কোন পাঁচটি উপসর্গ জানান দেয় হৃদরোগের?
প্রতীকী ছবি।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
আধুনিক ব্যস্ত জীবনে বাড়ছে নানা রোগ। আর সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে হৃদসমস্যা। ব্যস্ত জীবনে কম ঘুম, ফাস্টফুডের অভ্যাস, মানসিক চাপ ইত্যাদি বাড়াচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি (Heart Attack)! তাই হৃদসমস্যায় আক্রান্তের তালিকায় ভারত ক্রমশ বিশ্বের প্রথম সারির দেশ হয়ে উঠছে।
কী বলছে সমীক্ষা?
ভারতে হৃদরোগের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। আক্রান্তের তালিকায় ভারত প্রথম সারিতেই আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ৩৫ মিলিয়নের বেশি ভারতীয় হৃদরোগের সমস্যায় ভোগেন। হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) আশঙ্কাও বাড়ছে। গোটা দেশের মধ্যে আবার কেরল আর পশ্চিমবঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর পরিসংখ্যান বলছে, এ রাজ্যে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২০ জনের হৃদসমস্যা রয়েছে। বিশেষত শহুরে বাঙালির ২০ শতাংশ হৃদরোগের সমস্যায় ভোগেন।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হৃদরোগের সমস্যা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) হতে পারে যে কোনও সময়েই। তবে, কয়েক দশক আগেও পঞ্চাশোর্ধ্বদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি ধরা হত। কিন্তু গত দশ বছরে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ৩০ বছরের চৌকাঠ পেরলেই বাড়তি সতর্ক হতে হবে। বিশেষত, যাঁদের পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো রোগ আছে, তাঁরা বাড়তি সতর্ক হন। যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে, তাহলে নিয়মিত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ জরুরি। তাছাড়া, পরিবারের কেউ বিশেষত বাবা-মা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে, ৩০ পেরিয়ে অবশ্যই চেক-আপ জরুরি।
কোন পাঁচটি উপসর্গ জানান দেয় হৃদরোগের?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বড় বিপদ হওয়ার আগে শরীর ইঙ্গিত দেয়। তাই আগে থেকে উপসর্গ টের পেলে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। বিশেষত হৃদরোগের সমস্যার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। যে পাঁচ ইঙ্গিতের কথা চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, তার প্রথমেই হল বুকে ব্যথা বা চিনচিন করা (Heart Attack)। যদি, বুকের বাঁদিকে চিন চিনে ব্যথা অনুভব হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, কোনও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সময় নষ্ট না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
দ্বিতীয়ত, মাথার ভিতরে কষ্ট ও বমি হওয়া। অনেক সময়েই হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) মতো সমস্যা দেখা দেওয়ার আগে বমি হয়। যদি হঠাৎ বমি হয় ও মাথার ভিতরে কোনও রকম কষ্ট অনুভব হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
তৃতীয়ত, শুধু বুকে নয়, লাগাতার পেট ও পিঠে যন্ত্রণা অনুভব হলেও সতর্ক হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিশেষত, মহিলাদের হৃদরোগ দেখা দিলে এই উপসর্গ বেশি দেখা যায়। পেটের যন্ত্রণা অথবা পিঠের দিকে একটা খিচ ভাব অনুভব হয়। সেটা হার্ট অ্যাটাকের (Heart Attack) ইঙ্গিত হতে পারে।
এসি রুম বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় বসে থেকেও অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হৃদরোগের আরেক উপসর্গ হতে পারে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যেহেতু হৃদরোগের অন্যতম কারণ রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো না হওয়া, তাই অনেক সময়ই আক্রান্তের অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে।
দেখার সমস্যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি লক্ষণ বলে জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, দেখার ক্ষমতা কমে যাওয়া বা বারবার ভুল দেখা ইঙ্গিত দেয় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার।
কীভাবে হৃদরোগ এড়িয়ে সুস্থ থাকবেন?
চিকিৎসকদের পরামর্শ, নিয়মিত চেক আপ জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে, তাহলে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। রক্তচাপ ওঠা-নামা করলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
ডায়বেটিস থাকলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। ডায়বেটিস যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে। ডায়বেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি (Heart Attack) বাড়ায়। খাবারের দিকে নজরদারি জরুরি। কী খাচ্ছি, কতখানি খাচ্ছি, সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। অতিরিক্ত প্রোটিন, ফ্যাট জাতীয় খাবার, যাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তা একেবারেই এড়িয়ে যেতে হবে। অতিরিক্ত তেলমশলা থাকে, যেমন বিরিয়ানি, মোগলাই পরোটার মতো খাবার খুব কম পরিমাণে খেলেই ভালো। কারণ, এগুলো হজম হতে অনেক সময় লাগে। তাছাড়া এগুলোতে তেল ও মশলা অনেক বেশি থাকে।
নিয়মিত আপেল, কমলালেবু, শশা, কলার মতো ফল খেতে হবে।
সবুজ সবজি ও কম চর্বিযুক্ত মাছ নিয়মিত খাওয়া দরকার।
মানসিক চাপ কমাতে হবে। নিয়মিত গান শোনা, ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কাজে কিছুটা সময় দিতে হবে। তাহলে মানসিক চাপ কমবে। মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিয়মিত কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। হাঁটাচলা করলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।