Pratima-darshan: ঠাকুর দেখার জন্য রাতের পর রাত জাগছেন! কী বাড়তি বিপদ তৈরি করে রাত-জাগার অভ্যাস?
রাত জেগে প্রতিমা-দর্শন একেবারেই অস্বাস্থ্যকর বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সংগৃহীত চিত্র।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
প্রায় সারা রাত জেগে থাকা। ভোরের আলো ফোটার আগে ঘুমোতে যাওয়া। আবার বেলা গড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠা! তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ এই অভ্যাসে চলছেন। কখনও কাজের প্রয়োজনে, আবার কখনও মোবাইল, ল্যাপটপের পর্দায় ওটিটি সিরিজে বুঁদ হয়ে রাত কাটিয়ে দেন তরুণ প্রজন্মের একাংশ। তাই কলকাতা ঘুরে ঠাকুর-দর্শনের জন্যও আদর্শ সময়, রাতের কলকাতাকেই বেছে নেন বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। অবশ্য দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) সময়ে রাত জেগে উৎসব উদযাপনে বাদ যায় না কচিকাঁচারাও। পরিবারের সঙ্গে অনেকেই সারা রাত জেগে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, 'প্যান্ডেল হপিং' চলে। কিন্তু এই রাত জেগে প্রতিমা-দর্শন একেবারেই অস্বাস্থ্যকর বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাত জাগার এই অভ্যাস শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। এর ফলে একাধিক জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাত জেগে থাকলে শরীরে একাধিক অঙ্গের উপরে চাপ পড়ে, এর ফলে শরীরে নানান রোগের ঝুঁকি বাড়ে। রাত জাগার অভ্যাস লিভার এবং পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকারক। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে অনেকেই গভীর রাতে নানান রকমের ভারী খাবার খান। অতিরিক্ত তেলমশলা জাতীয় খাবার, চর্বি জাতীয় প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়ার পরে সারা রাত জেগে থাকা শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকারক। এর জেরে হজমের সমস্যা তৈরি হয়। অন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এর ফলে লিভার এবং পাকস্থলীর সমস্যা তৈরি হতে পারে। রাত জাগার ফলে শরীরে একাধিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এমনই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, শরীরের নির্দিষ্ট ঘড়ি আছে। যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় 'বায়োলজিক্যাল ক্লক' বলা হয়। সেই নিয়ম অনুযায়ী, দিনে বিভিন্ন কাজের সময় শরীরের নানান হরমোন নিঃসরণ হয়। আবার রাতের সময় শরীরের বিশ্রামের সময়। সেই সময়েও শরীরের বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ হয়। শরীরের এমন কিছু হরমোন রয়েছে, যা রাতে ঘুমোনোর পরেই নিঃসরণ হয়। তাই রাত জাগলে হরমোনের ভারসাম্যের অভাব ঘটে। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গের সক্রিয়তা হারায়। আবার মানসিক চাপ, খিটখিটে মেজাজ তৈরি হয়। অসম্ভব ক্লান্তি বোধ গ্রাস করে।
রাত জেগে থাকলে (Durga Puja 2024) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও কমে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কের বিশ্রাম জরুরি। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোলে তবেই মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণ হয়। যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রাত জাগার অভ্যাস মস্তিষ্কে বিশেষত স্মৃতিশক্তিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। স্থূলতার সমস্যায় ভুক্তভোগীদের জন্যও রাত জাগার অভ্যাস বাড়তি সমস্যা তৈরি করতে পারে। ঠিকমতো বিশ্রাম না নিলে শরীরের ওজন বেড়ে যায় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে (Durga Puja 2024) অনেকেই রাত জেগে উদযাপনে যোগ দেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই অভ্যাস বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই তাদের আগাম সতর্কতা জরুরি। চিকিৎসকদের একাংশের পরামর্শ, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকতে রাত জাগা এড়িয়ে চলাই উচিত। তাঁরা জানাচ্ছেন, ঠিকমতো খাওয়া এবং ঘুম, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই জরুরি। রাত জাগলে রক্তচাপ ওঠা-নামা করতে পারে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
আবার ডায়বেটিস আক্রান্তদের রাত জাগা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাওয়া, ঠিকমতো হজম হওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এগুলো খুব জরুরি। তাই রাত জেগে থাকা (Pratima-darshan) কিংবা গভীর রাতে অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদ তৈরি করতে পারে। হজমের সমস্যা থাকলে রাত জেগে উদযাপন এড়িয়ে চলাই উচিত বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাত জাগার অভ্যাস অন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই রাত জাগলে হজমের আরও গোলমাল হয়।
মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে রাত জাগার অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কমাতে নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্রাম, পর্যাপ্ত ঘুম খুব জরুরি। তাই মাইগ্রেন সমস্যা কমাতে রাত জাগার অভ্যাস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।