ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাওয়ারনেস উইকে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
প্রতীকী ছবি।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
সদ্যোজাতের যত্নের মূল চাবিকাঠি কি রয়েছে মায়ের কাছেই? আজীবন রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে মজবুত করতে মায়েই কাছেই কি রয়েছে মূল মন্ত্র? আর সন্তান প্রসবের পরে সুস্থ জীবন কাটাতে এবং নানান মারণ রোগের ঝুঁকি কমানোর কৌশলও কি নতুন মা আর সন্তানের মধ্যেই গোপন রয়েছে? বিশেষজ্ঞ মহলের উত্তর, হ্যাঁ! নবজাতকের সুস্থ জীবন কিংবা মায়ের দীর্ঘ রোগমুক্ত জীবন এই সবকিছুর চাবিকাঠি স্তন্যপান (Breast Feeding)! ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাওয়ারনেস উইকে এমনই জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল!
কী বলছেন চিকিৎসকরা (Breast Feeding)?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শিশুর জন্মের পরের প্রথম ছ'মাস তার জন্য শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ (Breast Feeding) যথেষ্ট। বাইরের কোনও রকম খাবার কিংবা জলের প্রয়োজন শিশুর নেই। বরং জন্মের প্রথম ছ'মাস শিশুকে বাইরের খাবার কিংবা জল দিলে, তা শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে! তাই এই সময়ে শিশুকে শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ পানের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও জানানো হয়েছে, স্তন্যপান মা ও শিশু দু' জনের স্বাস্থ্যের জন্য সমানভাবে উপকারী। মা যে কোনও শারীরিক অবস্থাতেই শিশুকে স্তন্যপান করাতে পারেন। এমনকি করোনার মতো সংক্রামক মহামারীতে আক্রান্ত হলেও শিশুকে মা স্তন্যপান করাতে পারেন। এমনই নিদান দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই বলেই জানাচ্ছে তারা।
কেন শিশুদের জন্য মাতৃদুগ্ধ (Breast Feeding) উপকারী?
বিশেষজ্ঞ মহল জানাচ্ছে, ঠিক কোন কোন উপাদানে মায়ের দুধ তৈরি হয়, তা আজও বিজ্ঞানের কাছে অজানা। তাই মাতৃদুগ্ধের কোনও বিকল্প তৈরি করা যায়নি। কিন্তু এই দুধের উপকার জানা গিয়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শিশুর জন্মের পরে প্রথম ছ'মাস শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সাধারণত ছ'মাসের পরে যখন শক্ত খাবার শিশু খেতে শুরু করে, তখন থেকেই তার পেটের সমস্যা ও হজম সংক্রান্ত সমস্যা দেখা যায়। দেখা গিয়েছে, যারা ফর্মুলা দুধ খেয়ে অভ্যস্ত, সেই শিশুদের সমস্যা বেশি হয়। মাতৃদুগ্ধ শিশুর লিভার, কিডনি এবং পরিপাকতন্ত্রের সক্রিয়তা বাড়ায়। শিশুকে সুস্থ রাখে। তাছাড়া, জন্মের পরের প্রথম ছ'মাসের মধ্যে শিশুকে বাইরের জল খাওয়ালে, তার কিডনির উপরে বাড়তি চাপ পড়ে। তাই শিশুর কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শরীরের পাশপাশি মস্তিষ্কের বিকাশেও মাতৃদুগ্ধের (Breast Feeding) গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে মাতৃদুগ্ধ। স্মৃতিশক্তি বাড়ানো এবং চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ সাহায্য করে মাতৃদুগ্ধ।
এর পাশপাশি, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সন্তান ও মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও মাতৃদুগ্ধের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যে মা সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করান, তার সঙ্গে সন্তানের মানসিক সম্পর্ক অনেক বেশি দৃঢ় হয় বলেই মনে করছে চিকিৎসকদের একাংশ।
সন্তানকে স্তন্যপান (Breast Feeding) মায়ের শরীরের জন্য কতখানি উপকারী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র সন্তানকে সুস্থ রাখা নয়, নিজেকেও সুস্থ রাখতে স্তন্যপান (Breast Feeding) করানো জরুরি। সন্তান জন্মের পরে মা স্তন্যপান করালে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছে, স্তন্যপান করালে স্তন ক্যান্সার, জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। পাশপাশি দেহে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে। ফলে, শরীরে নানান রোগের ঝুঁকি কমে। হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকার জেরে মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। অধিকাংশ মায়েরা সন্তান প্রসবের পরে পোস্ট পার্টম ডিপ্রেশনের শিকার হন। এটা এক ধরনের মানসিক অবসাদ। সন্তানকে স্তন্যপান করালে এই অবসাদ কমার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বলেও জানাচ্ছে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাছাড়া, অনেকের গর্ভবতী থাকাকালীন শরীরের ওজন বেড়ে যায়। বাড়তি ওজন কমাতেও বেশ সময় লাগে। তবে, নিয়মিত স্তন্যপান করালে দ্রুত ওজন কমে বলেও জানাচ্ছে চিকিৎসক মহল।
তবে, সন্তানের প্রথম ছ'মাসে যে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং-এর পরামর্শ চিকিৎসকরা দিচ্ছেন, এই পর্বে মায়ের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের পরামর্শ, স্তন্যপান করানোর সময় মা যাতে নিয়মিত অন্তত ছ'লিটার জল পান করেন, সে দিকে নজর দিতে হবে। পাশপাশি, মাকে পর্যাপ্ত দুধ, ডিম, মাংস, মাছ এবং সব্জি খেতে হবে। যাতে তার শরীরে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি না পড়ে। তাছাড়া, আপেল, নাশপাতি, কলার মতো ফল নিয়মিত খেতে হবে, যাতে শরীরে ফাইবার ও আয়রন পর্যাপ্ত থাকে। পাশপাশি, মা স্তন্যপান করালে তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই পরিবারে তরফে নজর রাখতে হবে, যাতে সময় মতো মা বিশ্রাম নিতে পারেন। তবেই, মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।