Breast Cancer: টিউমারের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হবে ১৮ দিনে, স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে নতুন অস্ত্রের খোঁজ বাঙালি বিজ্ঞানীর
কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের গবেষক কুলদীপ জানা। ক্যান্সারের ওষুধ নিয়ে গবেষণায় আইআইটি গুয়াহাটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক দেবপ্রতিম দাস ও তাঁরই দুই ছাত্রী তনুশ্রী দাস ও ঋত্বিকা কুশওয়াহা। সংগৃহীত চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্তন ক্যান্সারের (Breast Cancer Treatment) চিকিৎসায় ‘সুপ্রামলিকিউলার হাইড্রোজেল থেরাপি’ নিয়ে নতুন রকম গবেষণার পথে আইআইটি গুয়াহাটি ও কলকাতার বোস ইনস্টিটিউট। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনের ‘রয়াল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি’-র বিজ্ঞান পত্রিকা ‘মেটেরিয়াল্স হরাইজনস’-এ। গবেষণাটি দু’টি ভাগে হচ্ছে। ‘হাইড্রোজেল’ তৈরি করা এবং সেটির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণায় রয়েছেন আইআইটি গুয়াহাটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক দেবপ্রতিম দাস ও তাঁরই দুই ছাত্রী তনুশ্রী দাস ও ঋত্বিকা কুশওয়াহা। অন্যদিকে, ‘হাইড্রোজেল’ পদ্ধতিটির বাস্তব প্রয়োগ করে কী ফল পাওয়া যাচ্ছে, সে নিয়ে পরীক্ষা করছেন কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের গবেষক কুলদীপ জানা ও তাঁর ছাত্র সত্যজিৎ হালদার এবং অনুপকুমার মিশ্র।
স্তন ক্যান্সারের (Breast Cancer Treatment) দুই রকম চিকিৎসা পদ্ধতি আছে— অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপি। অস্ত্রোপচার করলেই যে ক্যান্সার কোষ নির্মূল হবে, তা নয়। এর পরেও কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপি দিতে হয়, যা যথেষ্টই যন্ত্রণাদায়ক ও খরচসাপেক্ষও। বস্তুত শরীরে বিষ প্রয়োগ করেই বিষক্ষয়ের চেষ্টা হয়। এতে যেমন শরীরের উপর অত্যাচার হয়, তেমনই মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েন রোগী। কাজেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেবল শরীরে নয়, মনেও হয়। নয়া গবেষণা প্রসঙ্গে আইআইটি গুয়াহাটির অধ্যাপক দেবপ্রতিম দাস বলেন, “ক্যান্সারের চিকিৎসায় সুপ্রামলিউকিউলার জেল নিয়ে গবেষণা করে আমরা যা ফল পেয়েছি, তা আগে কখনও হয়নি বলেই আমার ধারণা। পলিমার জেল নানা রকম গবেষণার কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু ক্যান্সার সংক্রান্ত গবেষণায় এর প্রয়োগ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া গিয়েছে।”
আর পাঁচটি জেলের মতো নয়। এক ধরনের ত্রিমাত্রিক পলিমার, যা ছোট ছোট পেপটাইড দিয়ে তৈরি। প্রোটিনের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ হল পেপটাইড। সেই পেপটাইড দিয়েই তৈরি হয়েছে হাইড্রোজেল। এর মধ্যে জলীয় ভাবই বেশি। সহজ করে বললে থকথকে জেলির মতো। এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। বোস ইনস্টিটিউটের গবেষক কুলদীপ জানা বলেন, “হাইড্রোজেল খুব নরম বস্তু, তরলও নয় আবার শক্তও নয়। এর ভিতরে পলিমারের নেটওয়ার্ক আছে। জেলের ভিতর ওষুধ ভরে দিলে ওই নেটওয়ার্কের জালিতে গিয়ে ওষুধটি সেঁটে যাবে। শক্ত করে আটকে বসবে, বাইরে বেরোবে না। এ বার জেলিটা শরীরে ইনজেক্ট করলে সেটি ওষুধটিকে নিয়ে সোজা চলে যাবে ক্যান্সার কোষের কাছে। সেখানে গিয়ে ফেটে যাবে এবং ওষুধটি ছিটকে বার করে একেবারে টিউমারের উপর ফেলবে।”
গবেষণাগারে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে সুপ্রামলিকিউলার হাইড্রোজেল। এটি যত ক্ষণ বাইরে রাখা হবে, তত ক্ষণ জেলির মতো জমে থাকবে। সিরিঞ্জে ভরার পরেই সেটি তরল হবে এবং সহজে ইনজেক্ট করা যাবে। আবার সুচের ডগা দিয়ে বেরোনো মাত্রই ফের জমে গিয়ে জেলি হয়ে যাবে। এই জেলি এমন এক আধার, যা তার পেটের ভিতর ওষুধ পুরে নিয়ে দৌড়বে ক্যান্সার কোষের দিকে। সরাসরি আঘাত করে ধ্বংস করবে টিউমার কোষকে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ক্যান্সার কোষ একটি সঙ্কেত ছাড়ে, যেটি বুঝতে পারবে হাইড্রোজেল। সেই সঙ্কেতটির নাম হল ‘গ্লুটাথায়োন’। এক রকম ট্রাইপেপটাইড, যা শরীরেই তৈরি হয়। ক্যান্সার কোষে এর মাত্রা খুব বেড়ে যায়। হাইড্রোজেল দেখবে যে কোষে গ্লুটাথায়োনের মাত্রা অস্বাভাবিক রকম বেশি, সেখানে গিয়েই সেটি ফেটে যাবে আর ওষুধও বেরিয়ে আসবে ভিতর থেকে।
হাইড্রোজেলটি কী ভাবে কাজ করছে, সে গবেষণা করছেন কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের গবেষক কুলদীপ জানা। তিনি বললেন, “ইঁদুরের উপর পরীক্ষা হয়েছে। ওষুধটির একটিমাত্র ডোজ ইনজেক্ট করে দেখা গিয়েছে, ১৮ দিনের মাথায় টিউমার কোষের ৭৫ শতাংশ নির্মূল হয়েছে। ইনভিট্রো সেল কালচার মডেলে পরীক্ষাটি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সাফল্যের মুখ দেখেছি আমরা। এর পরে মানুষের উপর পরীক্ষাও হবে।”
আরও পড়ুন: ঝঞ্ঝায় দক্ষিণে বাড়তে পারে পারদ, বৃষ্টি-বরফের সম্ভাবনা উত্তরে, পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের
হাইড্রোজেল থেরাপি নিয়ে গবেষণা ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয়। এখনও গবেষণাটি চলছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, আরও অনেকগুলি স্তরেই গবেষণা হবে। হাইড্রোজেলের ‘পেটেন্ট’ পাওয়া গিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার কাছে তা পাঠানোও হয়েছে। আইআইটি গুয়াহাটি ও বোস ইনস্টিটিউটের অনুমতিসাপেক্ষে বাণিজ্যিক ভাবে তাঁরা এই নিয়ে কাজও করতে পারেন। এর পরের ধাপ হল মানুষের শরীরে পরীক্ষা করে দেখা। তার জন্য নানা জায়গায় আবেদন করতে হয়। সে কাজ চলছে। যদিও তা সময়সাপেক্ষ, তবুও আশাবাদী গবেষকেরা। আগামী দিনে ক্যান্সারের ওষুধটি সাধারণের নাগালে এলে, তা কম খরচে বহু জনের প্রাণ বাঁচাতে পারে বলে বিশ্বাস গবেষকদের।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।