১০ থেকে ১৬ জুন পালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল মেন হেলথ উইক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ কী?
প্রতীকী চিত্র।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
জুনের ১০ থেকে ১৬ তারিখ বিশ্ব জুড়ে 'ইন্টারন্যাশনাল মেন হেলথ উইক' (International Men's Health Week) পালন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর অসচেতনতার জেরে সময়ের আগে মারা যান কয়েক লাখ মানুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষেরা ঠিকমতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান না। আর তার জেরেই নানান জটিল রোগে তাঁরা আক্রান্ত হন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। তাই এ বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, পুরুষদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিয়েই আরও বেশি সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হবে। যাতে রোগের চিকিৎসার দরকার না হয়। রোগের প্রকোপ আগেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই দরকার ঠিকমতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ভারতের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই ভারতীয় পুরুষদের মধ্যেও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তার জেরেই সময়ের আগে অনেক সময় প্রাণ সংশয় দেখা দিচ্ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে যে সব রোগের প্রকোপ বেশি, সেগুলো অধিকাংশ জীবন যাপন অস্বাস্থ্যকর হওয়ার জন্য হচ্ছে। জেনে নিন, কোন রোগের প্রকোপ বাড়ছে ভারতীয় পুরুষদের?
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। অধিকাংশ ভারতীয় পুরুষদের সময়ের আগে মৃত্যুর অন্যতম কারণ ফুসফুসের ক্যান্সার। দেশজুড়ে নানান ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। তবে পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার প্রথম সারিতে রয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসচেতনতার কারণে অনেক দেরিতে রোগ নির্ণয় হয়। তাই চিকিৎসা শুরু করতেও সময় চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তবে, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এই রোগের অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, পৃথিবী জুড়ে বায়ু দূষণ বাড়ছে। তাই সব বয়সের মানুষের ফুসফুসের নানান সংক্রমণ রোগের দাপট বাড়ছে। তবে, ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ তামাক সেবন। খুব কম বয়স থেকেই ভারতীয় পুরুষদের একাংশ সিগারেট, বিড়ির মতো তামাকজাত দ্রব্যের সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। আর এর জেরেই ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো রোগের শিকার হচ্ছেন।
ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের সমস্যা বাড়ছে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় পুরুষদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদ সমস্যা। আর অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনকেই এই জন্য দায়ী করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ভারতীয় পুরুষ খাবারে অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার, অতিরিক্ত মশলাজাতীয় খাবার খাওয়া, প্রাণীজ প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ায় অভ্যস্থ। আর এর জেরেই অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে হৃদপিণ্ডের উপরে। তাই ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে হৃদরোগের (International Men's Health Week) ঝুঁকি বাড়ছে।
খুব কম বয়স থেকেই ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে কিডনির নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যার জেরে স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিঘ্ন ঘটছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস। ভারতীয়দের মধ্যে ডায়াবেটিস বাড়ছে। শিশুদের মধ্যেও টাইপ ২ ডায়াবেটিস বাড়ছে। আর এর জেরেই কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
ভারতীয় পুরুষদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশপাশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতনতা জরুরি বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় পুরুষদের হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ বা অবসাদের মতো সমস্যা। আধুনিক জীবন যাপনে অনেকেই ব্যস্ততার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। পাশপাশি মানসিক চাপ বাড়ছে। একাকিত্বও বাড়ছে। আর তার জেরেই মানসিক স্বাস্থ্যে (International Men's Health Week) প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, মানসিক স্বাস্থ্যে বিপর্যয়ের জেরেই ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তলানিতে। ঠিকমতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন না। আর তার জেরেই অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা আরও বাড়ানো জরুরি। কর্মস্থলে আরও বেশি করে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জোর দিতে হবে। যাতে বছরে অন্তত একবার ঠিকমতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তাতে রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা বোঝা যাবে। হৃদরোগের ঝুঁকি কতখানি সে বিষয়েও আন্দাজ করা যাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে বড় বিপদ এড়ানো যাবে। তবে পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ধূমপানের মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।