বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের অবনতি ঠেকানো জরুরি হয়ে পড়েছে
প্রতীকী ছবি
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সম্পর্কে জানা আর রোগ নির্ণয় করাই যথেষ্ট নয়। রোগীর শয্যার পাশে থেকে দিতে হবে পরিষেবা। রোগীর রোগ নির্ণয় করেই দায়িত্ব শেষ নয়। বরং রোগীর সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, প্রত্যেক রোগীর বিশেষ কোন ধরনের চাহিদা রয়েছে, তা বুঝে তবেই শুরু করতে হবে চিকিৎসা (Treatment)। এর জন্য জানতে হবে স্থানীয় ভাষা। যাতে রোগীর সমস্যা বোঝা এবং পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও জটিলতা তৈরি না হয়। সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন চিকিৎসা পড়ুয়াদের জন্য এক নয়া নির্দেশিকা তৈরি করেছে। সেই নির্দেশিকাতেই চিকিৎসা পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সারিতেই থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বিভিন্ন বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ায় একদিকে যেমন তাঁদের অভিজ্ঞতা বাড়ে, তেমনি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের দক্ষ কর্মীর ঘাটতিও পূরণ হয়। বিশেষত এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেকটাই নির্ভর করে জুনিয়র ডাক্তারদের উপরেই। তাই তাঁদের প্রশিক্ষণ বিশেষ জরুরি।
সম্প্রতি সরকারি-বেসরকারি একাধিক হাসপাতালে বারবার রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কে চিড় দেখা গিয়েছে। রোগী ও রোগীর পরিবারের বিরুদ্ধে চিকিৎসক হেনস্থার যেমন একাধিক অভিযোগ উঠেছে, তেমনি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার ও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে নানান সময়ে। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের এই অবনতি ঠেকানো জরুরি। তাই চিকিৎসা শাস্ত্র পড়াকালীন পড়ুয়াদের নিজেদের দায়িত্ব (Treatment) ও পেশা সম্পর্ক বিশেষ ওয়াকিবহাল হতে হবে। আর সেই কারণেই সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন নতুন নির্দেশ জারি করছে।
ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, রোগীর সমস্যা বুঝতে এবং রোগীকে ঠিকমতো পরামর্শ দেওয়ার জন্য যে এলাকায় জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজ করছেন, সেই এলাকার ভাষা অর্থাৎ স্থানীয় ভাষা অবশ্যই জানতে হবে। যাতে কথা বলতে কোনও অসুবিধা না হয়। অধিকাংশ সময়েই যোগাযোগের সমস্যা থেকেই নানান জটিলতা দেখা দেয়। ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্কের অবনতির ক্ষেত্রে যোগাযোগের সমস্যাই সবচেয়ে বড় কারণ। তাই রোগী যে ভাষায় কথা বললে বুঝতে পারবেন, সেই ভাষাতেই সহজে রোগীকে বোঝার দক্ষতা অর্জন করতে হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের। পড়া চলাকালীন চিকিৎসক পড়ুয়াদের বোঝাতে হবে ভারতের আধুনিক চিকিৎসায় (Treatment) স্নাতক হওয়ার পরে, চিকিৎসক হিসাবে তার একটি বিশেষ সামাজিক দায়িত্ব থাকবে। তা সে কোনও পরিস্থিতিতেই অস্বীকার করতে পারবে না। রোগের উপসর্গ জানলেই হবে না। প্রত্যেক রোগীর নিজস্ব কিছু সমস্যা থাকে। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর সেই বিশেষ চাহিদার দিকেও চিকিৎসককে নজর দিতে হবে। তবেই রোগীর চিকিৎসকের প্রতি আস্থা মজবুত হবে। রোগীর পরিষেবা দেওয়ার চাপে অনেক সময়েই চিকিৎসকেরা নিজেরাও মানসিক চাপ ও অবসাদে ভোগেন। তাই ছাত্রাবস্থা থেকেই নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। অর্থাৎ জুনিয়র চিকিৎসকেরা প্রয়োজন মতো কাউন্সেলিং করতে পারেন। এ বিষয়ে তাঁরা চিকিৎসক-শিক্ষকদের সাহায্য নেবেন। জুনিয়র চিকিৎসকেরা নিজেদের স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে, চিকিৎসক-পড়ুয়াদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাপন এমন হতে হবে, যাতে তাঁরা সুস্থ জীবন কাটাতে পারেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কী বলছেন?
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের এই নয়া নির্দেশ স্বাস্থ্য পরিষেবা বিশেষত রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কে বিশেষ উন্নতির পথ দেখাবে বলেই আশা করছেন চিকিৎসক মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালে অধিকাংশ সময়েই সরাসরি যোগাযোগ হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের। তাই তাদের ভূমিকার প্রভাব সবচেয়ে বেশি রোগীর উপরে থাকে। প্রশিক্ষণ ঠিকমতো নিলে জুনিয়র চিকিৎসকেরাও কীভাবে রোগীদের সামাল (Treatment) দেবেন, সেই পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবেন ও স্পষ্ট ধারণা পাবে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।