মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আবার একটা গোটা বছরের অপেক্ষা। সকাল সকাল তাই একটা ক্ষণও বৃথা যেতে দিইনা আমরা। স্নান সেরে এক্কেবারে মন্ডপে, বাড়ির পুজো হলে তো আবেগ আর একটু বেশী থাকে। সিঁদুর খেলা, মন্ত্রপাঠ , ঘট বিসর্জনের সাথেই আর একটি রীতি নিশ্চয়ই আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। ছোট্ট অনুষ্ঠানটি হলো অপরাজিতা গাছের পুজো। পুজো শেষে অপরাজিতা লতা হাতে জড়িয়ে নিই আমরা। জানেন কি বিজয়া দশমীতে এই অপরাজিতা গাছের পুজো কেন হয়? কেনই বা অপরাজিতা লতা আমরা ধাগা হিসেবে বাঁধি নিজেদের হাতে। বিজয়লাভের সঙ্কল্প বা প্রতিজ্ঞা নিয়ে হয় অপরাজিতা পুজো। জনশ্রুতি হলো ,আগেকার দিনে নবরাত্রির পরই রাজারা যুদ্ধযাত্রা করতেন। দিনটা হত বিজয়া দশমী। যুদ্ধের জন্য এই সময়টাকেই বেছে নিতেন রাজারা। তার অবশ্য কিছু কারণ ছিল। আচার্য চাণক্য বা কৌটিল্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’তে লিখেছেন এই সময়টাই যুদ্ধযাত্রার শ্রেষ্ঠ সময়। পণ্ডিত রঘুনন্দন তাঁর ‘তিথিতত্ত্ব’ গ্রন্থেও একই কথা বলেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজা যদি দশমী তিথির পর যুদ্ধ যাত্রার সূচনা করেন, তাহলে তার পরাজয় কখনো হয় না। তাই যুদ্ধে অপরাজেয় থাকতে এদিন যাত্রা করতেন রাজারা। বিজয়কে বরণ বা আলিঙ্গনের প্রত্যাশা নিয়েই করা হত অপরাজিতা পুজো। যে ধারা আজও প্রবহমান।
সাদা অপরাজিতা গাছকে বিজয়া দশমীর পুণ্য তিথিতে পুজো করা হয়। গাছটিকে দেবীরূপে কল্পনা হয় , ঠিক যেমনটা মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকাকে স্নান করানোর সময় কল্পনা করা হয়ে থাকে। নবপত্রিকা যেমন নব দুর্গার প্রতীক, মা দুর্গার বৃক্ষরূপ ভেবে পুজো করা হয় একই ভাবে অপরাজিতা গাছ কে দেবীর বিজয়ের প্রতীক মেনে পুজো করা হয়। অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়ের প্রতীক, আসুরিক সমস্ত শক্তিকে বিনাশের প্রতীক। ফুল, বেলপাতা দিয়ে পুজো হয় অপরাজিতা গাছের। অনেকে আবার ঘটস্থাপন করেও পুজো করেন। পুজোর ফল লাভের জন্য হাতে অপরাজিতা লতা বাঁধার রীতির কথা তো আগেই বলা হয়েছে। পুজোর সময় দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানানো হয়, ‘‘হে অপরাজিতা দেবী, তুমি সর্বদা আমার বিজয় যাত্রা কে অক্ষুণ্ন রাখো। শত্রু পক্ষকে বিনাশ করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি ও ক্ষমতা আমাকে প্রদান করো। অশুভ সমস্ত শক্তি যেন পরাভূত হয় আমার কাছে। আমাকে তুমি অপ্রতিরোধ্য করে তোলো। আমার সমস্ত আত্মীয়, পরিবার, পরিজন , মিত্রদের মঙ্গল করো । শত্রু পক্ষকে ধ্বংস করে বিজয় লাভের জন্য আমি তোমাকে দক্ষিণ হাতে ধারণ করছি। তুমি শত্রু নাশ করে নানা সমৃদ্ধির সাথে আমাকে বিজয় দান কর। আমার জীবন যেন সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, সমৃদ্ধি তে পরিপূর্ণ হয়। রামচন্দ্র যেমন অত্যাচারী রাবণের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন, আমিও যেন সেইরূপ জয় লাভ করতে পারি"। এমনিতেই দশমী তিথির মাহাত্ম্য অনেক বেশী। এই তিথিতেই রাবণ বধ, আবার এই তিথিতেই মহিষাসুর বধ, মহাভারতে এই তিথিতেই পান্ডবরা অজ্ঞাত বাস শেষে শমী বৃক্ষের কোটর থেকে তাঁদের লুকিয়ে রেখে যাওয়া অস্ত্র বের করেন। দশমীতে অস্ত্রপূজনও হয় তাই। আবার এই তিথিতেই কুবের অযোধ্যায় স্বর্ণবৃষ্টি করেছিলেন বলেই পৌরাণিক মত রয়েছে। বিজয়, সমৃদ্ধির এই পুণ্য তিথিতে মাতৃ আরাধনা করেই যুদ্ধ যাত্রার রীতি ছিল প্রাচীন ভারতীয় রাজাদের মধ্যে।
+ There are no comments
Add yours