TMC: তৃণমূলের চিকিৎসক নেতার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ! পুলিশের দ্বারস্থ দলেরই দুই নেতা

শাসকদলের নেতাকে ঘুষ দিলে তবেই বদলি? অভিযোগকারী দলেরই সাংসদ ও বিধায়ক!
WhatsApp_Image_2023-05-18_at_1212.13_PM
WhatsApp_Image_2023-05-18_at_1212.13_PM

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

টাকা ছাড়া মেলে না চাকরি! টাকা দিলে তবেই বদলি! ঘুষ ছাড়া চলবে না কিছুই! গোটা রাজ্যের সমস্ত বিভাগই যেন এই ধরনের অভিযোগে ছেয়ে গিয়েছে। তা থেকে বাদ যায়নি স্বাস্থ্য দফতরও। এবার খোদ তৃণমূলের সাংসদ ও তৃণমূলের বিধায়ক, আরেক তৃণমূল নেতার (Trinamool Doctor) বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করলেন। লিখিত অভিযোগ জমা পড়ল স্বয়ং রাজ্যের ডিজি-র কাছে!

কী ওই মারাত্মক অভিযোগ? 

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের রাজ্য শাখার প্যাডে তৃণমূলের সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেন এবং তৃণমূলের বিধায়ক চিকিৎসক নির্মল মাজি লিখিত অভিযোগ করেন, তৃণমূলের আরেক চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস (TMC) অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করছেন। ওই লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, টাকা দিলে তবেই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে বদলি করা হবে। একজন চিকিৎসক তাঁর পছন্দমতো জায়গায় কাজের সুযোগ পেতে পারেন, যদি বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে টাকা দেওয়া হয়। কখনও পাঁচ, আবার কখনও দশ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর সেটাই রাজ্য পুলিশকে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ করেছেন তৃণমূলের এই দুই চিকিৎসক নেতা!

কী বলছেন শান্তনু সেন ও নির্মল মাজি? 

রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে অভিযোগ জানানো প্রসঙ্গে তৃণমূলের সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, "দুর্নীতি (TMC) নিয়ে কোনও আপস করা হবে না। সে দলের যত বড় নেতাই হোক না কেন! কোনও ভাবেই কোনও অনৈতিক কাজ সমর্থন করা হবে না। তাই বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে যখন এক চিকিৎসক অভিযোগ করেন, তখন সেটা আমরাই পুলিশকে জানাই। পুলিশ তদন্ত করে সবটা দেখবে!" সততাই একমাত্র পথ, বলছেন তৃণমূলের আরেক বিধায়ক ও চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজি। তিনি বিরূপাক্ষ প্রসঙ্গে বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন সৎ মানুষ। তাঁর দলের কেউ যদি অসৎ হয়, তাকে বা দলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করে, তাহলে তা একেবারেই সমর্থন করা হবে না। তাই বিরুপাক্ষের বিরুদ্ধে যখন এমন আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ জানতে পারলাম, আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হলাম।"

কে বিরুপাক্ষ বিশ্বাস? কী বলছেন তিনি?

চিকিৎসক বিরুপাক্ষ বিশ্বাস রাজ্যের শাসকদলের চিকিৎসক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন (পিডিএ)-এর নেতা। বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের (TMC) বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নানা সময় দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর সহকর্মীদের একাংশ। এমনকী কয়েক মাস আগে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ অভিযোগ করেছিল, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত হয়েও, অধিকাংশ সময় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে থাকেন। বিভিন্ন জুনিয়র চিকিৎসককে হেনস্থা করেন। এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসক-পড়ুয়াদের মারধরের অভিযোগও ওঠে। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার পর্যন্ত করেছিল।তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা বিরূপাক্ষ বিশ্বাস (TMC) অবশ্য এই অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। " 

কী বলছে চিকিৎসক মহল? 

চিকিৎসক মহল অবশ্য জানাচ্ছে, চিকিৎসক বদলি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের অন্দরে এই অভিযোগ বহু দিনের। এখন তা আরও পরিষ্কার হল। চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের নেতা সজল বিশ্বাস বলেন, বহু চিকিৎসক বছরের পর বছর কলকাতার একটি নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ পান। আর অসংখ্য চিকিৎসক যাঁরা প্রত্যন্ত এলাকায় চাকরি করছেন, বছরের পর বছর কেটে গেলেও তাঁরা বদলির সুযোগ পান না। স্বাস্থ্য ভবনে এ নিয়ে একাধিকবার জানালেও তারা কোনও পদক্ষেপ করে না। আসলে এ রাজ্যে শাসকদলকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে কিছুই হয় না। তাঁর কথায়, "বদলি নিয়ে সরকারি নীতি নয়, শাসক দলের নেতারাই (TMC) চক্র চালাচ্ছেন। একথা আরেকবার স্পষ্ট হয়ে গেল।" সজল বিশ্বাসের সঙ্গে একমত আরেক চিকিৎসক নেতা মানস গুমটা। তিনি বলেন, "টাকা নিয়ে বদলির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একাধিক চিকিৎসক আগেও অভিযোগ করেছেন, বদলির আবেদন করলেই তাঁদের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়। আসলে এ তো দুর্নীতির মৌচাক। যেখানেই ঢিল পড়বে, সেখান থেকেই এই দুর্নীতির খোঁজ পাওয়া যাবে। "

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles