মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারতের তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির ডাকে ভারতে এসেছিলেন পাক সাংবাদিক নুসরত মির্জা। সংগ্রহ করেছিলেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে সেই তথ্য তুলে দিয়েছেন সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআইকে। খোদ পাক সাংবাদিকের এই বিস্ফোরক মন্তব্যে তোলপাড় গোটা দেশ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি। তবে হামিদ যে মিথ্যে বলছেন, তা দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবনীকার আদিস সি আগরওয়াল।
ট্যুইটবার্তায় আদিস বলেন, জঙ্গিবাদের ওপর এক আলোচনাসভায় হামিদ ওই পাক সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ওই আলোচনা সভায় যে হামিদ গিয়েছিলেন, তা স্বীকার করেছেন জাতীয় কংগ্রেসের সচিব জয়রাম রমেশ। তবে নুসরতকে যে হামিদই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তা অস্বীকার করেছেন তিনি। অথচ নুসরত মির্জাকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন হামিদ আনসারি। জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতেই এখন তিনি অভিযোগ অস্বীকার করছেন। হামিদ যে মিথ্যে বলছেন, নানা তথ্য দিয়ে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনেল কাউন্সিল অফ জুরিস্টের সভাপতি আদিস। তিনি আবার অল ইন্ডিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানও। আদিস জানান, তথ্যের ভিত্তিতে তিনি সত্য উদ্ঘাটন করতে চান।
আরও পড়ুন : প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি পাক চরকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন! বিস্ফোরক দাবি
আদিস বলেন, ২০১০ সালের ১১ ও ১২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ জুরিস্টস অন ইন্টারন্যাশনাল টেররিজম অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস। নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে হয়েছিল ওই আলোচনা সভা। সভায় ছিলেন হামিদ। যদিও নুসরত ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন না। ছিলেন না অনুষ্ঠানেও। এমনকী, এই অনুষ্ঠানের উল্লেখ পরবর্তীকালে কেরননি মির্জা।
আদিস বলেন, আমি ওই আলোচনাসভার আহ্বায়ক ছিলাম। যখন আলোচনাসভা আয়োজিত হচ্ছিল, তখন উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল হামিদ আনসারিকে। হামিদের সচিবালয় থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আদিস আরও বলেন, উপরাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের তৎকালীন ডিরেক্টর ছিলেন অশোক দেওয়ান। তিনি আমাকে জানান নুসরতকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন উপরাষ্ট্রপতি স্বয়ং। যাই হোক, আমরা উপরাষ্ট্রপতির সেই অনুরোধ রাখতে পারিনি। কারণ ওই অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের কোনও মিডিয়া কিংবা বিচারক এবং আইনজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
আদিস বলেন, এরপর যখন দেওয়ান বিষয়টি জানতে পারলেন, তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেটি ছিল সভার আগের দিন। দেওয়ান আমাকে জানান, মির্জাকে আমন্ত্রণ না পাঠানোয় উপরাষ্ট্রপতি খুশি হননি, অপমানিত বোধ করেছেন। আগে তিনি ঘণ্টাখানেক সভায় থাকবেন বললেও, এখন তিনি জানিয়েছেন, কুড়ি মিনিট থাকবেন।
আরও পড়ুন :কে হবেন উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী? শনিবার বৈঠকে বিজেপি
আদিস বলেন, অনুষ্ঠানের দিন ঘড়ির কাঁটায় কুড়ি মিনিট হতেই সভাস্থল ছাড়েন হামিদ। যদিও কংগ্রেসের কিছু নেতা এনিয়ে সত্য গোপন করতে চাইছেন। তাঁরা এটা প্রমাণ করতে চাইছেন আমি প্রধানমন্ত্রীর সহ জীবনীকার বলেই এসব বলছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা বলছেন, মোদি ভক্ত হওয়ায় আদিস এসব বলছেন। ওঁদের দাবি, আসলে আমিই না কি নুসরতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। এখন দায় চাপাচ্ছি হামিদের ওপর।
আদিসের মতে, সত্য ধামাচাপা দিতেই এসব করা হচ্ছে। নিজেকে বাঁচাতেই এসব বর্ম ব্যবহার করছেন হামিদ। আদিস বলেন, আসল ঘটনা হল আমি যে আলোচনাসভার আয়োজন করেছিলাম, তাতে হামিদ এবং মির্জা একসঙ্গে ছিলেন না। কিন্তু, এই দুজন যে কনফারেন্সে একসঙ্গে ছিলেন, তা ছিল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স এগেইনস্ট টেররিজম।
আদিস জানান, এই সভার আয়োজক ছিল জামা মসজিদ ইউনাইটেড ফোরাম। আলোচনা সভা হয়েছিল নয়াদিল্লির ওবেরয় হোটেলে। হামিদের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত ছিলেন জামা মসজিদের শাহি ইমাম আহমেদ বুখারি, ফারুক আবদুল্লা সহ বেশ কয়েকজন মুসলিম নেতা। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে, হামিদ এবং রমেশ সত্য গোপন করতে চাইছেন। আনসারিকে ক্লিনচিট দিতেই এটা করা হয়েছে। তাঁরা ইচ্ছে করেই জুরিস্ট কনফারেন্সের নাম নিচ্ছেন।
আদিস জানান, ওই অনুষ্ঠানে মঞ্চ শেয়ার করেছিলেন হামিদ ও নুসরত। ওই অনুষ্ঠান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সবাই ছিলেন। তা থেকে স্পষ্ট মঞ্চে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অনুমোদন করেছিলেন হামিদ। এ থেকেও প্রমাণ হয় এক মঞ্চে ছিলেন হামিদ এবং মির্জা। তাই নুসরত যা বলছেন, তা ঠিকই বলছেন।
+ There are no comments
Add yours