নুন ছাড়া খাওয়া যায় না। কিন্তু নুন শরীরে বেশি গেলে তা থেকে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক সবই হতে পারে। তাই পরিমাণমতো নুন গ্রঙণ করার পরামর্শ দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)
নুন ব্রাত্য
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মশলা ছাড়া রান্না হয় কিন্তু নুন ছাড়া নয়। নুন হল সেই উপাদান যেটি ছাড়া কোনও খাবারই সুস্বাদু হয়ে ওঠে না। লবণ ছাড়া খাবার অসম্পূর্ণ। তবে রান্নায় নুন কম হলে যেমন খাওয়া যায় না, তেমনই বেশি হলেও মুখে তোলা দায়। কম বা বেশি লবণ খাবারের স্বাদ একেবারেই নষ্ট করে দেয়। আবার পরিমাণমতো লবণ সেই খাবারকেই সুস্বাদু করে তোলে। নুনের মূল উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইডও আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, আমাদের শরীরে ঠিক কতটা নুনের প্রয়োজন। অনেক সময়ই আমরা না বুঝে দৈনিক খাদ্যতালিকায় বেশি লবণ গ্রহণ করে ফেলি, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)এর মতে, অত্যধিক নুন শরীরে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা তৈরি করে। হু-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমরা দৈনিক প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণে নুন খাচ্ছি। যা আমাদের ক্রমশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দৈনিক মাত্র পাঁচ গ্রাম নুন গ্রহণ করার কথা বলছে।
হু-এর অভিমত, অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ, মূলত লবণের মাধ্যমে এবং অপর্যাপ্ত পটাশিয়াম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দৈনিক পাঁচ গ্রামের কম লবণ গ্রহণ করা, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, করোনারি হার্ট অ্যাটাক, প্রভৃতির ঝুঁকি কম করে। WHO-এর মতে, বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন গড়ে ৯-১২ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে। যদি বিশ্বব্যাপী লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়, তাহলে বছরে আনুমানিক ২৫ লক্ষ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতে পারে।
কখন নুন খাবেন না
বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার প্রতিদিনের সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ দ্রুত বাড়াচ্ছে।
হাই ব্লাড প্রেসার থাকলে: হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের রক্তচাপ কমাতে চিকিৎসকেরা প্রথমেই নুন খাওয়া কমানোর পরামর্শ দেন। কারণ কি জানেন? নুন শরীরে প্রবেশ করা মাত্র শরীরে জলের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। ফলে শরীরের ভিতরে প্রেসার বেড়ে যায়। যা উচ্চ রক্তচাপে (high pressure)ভোগা রোগীদের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়। তাই তো রক্তচাপ বাড়লেই নুনকে টাটা-বাইবাই করতেই।
শরীরে জলের পরিমাণ বেড়ে গেলে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মাত্রাতিরিক্ত নুন খেলে কিছু বিশেষ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, ফলে শরীরের ভিতরে জল জমতে শুরু করে। এই ধরনের সমস্য়া হলেই তাই নুন খাওয়া ছাড়তে হবে। নচেৎ কিন্তু বিপদ!
মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া: এমন কিছু খাবার আছে যেগুলি খেলে মুখের ভিতর খুব শুকিয়ে যায়, সেই সঙ্গে জল তেষ্টাও বেড়ে যায়। এমনটা কেন হয় জানা আছে? আসলে যেসব খাবারে নুনের পরিমাণ বেশি থাকে সেই সব খাবার খেলেই সাধারণত এমন ধরনের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই সময় অনেক পরিমাণে জল খান। দেখবেন সমস্য়া কমে যাবে।
কিডনির সমস্যা: অতিরিক্ত নুন গ্রহণ করলে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। আসলে শরীরে নুনের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেই অতিরিক্ত নুনকে শরীর থেকে বের করে দিতে কিডনি মাত্রাতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে বার বার প্রস্রাব পেতে থাকে। তাই সমস্যা দেখা যায়।
কোন খাবারে নুন বেশি থাকে
চিপস জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারে নুনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এই ধরনের খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা অনুচিত।
আমরা সকলেই জানি যে, লবণ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের একটি অপরিহার্য অংশ। লবণ ছাড়া প্রায় প্রতিটি খাবারই অসম্পূর্ণ। লবণ যে শরীরকে শুধুমাত্র হাইড্রেট রাখে তা নয়, থাইরয়েড গ্রন্থি যাতে সঠিকভাবে কাজ করে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় ব্লাড প্রেসার কম থাকলে বা শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে, লবণ বিশেষভাবে সাহায্য করে। এমনকি লবণের মাধ্যমেই শরীরে আয়োডিনের চাহিদা পূরণ হয়। কিন্তু যদি লবণ অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি সমস্যার মতো রোগ, বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ে। অতএব নুন খান কিন্তু পরিমাণ মেপে।