মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: যেকোনও পুজোতে ঘট অপরিহার্য। ঘট ছাড়া কোনো পুজো হয় না। ঘট বিসর্জন হলেই দেবতার বিসর্জন হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হয়। ঘট এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন? সমস্ত ধরনের পুজো, যে দেবতার উদ্দেশ্যে পুজো, সবটাই ধারণ করে থাকে ঘট। বলা হয় ঘটই হলো আমাদের দেহের প্রতিরূপ। দেহকে তাই দেহ ঘট বলা হয়ে থাকে। ঘটের বিভিন্ন অংশের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের আগে , জেনে নেওয়া যাক ঘট এর প্রথম ব্যবহার সম্পর্কে প্রচলিত এক পৌরাণিক গল্প। সমুদ্র মন্থনের কথা কমবেশি সকলেই জানি আমরা। ক্ষীরসাগরে সমুদ্রমন্থনের প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল৷ এক্ষেত্রে মন্দর পর্বত মন্থনদণ্ড হিসাবে এবং নাগরাজ বাসুকী মন্থনের দড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল৷ মণি, মাণিক্য, রত্ন সবকিছুর সাথে উঠেছিল তীব্র বিষ। যাকে হলাহল বলা হয়ে থাকে। এই বিষ কে রাখার জন্য একটি বড় ঘটের আকৃতির পাত্র তৈরী করেছিলেন বিশ্বকর্মা । সেই থেকেই নাকি ঘটের প্রচলন শুরু। এবার ঘটের বিশ্লেষণ করা যাক।
পঞ্চগুড়ির দ্বারা ঘটের পিঠ তৈরি করা হয়। এই পঞ্চগুড়ির অর্থ হল ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম-এর প্রতীক । এককথায় পঞ্চ মহাভূত। মৃত্তিকা পিঠের উপরে দেওয়া হয় পঞ্চশষ্য । এগুলি হলো, মানুষের পাঁচটা বৃত্তি- কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও মৎসর্য্য এর প্রতীক। ঘটের ভেতরে দেওয়া হয় পঞ্চরত্ন। এগুলি চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক ও জিহ্বা এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের প্রতীক। এর উপরে ঘটটি স্থাপন করা হয়।
প্রথমেই বলা হয়েছে, ঘট কে দেহের প্রতিরূপ মানা হয়, তাই দেহ গঠনে যা যা উপাদানের প্রয়োজন হয় সবটাই ঘট' এ রাখতে হয় প্রতীক হিসেবে। ঘটকে জল পূর্ণ করে রাখতে হয়। জল হলো এখানে দেহরস বা রক্তের প্রতিরূপ।
আমাদের নজর নিশ্চয়ই এড়িয়ে যায়না যখন ঘটের উপর আমরা পঞ্চপত্র বা পাঁচটি পাতা দেখতে পাই। এই পাতা হলো মানবদেহের গ্রীবার প্রতীক।
ঘটের শীর্ষে থাকে নারকেল। অনেকে লক্ষ্য করে থাকবেন মানবদেহের মুখের আকৃতির মতো হয় নারকেল। নারকেলেও চোখ নাকের আকৃতি থাকে। ঘটের শীর্ষে নারকেল দেওয়া হয় " মুখমন্ডল " এর প্রতীক হিসেবে। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা মনে করেন ঘটে স্বয়ং দেব দেবীরা অবস্থান করেন। প্রতিমার প্রতীক হিসেবে ঘট পুজো করা হয়। সাকার রূপে থাকে দেবদেবীর প্রতিমা এবং নিরাকার রূপে থাকে ঘট। অনেক বাড়িতেই প্রতিমা ছাড়া দুর্গাপুজো বা যেকোনও পুজো হয় শুধুমাত্র ঘট স্থাপনের দ্বারা।
এবার জেনে নেওয়া যাক ঘট স্থাপনের রীতি বা আচারগুলো -
ঘট স্থাপনে দরকার হয় মাটি, গঙ্গা মাটি হলে ভালো হয় বলে মনে করেন হিন্দু পন্ডিতরা। গঙ্গা মাটি না পেলে, পবিত্র কোন পুকুরের মাটি লাগে।
ঘটের মধ্যে দেওয়ার জন্য দরকার পঞ্চপাতা। পাতা গুলি যেন একত্রে পাঁচটি বা সাতটি থাকে।
পন্ডিতদের মতে তেল ঘি এবং সিঁদুরের গুঁড়ো একত্রে মিশিয়ে দেওয়ার পরে সেই মিশ্রণের ফোঁটা লাগিয়ে দিতে হয় প্রত্যেক পাতায়। ডাবের উপর স্বস্তিক চিহ্ন আঁকতে হয়। ডাবের উপরে রাখতে হয় একটি নতুন গামছা।
চারদিকে চারটি তীর কাঠি পুঁতে কাঠি গুলিতে বাঁধতে হয় লাল ধাগা।
+ There are no comments
Add yours