ভার্চুয়াল আর বাস্তব জীবনের ফারাকেই কি পড়ুয়াদের মানসিক স্থিতি হারাচ্ছে?
প্রতীকী ছবি।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
শিক্ষকদের শাসন কিংবা বাবা-মায়ের কড়া কথা, নিত্যদিনের বিভিন্ন ঘটনায় হচ্ছে মন খারাপ। গ্রাস করছে অবসাদ (Mental Stress)। বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালে থাকা ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সমস্যা। আর তার জেরেই বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষক মহল থেকে মনোরোগ চিকিৎসকরাও। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একাধিক কারণে বাড়ছে এই সমস্যা। তবে, সচেতনতা, যত্ন ও নজরদারি রুখতে পারে বড় কোনও বিপদ!
কেন বাড়ছে মানসিক চাপ (Mental Stress)?
মনোরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের সবচেয়ে জটিল সময়। এই পর্বে শিশুমন থেকে পরিণত মনে উত্তরণ হয়। তাই চিরকাল এই সময়ে সন্তানকে দেখভালের জন্য বাড়তি খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ এই বয়সে শরীরে একাধিক নতুন হরমোন কাজ করা শুরু করে। ফলে, মস্তিষ্কে নানান রাসায়নিক কাজ হয়। আর তার জেরেই মানসিক অস্থিরতাও তৈরি হয়। আধুনিক সময়ের হাত ধরে এসেছে মোবাইল আর ইন্টারনেট। আর এর জেরেই স্কুল পড়ুয়াদের মুঠোতেও সমস্ত রকমের তথ্য। অনেক ক্ষেত্রে সেই তথ্যের অপব্যবহার তাদের বিপদ বাড়াচ্ছে। তাছাড়া, স্কুল পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ এখন ভার্চুয়াল জগতে অভ্যস্ত। একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাদের দিনের অধিকাংশ সময় কাটছে। সরাসরি বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমছে। পাশপাশি বসে কথা বলার পরিবর্তে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতেই বন্ধু হোক বা শিক্ষক, তাদের সঙ্গে কথা বলা, আলোচনা সবটাই হচ্ছে। আর দিনের পর দিন ভার্চুয়াল জগতে অধিকাংশ সময় কাটানোর জেরে অনেকেই বাস্তব বিমুখ হয়ে পড়ছে। ফলে, সামান্য রকম সমস্যা তাদের আরও বেশি অস্থির (Mental Stress) করে তুলছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর জেরেই বাড়ছে সিদ্ধান্তহীনতা। স্কুলের প্রজেক্ট সময়ে জমা দিতে না পারার মতো সমস্যা হোক কিংবা বাড়িতে দেরিতে ফেরার জন্য অভিভাবকের শাসন, সবেতেই আশাহত হয়ে পড়ছে। মনে এক ধরনের নিরাশা তৈরি হচ্ছে। আর তখনই আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে।
কীভাবে সতর্ক (Mental Stress) হবেন অভিভাবক?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রথম থেকেই সতর্ক থাকলে বড় বিপদ (Mental Stress) এড়ানো সম্ভব। তাদের পরামর্শ, শিশুকে প্রথম থেকেই অনুশাসন, নিয়মানুবর্তিতার পাঠ পড়ানো দরকার। অনেক ক্ষেত্রে ছোটরা সময় মতো খাবার না খেলে কিংবা নিয়মিত পড়তে না বসলে, বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু দিনের পর দিন সময় মতো কাজ না করার অভ্যাস, তাদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতার ঘাটতি তৈরি করে। যার জেরে, পরবর্তী কালে দায়িত্ব বাড়লেই চাপ তৈরি হয়।
নিয়মিত খেলাধূলার অভ্যাস তৈরি করা জরুরি বলেই পরামর্শ দিচ্ছেন পেরেন্টিং কনসালটেন্টদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল, হকির মতো দলবদ্ধ খেলার অভ্যাস থাকলে হারা এবং জেতার অভ্যাসও থাকবে। পাশপাশি যে কোনও কঠিন পরিস্থিতি অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার কাজ শিখতে পারবে। এর ফলে যেমন কোনও বিষয়ে ব্যর্থ হলেও আবার লড়াই করার মতো মানসিক জোর থাকবে, তেমনি শিখবে কীভাবে কোনও সমস্যায় পড়লে কাছের মানুষদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়।
পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল কোনও কাজ যেমন ছবি আঁকা, গান কিংবা নাচ শেখা দরকার। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের প্রশিক্ষণ শিল্পী মনের বিকাশ ঘটায়। এতে মানসিক অস্থিরতা কমে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সন্তান বড় হলে, তার সঙ্গে পরিবারের বিভিন্ন সমস্যা ভাগ করে নেওয়ার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। তার ফলে সন্তানের বাস্তব বোধ বাড়ে। মন পরিণত হয়। তাঁদের পরামর্শ, বাজার করা, রান্না করার মতো নিত্যদিনের ঘরের কাজ হোক কিংবা অফিসে সময় মতো পৌছতে যানজটের সমস্যা, জীবনের ছোট-বড় বাধার গল্প সন্তানের সঙ্গে ভাগ করলে, তারা বাস্তব জীবন বুঝতে শিখবে। নানান সমস্যা পেরিয়ে বেঁচে থাকা যায়, সেই বোধ, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে পরিণত করবে।
তবে, সন্তান অতিরিক্ত চুপচাপ থাকলে, দিনের অধিকাংশ সময় একা ঘরবন্দি থাকলে, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিলে সতর্ক হতে হবে বলেই জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসকরা। কারণ, সময় মতো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও চিকিৎসা বড় বিপদ আটকাতে পারে বলেই তাঁরা জানাচ্ছেন।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।