনে পড়ে ১৯৯৮ সালে পোখরানে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা ও ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের কথা। সব মিলিয়ে তাঁর বছর ছয়েকের রাজত্বকালে যে উন্নয়নের ধ্বজা তিনি উড়িয়েছিলেন, তা দেশকে দেখিয়েছে নয়া দিশা। নেহরু-গান্ধী পরিবার চেয়েছিলেন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে। সেই কারণে সব কিছুই ছিল কেন্দ্রীভূত। কোনও দেশের উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে জিডিপি গ্রোথ। এই জিডিপি গ্রোথের জন্যই হয় কর্মসংস্থান। যে দফায় বাজপেয়ী পুরো মেয়াদ শেষ করেছিলেন, সেই সময় উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলেন দেশে।
উন্নয়নের জোয়ার
তাঁর আমলেই উন্নয়ন হয়েছে রাস্তাঘাটের। উন্নত হয়েছে সড়ক। উন্নত হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। বিপ্লব এসেছিল টেলিকমের ক্ষেত্রে। সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্প তাঁরই (Atal Bihari Vajpayee) অবদান। দেশের চার মেট্রো শহর কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি এবং মুম্বইকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে এক সূত্রে গেঁথেছেন তিনি। এই চার শহর বাদেও দেশের প্রধান প্রধান শিল্প, কৃষি এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোকেও সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়ে এসেছিলেন একই বন্ধনীতে। গ্রামীণ রাস্তার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা চালু করেছিলেন তিনিই। যার ফলশ্রুতি হিসেবে বর্তমানে দেশের রাস্তার দৈর্ঘ সব মিলিয়ে ৬.৪ মিলিয়ন কিলোমিটার। এই পুরো রাস্তার দু’ শতাংশ জাতীয় সড়ক। প্রসঙ্গত, কোনও একটি দেশের উন্নতিতে বড় ভূমিকা পালন করে রাস্তা ও রেললাইন। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে সুগম হয় পরিবহণ। যা অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম একটি কারণ।
আমরা যদি চিনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব অর্থনৈতিক সংস্কার করতে গিয়ে বেজিং প্রথমেই রেল এবং সড়ক উন্নয়নে জোর দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সহায়তায় নয়ের দশকের মাঝামাঝি চিন চালু করে রোডস ইমপ্রুভমেন্ট ফর পোভার্টি অ্যালিভিয়েশন। তারপর থেকে চিন রেল ও সড়কের উন্নতিতে প্রাণপাত করছে। বেজিংয়ের সমৃদ্ধির এটাই হল চাবিকাঠি। তার পর থেকে আজও চিন জোর দিয়ে চলেছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে। বিশ্ব বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ড্রাগনের দেশ হাতে নিয়েছে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প। এবার তাকানো যাক ভারতের (Atal Bihari Vajpayee) দিকে। তথ্য বলছে, ১৯৯৯ সালের পর থেকে এ দেশে তরতরিয়ে বেড়েছে জিডিপি। বলা বাহুল্য, এই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাজপেয়ী। এটা সত্য যে, নরসিমহা রাওয়ের সরকার যে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করেছিলেন নয়ের দশকের মাঝামাঝি, তার পর থেকেই ফিরতে থাকে ভারতীয় অর্থনীতির হাল।
আরও পড়ুুন: পুলওয়ামায় শহিদ জওয়ানের স্ত্রী তাপসীকে ধূপগুড়ি উপ নির্বাচনে প্রার্থী করল বিজেপি
১৯৯৪ সালে ভারতের জিডিপি ছিল ৩৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০২ সালে জিডিপির লেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। তার পরের দু বছরে ভারতের জিডিপি দাঁড়ায় ৫২৩.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তার পরের দু বছরে এর পরিমাণ হয় ৭২১ বিলিয়ন ডলার। তার পর থেকে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলেছে ভারতের জিডিপি গ্রোথ। ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ী যখন ক্ষমতায়, তখন ভারতের জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাহলে দেখা গেল, বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee) যখন দেশের হাল ধরেন, তখনই প্রকৃত দিশা পায় ভারতীয় অর্থনীতি। কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, ভারতের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের উন্নতিও ঘটেছিল বাজপেয়ীর হাত ধরে। পোখরানে পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। যদিও বাজপেয়ীর আমলেই সেই ভাঙা সম্পর্ক ফের জোড়া লেগেছিল।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours