'ওয়ার্ল্ড লিভার ডে'-তে কী বললেন বিশেষজ্ঞ মহল?
প্রতীকী ছবি।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
হজমের গোলমাল নিত্যসঙ্গী? প্রায় দিন খাওয়ার পরে বমি হয়? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সতর্ক হতে হবে। পরবর্তীতে বাড়তে পারে বিপদ। লিভারের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। নন অ্যালকোহলিক লিভারের অসুখ ভারতে আরও বাড়ছে বলেই জানাচ্ছে একাধিক সর্বভারতীয় সমীক্ষা। দেশের সাম্প্রতিক এক স্বাস্থ্য সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, নন অ্যালকোহলিক লিভারের রোগ এ দেশে কয়েকগুণ বেড়েছে। ১৯৯০ সালে এ দেশে নন অ্যালকোহলিক লিভারের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০ লাখ। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, এখন দেশে ৯৮ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। মদ্যপান না করেও লিভারের একাধিক রোগে ভুগছেন পুরুষ, মহিলা। এমনকী শিশুরাও লিভারের নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে (World Liver Day)। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রথম থেকেই সতর্কতা জরুরি। তবেই লিভারের রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ঠিকমতো খাদ্যাভ্যাস থাকলে এই রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসক মহল।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মদ্যপানে লিভারের রোগের বিপদ বাড়ে। এই কথা অনেকেই জানেন। সে নিয়ে সচেতনতাও রয়েছে। কিন্তু মদ্যপান না করেও লিভারের একাধিক রোগ হতে পারে। আর তার জন্য কিছু খাদ্যাভ্যাস দায়ী। একথা অবশ্য অনেকেই জানেন না। তাই দেশজুড়ে নন অ্যালকোহলিক লিভারের রোগের প্রকোপ বাড়ছে (World Liver Day)। এমনকী শিশুরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ওয়ার্ল্ড লিভার ডে উপলক্ষে একাধিক কর্মশালায় চিকিৎসকেরা এই বিষয় সম্পর্কে সচেতন করেছেন।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, চিনি লিভারের জন্য ক্ষতিকারক। তাঁরা জানাচ্ছেন, সরাসরি চিনি খাওয়ার অভ্যাস শরীরে একাধিক রোগের কারণ হয়। পাশপাশি ক্যান্ডি, ললিপপ জাতীয় খাবার, যা মূলত চিনি দিয়েই তৈরি করা হয়, সেগুলোও লিভারের ক্ষতি করে। তাই নিয়মিত অতিরিক্ত পরিমাণ চিনি কিংবা ক্যান্ডি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, তা বদল জরুরি। না হলে লিভারের অসুখ হতে পারে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দেশজুড়ে নন অ্যালকোহলিক লিভারের রোগ বাড়ার অন্যতম কারণ এই অতিরিক্ত তেলমশলা জাতীয় খাবারের অভ্যাস। তরুণ প্রজন্মের একাংশ বিরিয়ানি, মোগলাই কিংবা চাইনিজ খাবারে অভ্যস্ত। জলখাবার কিংবা সন্ধ্যার খাবার বলতে অনেকেই বোঝে ফাস্টফুড। এমনকী কলেজ বা অফিস ফেরত খাবারের তালিকায় থাকে চাউমিন, এগরোল কিংবা পিৎজা, ফ্রেঞ্চফ্রাইয়ের মতো খাবার। এই ধরনের খাবার একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। এগুলো লিভারে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই রকম অতিরিক্ত তেলমশলা জাতীয় খাবারে 'না' বলা জরুরি।
চিকিৎসকদের একাংশের পরামর্শ, যে কোনও ধরনের বেকড করা খাবার অতিরিক্ত খেলে লিভারের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। তাই কুকিজ, পেস্ট্রির মতো খাবারে লাগাম জরুরি। নিয়মিত কখনই এই ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ (World Liver Day)।
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মদ্যপানে লিভারের ক্ষতি হয়, এই নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সোডামিশ্রিত নরম পানীয় যে একই রকম ক্ষতিকারক, সে নিয়ে সচেতনতা খুবই কম। তাই গরম হোক কিংবা যে কোনও উৎসব উদযাপনের আনন্দে, এই ধরনের সোডামিশ্রিত ঠান্ডা পানীয় লাগাতার খাওয়া হয়। এমনকী পরিবারের খুদে সদস্যেও এই ধরনের পানীয় খায়। তাই লিভারের রোগের বিপদ বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কিছু খাবার বাদ দেওয়ার পাশপাশি লিভার সুস্থ রাখতে কিছু খাবার নিয়মিত খাওয়া জরুরি। তবেই রোগের ঝুঁকি কমবে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, নিয়মিত সবুজ সবজি খেতে হবে। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রাণীজ প্রোটিনের তুলনায় সবজির থেকে শরীর প্রোটিন পেলে লিভারের রোগের ঝুঁকি কমে। কারণ সবুজ সবজি থেকে পাওয়া প্রোটিন সহজপাচ্য হয়। তাই পালং শাক, লাউ, ব্রোকলির মতো সবজি নিয়মিত খাওয়া জরুরি। এতে লিভার ভালো থাকে।
তাছাড়া নিয়মিত লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ লেবুতে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে (World Liver Day)।
প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন লিভার সুস্থ রাখতে শরীরে পর্যাপ্ত জল জরুরি। তাই নিয়মিত ৫-৬ লিটার জল খেতে হবে। পাশপাশি ডাবের জল, ফলের রস খেলে লিভারের রোগের ঝুঁকি কমে। কারণ এগুলো শরীরে জলের চাহিদা মেটায়। আবার প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের জোগান দেয়। ফলে লিভার সুস্থ থাকে।
লিভার সুস্থ রাখতে এবং কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ বাদামে থাকে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান। এগুলো লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত মাছ লিভারের জন্য উপকারী। তাই লিভার সুস্থ রাখতে বড় মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ (World Liver Day)।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।