হাসপাতালে রোগ সারাতে গিয়ে সংক্রমণের শিকার? কী বলছে বিশেষজ্ঞ মহল?
প্রতীকী ছবি
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
কয়েক দিন আগেই উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী উস্তাদ রশিদ খাঁ-র মৃত্যু ফের প্রশ্ন তুলল। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন সেখান থেকেই সংক্রমণ (Hospital Infection), আর তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে এই বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীর। এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে, রশিদ খাঁ-র ঘটনা ব্যতিক্রম নয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে কয়েক হাজার মানুষ এইভাবেই মারা যান। আর এই রোগের নাম হসপিটাল-অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন।
হসপিটাল-অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন কী? (Hospital Infection)
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে কোনও কোনও রোগীকে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ভর্তি থাকতে হয়। দেখা যায়, হাসপাতালে থাকার জন্য রোগীর দেহে নানা সংক্রমণ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। একেই বলে হসপিটাল-অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন রোগী (Hospital Infection)। যেসব রোগীকে দীর্ঘ সময় ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা করতে হয়, তাঁরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময়েই দেখা যায়, ভেন্টিলেশনে থাকার জেরে ফুসফুসে জল জমে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্লাড স্ট্রিম ইনফেকশন হয়। দীর্ঘ সময়ে রোগীর দেহে নানা ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম দেওয়া থাকলে, সেখান থেকে এই ব্লাড স্ট্রিম ইনফেকশন হতে পারে। আবার ইউরিনারি ট্র্যাকেও ইনফেকশন হয় হাসপাতাল থেকে। রোগী দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকলে ক্যাথেটার ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকেই মূত্রনালীতে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকলে রোগীকে নানা যন্ত্র দেওয়া হয়। যেমন অক্সিজেন, স্যালাইন, ক্যাথেটার, এছাড়াও নানান জীবনদায়ী যন্ত্র। আর লাগাতার এই কৃত্রিম পরিবেশে থাকার জেরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে। তাছাড়া হাসপাতালে বিভিন্ন রোগীরা থাকেন। বাতাসেও থাকে জীবাণুর দাপট। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এক রোগের চিকিৎসা করাতে দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলে, হাসপাতাল থেকেই আর এক সংক্রমণ রোগের শিকার হতে পারে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে হসপিটাল-অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন।
এই রোগের প্রকোপে মৃত্যুহার কত? (Hospital Infection)
বিশ্বজুড়ে এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তরফে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, প্রতি বছর আমেরিকায় ৯৯ হাজার মানুষ হসপিটাল-অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশনে আক্রান্ত হন। যার একটি বড় অংশ মারাও যান। আমেরিকার মতো এই সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতীয় চিকিৎসক মহল। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, এ দেশে হসপিটাল-অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশনের হার গত কয়েক বছরে ক্রমশ বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে এই সংক্রমণের হার ২.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ। করোনা মহামারির সমস্যার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। কয়েক বছর আগেও মূলত প্রবীণ রোগীদের এই ধরনের ঝুঁকি (Hospital Infection) বেশি দেখা যেত। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কম বয়সীরাও এই সমস্যায় ভুগছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসকদের পাশপাশি স্বাস্থ্য কর্মীদের এই সমস্যা নিয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে। তাঁঁরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয় না। তাই এই ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। হসপিটাল-অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন (Hospital Infection) রোধ করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হাত পরিষ্কার। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, স্বাস্থ্যকর্মীদের এই অভ্যাস যেন থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশপাশি মাস্ক পরা এবং এয়ার পিউরিফায়ারের দিকে নজরদারি জরুরি। কারণ, হাসপাতালে একাধিক রোগী একসঙ্গে থাকে। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া যে কোনও জীবনদায়ী যন্ত্র রোগীকে দেওয়ার আগে তা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে কিনা, সেদিকে নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।