মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দিন দুয়েক আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। সেই ঘটনা ফের প্রশ্নের মুখে ফেলে রাজ্যের প্রসব পরবর্তী চিকিৎসাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ রাজ্যে ৯০ শতাংশ মায়ের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে প্রসব হলেও প্রসব পরবর্তী চিকিৎসা ১০ শতাংশ মায়েরাও পান না। যার জেরে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে মায়েদের স্বাস্থ্য অবহেলিত হয়।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, প্রসব পরবর্তীকালে মায়েদের শারীরিক খেয়াল রাখা বিশেষভাবে জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মায়েদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়। শরীর দুর্বল থাকে। তার সঙ্গে থাকে মানসিক অবসাদ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রসব পরবর্তী কালে মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা হয় না।
পোস্টপার্টোম ডিপ্রেশন (Postpartum Depression) কী?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সন্তান জন্মের পরে নতুন মায়েদের মধ্যে একটা মানসিক চাপ কাজ করে। তারা অনেক সময়েই নতুন ভূমিকায় মানিয়ে নিতে পারেন না। সেই থেকেই তৈরি হয় অবসাদ।
কী কী উপসর্গ রয়েছে?
সন্তান জন্মের পরে মায়ের যদি অকারণে রাগ হয়, বিরক্তি তৈরি হয়, পেশির যন্ত্রণা, অস্থিরতার মতো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলেই বোঝা যাবে এগুলো পোস্টপার্টোম ডিপ্রেশনের উপসর্গ।
স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্যের অধিকাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসবের পরে কোনও রকম যত্ন মায়েরা পান না। অকারণে অস্ত্রোপচার করে প্রসব করানো এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কার্যত কেন্দ্রের সিজার অডিটকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সময় বাঁচাতেই দেদার সিজার হচ্ছে রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে। কোনও রকম নজরদারিও করা হচ্ছে না। যার ফলে, প্রসূতিদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। আর অস্ত্রোপচারের জেরে যে বাড়তি শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে, তার জন্য কোনও রকম বাড়তি যত্ন সরকারি হাসপাতালে নেই। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের রোগী মৃত্যুর ঘটনা। ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রসূতি আত্মহত্যা করেছেন। হাসপাতালের কার্নিশ থেকে ঝাঁপ দিয়েই তার মৃত্যু বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে। আর এখানেই সরকারি হাসপাতালে প্রসব পরবর্তী চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
একজন প্রসূতির পোস্টপার্টোম ডিপ্রেশন হয়েছিল কিনা, সে সম্পর্কে হাসপাতাল একেবারেই অন্ধকারে ছিল? অর্থাৎ, কোনও রকম যত্ন নেওয়া হয়নি। তাছাড়া, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, অস্ত্রোপচার করে সন্তান জন্ম হয়েছিল। সিজারের পরে একজন রোগী কীভাবে একা একা শৌচাগার গিয়েছিলেন? কেন তার সঙ্গে কোনও স্বাস্থ্য কর্মী ছিলেন না? শৌচাগার থেকে তিনি কীভাবে ছাদে উঠলেন? কোনও নিরাপত্তা রক্ষীর কেন চোখে পড়ল না? তাহলে হাসপাতালের নিরাপত্তাও কি নেই?
যদিও এর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে এই প্রশ্ন করলে তাদের উত্তর, "প্রত্যেক প্রসূতির খুঁটিনাটি দেখা সম্ভব নয়। এত রোগীর চাপে সেটা অসম্ভব। তবে, হাসপাতালের কোনও কর্মীর গাফিলতি প্রমাণ হলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম নয়। প্রসব পরবর্তী অবসাদ থেকে এর আগেও আরজিকর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কিংবা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও হুশ ফেরেনি সরকারের। প্রসবের পরে মায়েদের যে যত্নের দরকার, এ যেন চোখ এড়িয়ে যায় সরকারের। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রচার সর্বস্ব হয়ে উঠেছে। সস্তার বিজ্ঞাপন ছাড়া, রোগী পরিষেবা নিয়ে প্রশাসন ভাবতে আগ্রহী নয়। আর তাই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসব যথেষ্ট নয়। সর্বাঙ্গীন পরিষেবার দিকে নজরদারি প্রয়োজন, যা এই রাজ্যে অনুপস্থিত।
+ There are no comments
Add yours