২০২২ সালে এসে কোন কোন বিদেশি ভাষা শিখলে আমাদের ভালো কেরিয়ার তৈরি হবে
বিদেশি ভাষা শেখার সব হদিশ
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিদেশি ভাষা শিক্ষার (Foreign Language Courses) চাহিদা ভারতে বরাবরই রয়েছে। বৃহৎ এই পৃথিবীতে অঞ্চল, দেশ এবং সংস্কৃতি ভেদে ভাষার অভাব নেই। কিন্তু আমাদের মনে প্রশ্ন থেকেই যায় কোন কোন বিদেশি ভাষা (Foreign Language Courses) আয়ত্ত করতে পারলে ভালো বেতনের কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে। ২০২২ সালে এসে কোন কোন বিদেশি ভাষা শিখলে আমাদের ভালো কেরিয়ার তৈরি হবে। মনে রাখতে হবে বিদেশি ভাষার উপর দখল থাকলে বিদেশে কাজ পাওয়াও সহজ হবে।
আমরা এবার সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নিই কিছু বিদেশি ভাষার কোর্স (Foreign Language Courses) সম্পর্কে, যাতে একটি গাইডলাইন তৈরি হয়, আগ্রহী দের জন্য।
এ বিশ্বের সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষ কথা বলে এই পাঁচটি ভাষায় English, Mandarin Chinese, Spanish, Arabic, French. ইংরাজি ভারতে বহু পঠিত ভাষা, সেজন্য আমরা এখানে ইংরাজি ছাড়া অন্য ভাষাগুলির বিষয়ে আলোকপাত করলাম।
German এবং Japanese এই দুটি ভাষাও ভারতে খুব জনপ্রিয়। এর কারণ হলো জাপান এবং জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই উন্নত। ফলে এখানে বিভিন্ন বিষয়ে কেরিয়ার তৈরি করতে এই দুটি ভাষা শিখতেই হয়। বিগত কয়েক বছরে আরও কতগুলি ভাষার চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে ভারতবর্ষে, সেগুলি হল Portuguese, Italian, Korean এবং Russian.
আমাদের দেশে যে দশটি বিদেশি ভাষা (Foreign Language Courses) শেখার উপর আগ্রহ সবথেকে বেশি রয়েছে, সেগুলি এক নজরে দেখে নেব।
ভারতে যে সমস্ত বিদেশি ভাষা (Foreign Language Courses) শেখার উপর চাহিদা রয়েছে, তাদের মধ্যে ফরাসি সবথেকে জনপ্রিয়। ভারতবর্ষের দিল্লি এবং অন্যান্য রাজ্যে এক লাখের উপর ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা ফরাসি ভাষা আয়ত্ত করার কাজে লেগে রয়েছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। বিদেশি ভাষার (Foreign Language Courses) মধ্যে এটি অন্যতম যে ভাষাটি জানলে কর্পোরেট দুনিয়ার চাকরিতে সহজেই প্রবেশ করা যায়। অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজের ভাষা হিসেবে ফরাসি ব্যবহার করা হয়। ফ্যাশান, শিক্ষা, ডিজাইন, ব্যাঙ্কিং, ফাইন্যান্স, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, ট্রাভেলিং, রিটেইলিং, লাক্সারি গুডস ইত্যাদি সেক্টরে এই ভাষার প্রচলন রয়েছে। অর্থাৎ কিছু সেক্টরে কাজ করার জন্য এই ভাষা শেখা অপরিহার্য। এই পৃথিবীতে ৩০টিরও বেশি দেশের মানুষ ফরাসি ভাষায় কথা বলেন। এই ভাষার প্রচলন পাঁচটি মহাদেশে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী যে সমস্ত ভাষা শেখার উপর মানুষের আগ্রহ সবথেকে বেশি রয়েছে, তাদের মধ্যে ফরাসি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
ফরাসি এবং স্প্যানিশ ভাষার মতোই জার্মান ভাষাতেও অসংখ্য মানুষ বিশ্বব্যাপী কথা বলেন এবং এই ভাষা শিখলে কাজের সুবিধা রয়েছে, এমন ক্ষেত্র নেহাত কম নয়। ফরাসির পরে এটি হল দ্বিতীয় ভাষা যেটা শিখতে ভারতীয়দের আগ্রহ তুঙ্গে থাকে। এই ভাষার প্রতি আগ্রহ থাকার কারণ গুলি নিচে ব্যাখ্যা করা হল
i) ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষের মাতৃভাষা হলো জার্মান। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ডের অফিসিয়াল ভাষা হল জার্মান।
ii) অর্থনৈতিকভাবে জার্মানি দেশ হল খুব উন্নত। তাই জার্মান ভাষা শেখার আগ্রহ মানুষের বেশি থাকে। কারণ এই ভাষা শিখলে Volkswagen, BASF, Daimler, BMW, Bosch, Siemens প্রভৃতি কোম্পানিতে কাজ খুঁজে নেওয়া সহজ হয়। বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোবাইল প্রভৃতি ক্ষেত্রেও জার্মান ভাষার প্রচলন রয়েছে।
iii) পাঁচশোর অধিক ভারতীয় স্কুল এবং কলেজে এবং আড়াইশোর বেশি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে জার্মান ভাষা পোড়ানো হয়।
iv) ১৯৫৭ তে জার্মানি সরকার জার্মান ভাষা শিক্ষা প্রসারের জন্য কলকাতাতে ম্যাক্স মুলার ভবন তৈরি করে।
v) বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সেরার তালিকায় থাকে। তাই এই ভাষা শিখলে কদর অনেক বেড়ে যায়। জার্মানি বা অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা লাভের পরিকল্পনা থাকলে এই ভাষা শিখতে আর দেরি করা উচিত নয়।
সারা বিশ্বব্যাপী কুড়িটি এমন দেশ রয়েছে, যেখানে স্প্যানিশ ভাষায় (Foreign Language Courses) কথা বলা হয়। বিশ্বব্যাপী স্প্যানিশ ভাষার চাহিদা ব্যাপক রয়েছে। ফ্রেঞ্চ এবং জার্মান ভাষার পরে এটি হল তৃতীয় ভাষা, যেটি শেখার আগ্রহ মানুষের যথেষ্ট থাকে। ট্রাভেল, ট্যুরিজম, জার্নালিজম ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহৃত হয়। লিখিত এবং কথ্য স্প্যানিশ ভাষা যেকোনো ব্যক্তির কেরিয়ার তৈরিতে সম্পদ। বিপিওতে চাকরি, ভাষা শিক্ষক ইত্যাদি পেশাতেও কেরিয়ার তৈরি করা যায় এই ভাষা (Foreign Language Courses) জানা থাকলে। দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার সাথে ভারতবর্ষের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্প্যানিশ মিউজিক, স্প্যানিশ ফুটবল লিগ এর অসম্ভব জনপ্রিয়তা রয়েছে পৃথিবীব্যাপী এবং ভারতবর্ষ তার বাইরে নয়। তাই স্প্যানিশ ভাষা এত গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত জাপানের উন্নত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নত দেশ হিসেবে জাপান পরিচিত। যদি ভাবেন কোন ভাষা শিখলে, সবথেকে বেশি বেতনের চাকরি পাবেন, তবে সেটা নিঃসন্দেহে জাপানি ভাষা। জাপানি ভাষার (Foreign Language Courses) উপর দখল একটি ভালো কেরিয়ার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
পৃথিবীব্যাপী কয়েক কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। পৃথিবীর অর্থনৈতিক মানচিত্রে চীন দেশের স্থান অত্যন্ত লক্ষণীয়। বিভিন্ন চাইনিজ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো বেতনের চাকরি পেতে এই ভাষা (Foreign Language Courses) কাজে লাগে। বর্তমান ভারতে চাইনিজ দোভাষী কাজের খুবই চাহিদা রয়েছে।
রাশিয়ান ভাষা (Foreign Language Courses) শেখার আগ্রহ ভারতবর্ষে খুব বেশি। সারা পৃথিবীতে ৩০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। ভারত এবং রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বর্তমান। রাশিয়ান ভাষা শেখা থাকলে ইঞ্জিনিয়ারিং, তেল এবং গ্যাস তথা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রতে ভালো কাজের সুযোগ রয়েছে। রাশিয়ান ভাষা শেখা থাকলে, রাশিয়ান সাহিত্য ক্ষেত্রতেও কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। একটা সময় ছিল, যখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ান ভাষা (Foreign Language Courses) শেখানো হতো। রাশিয়ান সরকার বর্তমানে তাদের ভাষার প্রসারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
পর্তুগিজ ভাষার (Foreign Language Courses) ওপর দখল রয়েছে যাঁদের, তাঁদের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে ফাইন্যান্স, ট্রাভেলিং, টেকনোলজি, আইটি, এডুকেশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে। ভারতের দিল্লি এবং গোয়াতে এই ভাষা এখনও অনেকটা জনপ্রিয় রয়েছে। পৃথিবীর যে আটটি দেশে পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলা হয় তার মধ্যে ব্রাজিল এবং পর্তুগালের সাথে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন উন্নত হচ্ছে। বাণিজ্যিক সমেত অন্যান্য বিষয়েও সম্পর্ক স্থাপন হচ্ছে। তাই পর্তুগিজ ভাষা জানা থাকলে বিদেশে কাজ পাওয়া সম্ভব।
বিদেশী ভাষা শিখতে যাদের আগ্রহ রয়েছে তাঁদের জন্য ইতালিয়ান ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাষার উপর দখল থাকলে Banco, Fiat, Benetton, Gucci, Lloyd, Ferrari, Marconi, Pinnacle প্রভৃতি কোম্পানিতে কাজ পাওয়ার সহজ হয়। কারণ এই সমস্ত কর্তৃপক্ষ ইতালিয়ান ভাষা যাঁরা জানে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। অন্যান্য ভাষার থেকে তুলনামূলকভাবে অনেকটা সহজ হয় ইতালিয়ান ভাষা শেখা।
তেল সম্পদে পরিপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হল আরব দেশ। এদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ কর্মসূত্রে আরব দেশ গুলিতে যান। কাতার, ওমান, কুয়েত প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থায় কাজ করতে চাইলে আরবি ভাষা শেখা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত দেশগুলিতে বেতন প্যাকেজ খুবই ভালো।
উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে অফিসিয়াল ভাষা হল কোরিয়ান। দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিকভাবে খুবই উন্নত। Hyundai, Posco, Lotte, Samsung, LG, Kia ইত্যাদি কোম্পানিগুলি আমাদের খুবই পরিচিত। এগুলো আন্তর্জাতিক কোরিয়ান কোম্পানি। কোরিয়ান নাটক, কোরিয়ান গান, কোরিয়ান পপ এগুলোর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই কোরিয়ান ভাষা জানা থাকলে ভালো কেরিয়ার তৈরি করা সম্ভব।