মুঘলরা ভারতে আসার ১০০ বছর আগেও নাকি বিরিয়ানির মতো পদের অস্তিত্ব ছিল
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজকাল বাইরের খাবার খেতে মানুষ এতটাই পছন্দ করে যে, বাজারে নতুন নতুন খাবারের সন্ধানও মেলে সহজে। নানা পদের খাবার আজ হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। তবে যে যাই বলুক না কেন, বিরিয়ানির (Biryani) সঙ্গে কিন্তু কোনও খাবারের তুলনাই চলে না। বিখ্যাত কয়েকটি পদের মধ্যে একটি হল বিরিয়ানি। ভারতের কলকাতা, দিল্লি, লক্ষ্নৌ, হায়দরাবাদের বিরিয়ানি আজ বিশ্ববিখ্যাত। যেমন খেতে সুস্বাদু, তেমন এর চাহিদা। গোটা ভারত জুড়ে রমরমিয়ে চলছে এই পদটি। কখনও মটন, কখনও বা চিকেন, যে কোনও বিরিয়ানি আজ এতটাই জনপ্রিয়, যা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে গেছে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, এই বিরিয়ানির উৎপত্তি কোথা থেকে? কী এই বিরিয়ানির ইতিহাস?
এই জনপ্রিয় পদটির উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতবিরোধ আছে। ইতিহাস ঘাঁটলে এর সম্বন্ধে অনেক মতামত আমাদের চোখে পড়ে। কেউ কেউ বলেন, আরবের ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই ভারতে আসে এই বিরিয়ানি (Biryani)। তবে প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী ভারতে বিরিয়ানির উৎপত্তি মুঘল বাদশাদের হাত ধরেই। শাহজাহানের শাসনকালে তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগম সৈন্যদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে চান এবং দেখেন, সৈন্যদের বেশিরভাগ ক্লান্ত, করুণ অবস্থায় রয়েছে তারা। তখন তাঁর মাথায় প্রশ্ন আসে, এরকম হলে তারা বাঁচবে কী করে বা যুদ্ধই করবে কী করে? তখন মমতাজ এক উপায় বের করেন। তিনি রান্নাঘরে খানসামাকে আদেশ দেন, সৈন্যদের জন্য এমন একটি পদ তৈরি করতে হবে, যেটি খেলে তাদের শরীরে শক্তি আসে এবং তারা সুস্থ থাকে। সেই সূত্রেই তিনি বলেন যে মশলা সহযোগে ভাতের সঙ্গে মাংস মিশিয়ে একটি পদ তৈরি করতে, যা খেলে শক্তি তো আসবেই। সঙ্গে পেটও ভরে থাকবে অনেকক্ষণ। আর সেই থেকেই নাকি উৎপত্তি বিরিয়ানির। আধুনিক শেফরা আবার বলছেন, এই বিরিয়ানি নাকি এমন একটি পদ যা দেওয়ান ই আম থেকে দেওয়ান ই খাস-এ পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ মুঘলদের এই পদ রাজ পরিবারে খাস হওয়ার আগে থেকেই সাধারণ মানুষ এবং সৈন্যসামন্তরা এই খাবার খেতেন। মুঘলরা ভারতে আসার ১০০ বছর আগেও এই বিরিয়ানির মতো পদের অস্তিত্ব ছিল।
মহাভারতেও এমন এক পদের নাম পাওয়া যায়, সেটাই কি আজকের বিরিয়ানি?
মহাভারতের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের জানা। এই মহাভারতেরই অনেক জায়গায় একটি শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেটি হল 'পলান্ন'। কোথাও ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে এই 'পলান্ন' খাওয়ার কথা বলেছেন, আবার কোনও জায়গায় দ্রৌপদী ও পাণ্ডবরাও এই পদ খেতেন। কী এই পলান্ন? এই শব্দটির সংস্কৃত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পল শব্দের অর্থ মাংস এবং অন্ন শব্দের অর্থ ভাত। অর্থাৎ মাংস মিশ্রিত ভাতকেই পলান্ন বলা হত। তাহলে সেই পলান্নই কি আজকের বিরিয়ানি (Biryani)? এমনটাই মনে করা হয় আজকের দিনে দাঁড়িয়ে। অনেক ঐতিহাসিক একে বিরিয়ানির পূর্ব পদ বলেও অভিহিত করেছেন। তবে আবার কেউ কেউ বলছেন, ভাত আর মাংস মিশ্রিত করলেই সেটি যে বিরিয়ানি, এমনটা নয়। তাই এই বিরিয়ানির উৎপত্তি নিয়ে আজও মতবিরোধ আছে পুরোমাত্রায়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।