বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২ মাস ধরে প্রতিদিন এই খাদ্য তালিকা অনুসরণ করলে এর ফলাফল দেখতে পাবেন...
থাইরয়েডে আদর্শ খাবার...
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: থাইরয়েডের সমস্যা বা থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এখানে থাইরয়েডের জন্য বিশেষজ্ঞদের তৈরি এক দিনের বিশেষ ডায়েট চার্ট বা গোটা একটি দিনের খাদ্য তালিকা দেওয়া হল যা আপনার শরীরে থাইরয়েড এর মাত্রা ঠিক রাখতে অনুসরণ করতে পারেন।
মর্নিং ড্রিঙ্ক- সকালে এক বড় চামচ কাঁচা হলুদের রস, এক চিমটি গোলমরিচ এবং এক ছোট চামচ নারকেল তেল নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। এটি প্রতিদিন খালি পেটে খাওয়া আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। এই পানীয়ের সমস্ত উপাদানই আপনার জন্য উপকারী, কারণ হলুদ রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গোলমরিচ হলুদ এর উপকারিতাকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং নারকেল তেলে ভালো ফ্যাট থাকে যা থাইরয়েডের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
সকালের পুষ্টিকর খাবার- ১০০ গ্রাম সবুজ মুগডাল নিয়ে এটি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন, ঘুম থেকে উঠে এর থেকে জল ঝরিয়ে নিন এবং একটি প্যানে জল, লবণ ও হলুদ দিয়ে এটি রান্না করুন কিন্তু এটি যেন সম্পূর্ণ রান্না করা না হয়। প্রায় ৮০% রান্না করতে হবে। একটি পৃথক প্যানে কাটা পেঁয়াজ, মাত্র ১ চা চামচ ঘি বা তেলে ভাজুন। এরপর আদা রসুনের পেস্ট, ধনেগুঁড়ো, দারচিনি গুঁড়ো, জিরা, গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে দিন। এই তরকারি রান্না করা মুগডাল ভালো করে মেশান, মিশ্রণটি আরও একটু ভাজুন। এরপর এতে তাজা ধনেপাতার সঙ্গে ছোট চামচ কুমড়োর বীজ যোগ করুন। মুগ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রোটিন তো রয়েছেই তবে এটি সহজে হজম হয় এবং এতে কোনও ফ্যাট নেই এবং মুগ থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য খুবই উপকারী।
ডিটক্স চা- এটি বানাতে ১ চা চামচ জিরা, ধনে বীজ, মৌরি বীজ, এবং আধা চা চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো মিশিয়ে এই বিশেষ চা তৈরি করুন। সব উপকরণ দেওয়া হয়ে গেলে পাঁচ কাপ জলে ফুটোতে দিন এটা আপনি দিনে একাধিকবার পান করতে পারেন।
দুপুরের খাবার- এক কাপ হলুদ মুগ ডালের ময়দা অথবা আধ কাপ ভেজানো মুগডাল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আধা কাপ ময়দা যোগ করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল যোগ করে একটি প্যান কেক তৈরি করে ফেলুন এবং এতে আরও স্বাদ আনার জন্য এই মিশ্রণটিতে অর্ধেক চা চামচ মৌরি এবং জিরার বীজের সঙ্গে স্বাদমতো লবণ দিয়ে দিন এবং আপনার প্যানকেক তৈরি হয়ে যাবে। সবজির মধ্যে আপনি যেগুলি বেছে নিতে পারেন সেগুলো হল- করলা, গাজর, কুমড়ো, পালং শাক, লেটুস, শালগম ইত্যাদি। রান্না করার সময় খুব অল্প পরিমাণে তেল বা ঘি দিয়ে একটি পেঁয়াজ ব্যবহার করুন। এবার এতে আদা-রসুন বাটা, জিরা ও ধনের গুঁড়ো, ১ চিমটি হিং, কালো মরিচ, স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিন। কেটে রাখা সবজি গুলো দিয়ে দিন, সবজি যাতে ওভারকুকড না হয়ে যায় তার দিকে বিশেষ নজর রাখুন। এই সবজি রান্না করার সময় জল যোগ করার প্রয়োজন হবে না। এই সবজিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই সহজেই হজম হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে আপনার বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। দুপুরের খাবারের পরেও আপনি আবার ডিটক্স চা খেতে পারেন এবং পরে ভেজানো বাদাম খেতে পারেন।
রাতের খাবার- আপনাকে সব সময় রাত্রি আটটার মধ্যেই রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। রাতের জন্য একটি সুপ তৈরি করে ফেলুন। এটি তৈরি করতে এক কাপ ভেজানো সবুজ মুগ ডাল বা হলুদ মুগ ডাল নিন, ২ কাপ সবজি যোগ করুন। এবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল দিয়ে লবণ, হলুদ, কাঁচা মরিচ যোগ করুন। ফোঁড়নের জন্য একটি প্যানে ১ চা চামচ জিরা, ১ চিমটি হিং নিন। এবার এতে অল্প কাঁচা পেঁয়াজ, আদা রসুনের পেস্ট যোগ করে ভালোভাবে ভাজুন। এবার এতে রান্না করা মুগ ও সবজির মিশ্রণটি দিয়ে দিন। এভাবে তৈরি হয়ে যাবে একটি ফাইবার সমৃদ্ধ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২ মাস ধরে প্রতিদিন এই খাদ্য তালিকা অনুসরণ করলে এর ফলাফল দেখতে পাবেন। এটি থাইরয়েড হরমোনের উন্নত করতে সাহায্য করে, অপরদিকে আপনার শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আবার মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মত আবেগকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, থাইরয়েডের রোগীকে অবশ্যই পরিশোধিত ময়দা, গম, মিষ্টি, দই, দুগ্ধজাত খাবার, জাঙ্কফুড এবং টক খাবার খাওয়া কমাতে হবে। কারণ এই জাতীয় খাবারগুলি থাইরয়েডের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। আমিষভোজীদের জন্য তিনি বিশেষ পরামর্শ— দুপুরে সপ্তাহে দুবার মাছের তরকারি, ডিমের তরকারি বা চিকেন কারিও খেতে পারেন।