শিশুদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে ডায়াবেটিস! কী বলছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর রিপোর্ট?
প্রতীকী ছবি।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শপিং মল হোক কিংবা পাড়ার দোকান, সর্বত্র রঙিন কাগজে জড়িয়ে থাকে নানান চকোলেট, ক্যান্ডি। প্যাকেটবন্দি থাকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থেকে চিকেন নাগেটের মতো সুস্বাদু খাবার। চটজলদি এই সব খাবারেই মজে থাকছে শৈশবের স্বাদ। আর তাতেই বাড়ছে বিপদ! শিশুকালে থাবা বসাচ্ছে ডায়াবেটিস (Diabetes)। যা আরও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বলেই আশঙ্কা করছে চিকিৎসক মহল। ১৪ নভেম্বর ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে চিকিৎসকেরা তাই একাধিক সচেতনতা কর্মশালায় জানিয়েছেন, ১৪ বছরের কম বয়সীদের জন্য ডায়াবেটিস নিয়ে সর্তক না হলে, ভবিষ্যৎ ভয়ানক হতে পারে।
কী বলছে পরিসংখ্যান? (Diabetes)
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার মধ্যে প্রায় ১ লাখ শিশু শুধু টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়। তবে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ শিশুদের মধ্যে বাড়ছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বছর পনেরো আগেও শিশুদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস দেখা যেত না। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের এই রোগ হত। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের (Diabetes) প্রকোপ বাড়ছে। যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, জীবনযাপনে অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের জেরেই এই রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে।
কোন অভ্যাস ডায়াবেটিসের বিপদ বাড়াচ্ছে?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ শিশুই চটজলদি খাবারে অভ্যস্থ হয়ে উঠছে। রুটি, তরকারি, ভাত, ডাল, মাছের ঝোলের পরিবর্তে তাদের জন্য থাকছে প্যাকেটজাত স্যান্ডউইচ, পিৎজা, বার্গারের মতো খাবার। নাগেট, স্ট্রিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো খাবার অধিকাংশ শিশু খাচ্ছে। যার পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে। বরং রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে অতিরিক্ত তেলে ভাজা এই ধরনের খাবার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রায় গোলমাল করছে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
তাছাড়া, অধিকাংশ শিশু মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। তারা নানা রকম ক্যান্ডি, কেক, চকোলেট খায়। অনেক ক্ষেত্রেই এই খাওয়ার সময়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরিমাণেও যথেচ্ছ হয়। ফলে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
এছাড়াও, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ শিশুর মাঠে খেলার সুযোগ কম। ব্যস্ত জীবন যাপনের জেরে শৈশবকাল মোবাইল আর ল্যাপটপের স্ক্রিনে কাটছে। আর এর জেরেই স্থূলতার সমস্যা দেখা দিচ্ছি। যা ডায়াবেটিসের (Diabetes) ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এক ধরনের এনার্জি ঘাটতির সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর এই এনার্জি ঘাটতির জেরে শিশুদের খেলা হোক কিংবা পড়াশোনায় প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিসে (Diabetes) আক্রান্ত শিশুদের মনোনিবেশের ক্ষেত্রেও এক ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই পড়াশোনায় অনেক সময়েই ঘাটতি দেখা দিতে পারে। মনে রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কম বয়স থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে স্মৃতি শক্তিতে প্রভাব ফেলে। তাই শিশুরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সেই সমস্যাও দেখা দেয়। তাছাড়া, যে কোনও খেলায় প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত পরিশ্রম একাধিক শারীরিক জটিলতা তৈরি করে। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে সব ধরনের খেলা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সতর্ক না থাকলে শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়বে। আর তার জেরেই তাদের ভবিষ্যতে একাধিক সমস্যাও দেখা দেবে বলেই আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক মহল।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।