গর্ভাবস্থায় থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতা মা ও শিশু দু'জনের জন্য সমান বিপজ্জনক?
প্রতীকী ছবি।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
গলার মাঝেই থাকে থাইরয়েড গ্রন্থি। সেই গ্রন্থি থেকেই থাইরয়েড হরমোন বের হয়। কিন্তু এই হরমোন প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হলেই ঘটে বিপদ! গর্ভাবস্থায় (Pregnancy) থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ বাড়লে হতে পারে নানান জটিলতা। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বিপদের জানান দেয়। নজরদারির অবহেলা মা ও শিশুর বিপদ বাড়ায়।
গর্ভাবস্থায় (Pregnancy) কি থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় (Pregnancy) থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা বাড়তে পারে। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই গর্ভস্থ শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি হয়ে যায়। সেখান থেকে শিশুর দেহে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ হতে থাকে। মায়ের তাই থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তার উপরে মায়ের যদি থাইরয়েডের মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়ে।
কোন বিপদের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা?
গর্ভাবস্থায় (Pregnancy) থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মা ও শিশু দুজনের জন্য সমান বিপজ্জনক। মায়ের শরীর থেকে অতিরিক্ত থাইরয়েড নিঃসরণ হলে সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে না। এছাড়াও শারীরিক নানান জটিলতা তৈরি হতে পারে। মায়ের শরীরেও অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ জটিলতা তৈরি করে। ক্লান্তি বাড়ায়, মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে। যার ফলে, রক্তচাপে প্রভাব পড়ে। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা যায়। যা মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য বিপজ্জনক।
অতিরিক্ত থাইরয়েড নিঃসরণ কীভাবে বুঝবেন?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নিয়মমাফিক গর্ভবতীর (Pregnancy) থাইরয়েড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে এই পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হয়। তবে, থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যা সমস্যা স্পষ্ট করে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গর্ভবতীর অতিরিক্ত গরম লাগা, ঘাম হওয়া, ক্লান্তি বোধ, মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া এবং মনে রাখার শক্তি কমে যাওয়া জানান দেয় দেহে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে এই লক্ষণ অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানানো দরকার। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কীভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই সমস্যার মোকাবিলা সম্ভব। থাইরয়েড প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকলে, অ্যান্টি থাইরয়েড ওষুধ দেওয়া হয়। এই ওষুধ নিয়ম মাফিক খেলে দেহে থাইরয়েডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পাশাপাশি, গর্ভাবস্থায় (Pregnancy) প্রথম তিন মাসে কিছু খাবার নিয়মিত খেলে দেহে থাইরয়েডের ভারসাম্য থাকবে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদদের একাংশ। তাদের পরামর্শ, নিয়মিত টক দই খাওয়া দরকার। পাশপাশি, আপেল, নাসপাতির মতো ফল খাওয়া জরুরি। ভূট্টা, জবের মতো দানাশস্য নিয়মিত খাওয়া উপকারি। এছাড়াও ব্রোকোলি, অ্যাভোকাডোর মতো ফল দেহে থাইরয়েডের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই এগুলো খেলে গর্ভবতীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।