Liver: হজমের সমস্যা থেকে শুরু, তারপর প্রাণঘাতী রোগ! লিভারের অসুখে জেরবার তরুণ সমাজ
তরুণদের মধ্যে বাড়ছে লিভারের সমস্যা।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হজমের সমস্যা থেকে শুরু। তারপর অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরে দানা বাঁধছে বড় অসুখ। এখন কম বয়সেই লিভারের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ছোট-বড়, সবার মধ্যেই দিনে দিনে বাড়ছে লিভারের অসুখ। ২৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের মধ্যে লিভারের সমস্যা বেড়েছে দ্রুত হারে। এর কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যাকে গুরুত্ব না দেওয়া আর অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, অ্যালকোহল, জাঙ্ক ফুড, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত চিনি যুক্ত পানীয় খাওয়া, ইত্যাদি অভ্যেস ভারতে লিভারের রোগের (Liver diseases) বাড়বাড়ন্তের কারণ। লিভারের রোগ ভারতে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন লিভারের অসুখে ভুগছেন। ভারতে, লিভারের অসুখে মৃত্যুর হার প্রতি বছর আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। সারা বিশ্বে ২০ লক্ষ মানুষের লিভার-সম্পর্কিত রোগে মৃত্যু ঘটে। সেই সঙ্গে ভয়াবহ ভাবে লিভার ক্যান্সারের হার বাড়ছে। এই মুহূর্তে ভারতে যকৃতের অসুখে ভোগা রোগীদের মধ্যে একটা বড় অংশের বয়স ২৩-৩৫ ।
ক্রমবর্ধমান হারে অ্যালকোহল সেবনের ফলে ভারতে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD) এ আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে, বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। মহিলাদের অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিসিজ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারও কারও ক্ষেত্রে বিপাকে সমস্যা এবং জেনেটিক কারণে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভারের এই অসুখের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। পুষ্টিতে ঘাটতি থাকলেও লিভারের অসুখ করতে পারে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, হেপাটাইটিসের জন্য চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই হেপাটাইটিসের টিকা নেননি। অ্যালকোহল-সম্পর্কিত লিভারের রোগ, ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস এবং সিরোসিসের মতো বিভিন্ন সমস্যা তরুণদের লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে তরুণদের মধ্যে মৃত্যু ও অসুস্থতার হার বেড়েছে। অ্যালকোহল সেবন, ধূমপান, পর্যাপ্ত জল পান না করা, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, ভাইরাল সংক্রমণ এবং দীর্ঘদিন কিছু ওষুধ খাওয়া লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা লিভারের সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
লিভার আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা বিভিন্ন কাজ করে। এটি বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণ, পুষ্টি প্রক্রিয়াকরণ, হরমোন নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত, ইমিউন সিস্টেমের কাজ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও রাসায়নিক পদার্থের সঞ্চয় করে।
বর্তমানে দেশে তরুণদের মধ্যে লিভারের সমস্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, "২৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের মধ্যে তীব্র ভাইরাল হেপাটাইটিস, সিরোসিস, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের মতো গুরুতর সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পুরুষ এবং মহিলাদের অনুপাত প্রায় ১:২ (পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের সংখ্যা দ্বিগুণ)। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে।"
হেপাটাইটিস হল লিভারের গুরুতর প্রদাহ যা ভাইরাস (হেপাটাইটিস এ, বি, সি এবং ই), টক্সিন, রাসায়নিক, ড্রাগ অপব্যবহার, অ্যালকোহল পান, জেনেটিক ডিসঅর্ডার এবং কিছু অটোইমিউন রোগের কারণে হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে যেমন হেপাটাইটিস এ (দূষিত জল বা খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়), হেপাটাইটিস বি (সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শ বা অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়), হেপাটাইটিস সি (রক্ত থেকে রক্তের সংস্পর্শে ছড়ায়), হেপাটাইটিস ডি (কেবল হেপাটাইটিস বি-র রোগীদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়), হেপাটাইটিস ই (দূষিত জলের মাধ্যমে ছড়ায়)। দেখা যাচ্ছে যে হেপাটাইটিস সংক্রমণে আক্রান্তদের হেপাটাইটিসের টিকা নেওয়া হয়নি। হেপাটাইটিস সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ হেপাটাইটিসের টিকা নেননি। এই সংক্রমণ হেপাটাইটিসের টিকা নিয়ে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।
‘সিরোসিস অফ লিভার’ শব্দবন্ধটি ক্যানসারের চেয়ে কোনও অংশে কম আতঙ্কের নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ ক্যানসারের চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। কারণ, এই রোগ সহজে ধরা পড়ে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এতটা দেরি হয়ে যায় যে, তখন আর কিছু করার থাকে না। চিকিৎসক জানান, "সিরোসিস অফ লিভার হল লিভার রোগের শেষ পর্যায়। এখানে থেকে ফিরে আসার কোনও উপায় নেই। এর মানে হল লিভার সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসলে প্রথমে ফ্যাটি লিভার হল, অর্থাৎ লিভারটি বড় হয়। তারপর লিভার শক্ত হয়ে যায়। তখনও যদি আমরা সতর্ক না-হই তাহলে লিভারটি ফেটে যায় ৷ একেই বলে সিরোসিস অফ লিভার। অতএব ফ্যাটি লিভার হল সিরোসিস অফ লিভারের প্রথম ধাপ।
আরও পড়ুন: স্যান্ডউইচ বিক্রেতা থেকে ট্র্যাজেডি কিং! বলিউডের বর্ণময় চরিত্র দিলীপ কুমার
লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য চিকিৎসকরা বলেন, ফ্যাট জাতীয় খাওয়ার যতটা কম খাওয়ার যায় তত ভালো। তার সঙ্গে টাটকা শাক-সবজি ও ফল খেতে হবে। ফাইবার জাতীয় খাওয়ার মানে আটা, ওটস, কনফ্লেক্স বেশি খেতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় জল খেতে হবে। আর সব থেকে বেশি দরকার হল শারীরিক ব্যায়াম। মানুষের শারীরিক কাজকর্ম কমে যাওয়ার ফলে শরীরে ফ্যাট জমছে ৷ যার ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মদ্যপান কমাতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাত্রায় লাগাম টানতে হবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।