শুধু শাঁস নয়, এর বীজ ও খোসার উপকারিতা জানলে চমকে উঠবেন...
তরমুজ
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গরম পড়তেই বাজার ছেয়ে গিয়েছে তরমুজে। তাপমাত্রার পারদ যে ভাবে চড়ছে তাতে ভরসা এখন এই লাল ফলেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোল্ড ড্রিংস নয়, বরং সতেজ রাখে তরমুজই (Benefits of watermelon)! তরমুজের মধ্যে ৯২ শতাংশ রয়েছে জল। তরমুজের মধ্যে সামান্য ক্যালোরি থাকে। আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার।
১. তরমুজ শরীরে জলের অভাব মেটায়
তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ জল থাকে। ফলে গরমে শরীরে জলের চাহিদা মেটাতে কিন্তু তরমুজ খুব ভাল কাজ করে। সেই সঙ্গে কিন্তু হজমেও সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বক ভাল রাখতেও সাহায্য করে।
২. তরমুজ বাড়তি ওজন কমায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, গরম কাল ওজন কমানোর জন্য সেরা সময়। তরমুজের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ জল। আর তাই গরমে বাজারে উপলুব্ধ ঠান্ডা নরম পানীয় না খেয়ে তরমুজ খান। উপকারে আসবে। এক কাপ তরমুজ থেকে মাত্র ৪৬ ক্যালোরি পাওয়া যায়। ফলে ওজন বাড়ারও ভয় নেই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই ফল। ফাইবারের ফলে তরমুজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৩. তরমুজ কিডনি সমস্যারও সমাধান করে
পুষ্টিবিদদের মতে, তরমুজের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম। যা আমাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সঙ্গে কিডনির সমস্যা থেকেও দূরে রাখে। তরমুজ ভিটামিন সি ও বি৬ সমৃদ্ধ। এ দুটি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
৪. তরমুজ ত্বক ভাল রাখে
বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বক ভালো রাখে তরমুজে থাকা ভিটামিন সি। তাই নিয়মিত তরমুজ খেলে তা ত্বকেও প্রভাব ফেলবে। গরমে বজায় থাকবে ত্বকের আর্দ্রতা। এছাড়া দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভাল রাখে ভিটামিন সি। মাড়ির টিস্যুতে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ রোধ করতে পারে এই ফল।
৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর হল তরমুজ
তরমুজে থাকা কোলিন নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য উপকারী। মাংসপেশির মুভমেন্ট, দেহকোষের মেমব্রেন গঠন, মস্তিষ্ক গঠন ও নার্ভের কার্যকারিতা বাড়াতে কোলিন বেশ সহায়ক।
৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে তরমুজ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকাও রয়েছে তরমুজের। তরমুজের মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও তরমুজের মধ্যে থাকে নিট্রিক অক্সাইড ডিলায়েটস- যা রক্ত জমাট বাঁধা থেকে রোধ করে।
৭. হার্টের সমস্যার সমাধান করে তরমুজ
হার্টের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে তরমুজ অপরিহার্য। কার্ডিওভ্যাসকুলার রোগ প্রতিরোধে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, রোগের ঝুঁকি কমাতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
তরমুজের বীজ কিন্তুও খুব উপকারী। যা কপার, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজে সমৃদ্ধ। তরমুজের বীজে উচ্চ প্রোটিন রয়েছে। আপনার সারাদিনে যে পরিমাণে প্রোটিনের প্রয়োজন হয় তার ৬০% আপনি পাবেন এই এককাপ (৩০.৬ গ্রাম) তরমুজের দানায়। শরীরে প্রয়োজনীয় নানা ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে এর মধ্যে। তার মধ্যে একটি হল আর্গিনাইন, যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনারি হার্ট ডিজিজের চিকিত্সার ক্ষেত্রেও এটা একটা জরুরি উপাদান। এ ছাড়াও গ্লুটামিক অ্যাসিড, লাইসিন, ট্রিপ্টোফানের মতো প্রোটিনও রয়েছে তরমুজের বীজে। ভিটামিন বি-ও রয়েছে তরমুজের বীজে।
তরমুজের খোসায় (মূলত খোসার ভেতরের অংশ, অর্থাৎ, মূল শাঁস ও বাইরের আস্তরণের মাঝের অংশ) রয়েছে সিট্রুলিন, যা ফ্রি রেডিকেল দূর করতে ভালো কাজ করে। এটা এমিনো এসিডে পরিবর্তিত হয়। যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। বাড়তি ওজন কমাতে পারে। রক্তচাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। তবে, তরমুজের খোসা খাওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে বাইরের যে সবুজ অংশ, সেটা খাবেন না। এটা পেটে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তবে তরমুজ খেতে হবে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরমুজ ফাইবারে ভরপুর। তাই অতিরিক্ত তরমুজ খেলে ডায়রিয়াসহ পেটের নানা রোগ দেখা যেতে পারে। বেশি তরমুজ খেলে অম্বল ও বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম। তাই ১ দিনে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত তরমুজ হজম করা সম্ভব। এতে শরীরে ঢোকে ১৫০ গ্রাম ক্যালরি, যা শরীরের জন্য যথেষ্ট। এর থেকে বেশি তরমুজ খেলেই সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
Tags: