ডেঙ্গির কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে গিয়েই নাস্তানাবুদ
প্রতীকী ছবি।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
ডেঙ্গি হলেই সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ! এক ফোনেই পাওয়া যাবে প্রশাসনের সাহায্য! কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্ত জানাচ্ছেন, বিজ্ঞাপনেই আটকে আছে প্রতিশ্রুতি! তাই ডেঙ্গি মোকাবিলার কন্ট্রোল রুম নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন!
কী আশ্বাস দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন?
স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গি মোকাবিলায় রয়েছে কন্ট্রোল রুম। দিনরাত সেখানে থাকবেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। ডেঙ্গি সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যায় কন্ট্রোল রুমে ফোন করতে পারেন রাজ্যবাসী। আক্রান্ত কী করবেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য থেকে প্লেটলেট কোথায় পাওয়া যাবে কিংবা হাসপাতাল সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য জানতে পারবেন। কন্ট্রোল রুম থেকে সাধারণ মানুষ ডেঙ্গি (Dengue) সংক্রমণ রুখতে যে কোনও রকম সাহায্য পাবেন।
কন্ট্রোল রুম নিয়ে কী অভিযোগ উঠছে?
বাস্তবে পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম বলে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি আক্রান্তদের হয়রানি বিস্তর। কিন্তু প্রশাসনকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। গিরিশ পার্কের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের অতনু রায়ের অভিযোগ, দিন কয়েক আগে তাঁর স্ত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। প্লেটলেট এক লাখের নীচে নেমে গিয়েছিল। চিকিৎসক রক্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু একাধিক ব্লাড ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেও প্লেটলেট পাওয়া যাচ্ছিল না। স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমে ফোন করলে তারাও কোনও দিশা দেখাতে পারেনি। কোথায় প্লেটলেট পাওয়া যেতে পারে, সেই তথ্যও তারা জানায়নি। পরে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে প্লেটলেট পাওয়া যায়।
দমদমের বাসিন্দা বছর তিরিশের পারমিতা সাহার অভিযোগ, ডেঙ্গি (Dengue) মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুমে ফোন করলেও কাউকে পাওয়া যায় না। কর্মীরা অধিকাংশ সময়েই ফোন ধরেন না। এমনকি ফোন ধরলেও তাঁরা সমস্যা জানার আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তাঁর অভিযোগ, কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর ষাটোর্ধ্ব বাবা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি ছিল। কিন্তু একাধিক সরকারি হাসপাতাল জানায়, শয্যা ফাঁকা নেই। কোথায় ভর্তি করা যেতে পারে, সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতেই স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করেন পারমিতা। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, কন্ট্রোল রুম সমস্যা শুনে ফোন কেটে দেয়। বারবার ফোন করলেও ঠিকমতো উত্তর পাননি।
পুরসভাও নির্বিকার
পারমিতা সাহা কিংবা অতনু রায় ব্যতিক্রম নয় বলেই জানাচ্ছেন রাজ্যের অধিকাংশ ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্তের পরিবারের ভুক্তভোগীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি রুখতে পুরসভাকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় জল জমছে। বারবার জানিয়েও তা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। তার উপর আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য দফতরের সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ছে চিকিৎসার খরচ। সব মিলিয়ে হয়রানি বাড়ছে সাধারণ মানুষের।
কী বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা?
কন্ট্রোল রুম নিয়ে অভিযোগ মানতে নারাজ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি (Dengue) সমস্যা দেশ জুড়ে হচ্ছে। অযথা ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করা ঠিক নয়। রাজ্যে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কখনও হয়তো কেউ অসুবিধায় পড়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সাহায্য পাচ্ছেন। দরকারে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা নিজেরাই যোগাযোগ করছেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।