আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসে কী সতর্কবার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা?
প্রতীকী চিত্র।
তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
গরমের দাপট চলছেই। আর তার সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন বিপদ! ম্যালেরিয়ার (World Malaria Day 2024) দাপটও বাড়ছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই গরমেও কলকাতা ও তার আশপাশের জেলায় অনেকেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সচেতনতা থাকলে বড় বিপদ এড়ানো যাবে।
কেন হয় ম্যালেরিয়া?
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া মশাবাহিত রোগ। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া হয়। এই মশা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে এই রোগ সংক্রমণ হয়। ম্যালেরিয়াকে প্রথম পর্যায়ে চিহ্নিত করতে হবে। তবেই এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া World Malaria Day 2024) নিয়ে সতর্ক আর সচেতনতা না বাড়লে এই রোগ মহামারির আকার নিতে পারে। তাই এই রোগ নিয়ে জনসচেতনতা জরুরি।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া রোগের নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ রয়েছে। সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। তবেই এই রোগ মোকাবিলা করা সহজ হবে। প্রথমত, ম্যালেরিয়া আক্রান্তের প্রচণ্ড জ্বর হয়। গায়ের তাপমাত্রা বাড়ার পাশাপাশি মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অত্যাধিক ঘাম হতে থাকে। আবার শরীরে মারাত্মক ক্লান্তিবোধ বাড়ে। দূর্বল লাগে। এক ধরনের যন্ত্রণাও অনুভব হয়। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক থাকা দরকার। জ্বরের সঙ্গে এই ধরনের কোনও উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত রক্তপরীক্ষা জরুরি। রোগ নির্ণয় করলে তবেই চিকিৎসা শুরু করা যাবে। তাঁরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়ার ওষুধ রয়েছে। সময় মতো চিকিৎসা শুরু করলে বড় বিপদ এড়ানো যায়। পাশপাশি পরিবারের কেউ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলে, অন্যদের বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ এই রোগের সংক্রমণ ক্ষমতা যথেষ্ট।
ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হলে খাবারে বাড়তি নজরদারি জরুরি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আক্রান্তের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য চিকিৎসার পাশপাশি পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস থাকা দরকার। তা না হলে এই রোগে শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়। ফলে অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার মতো বিপদও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত তেলমশলা জাতীয় খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। অন্তত কয়েক মাস এই ধরনের খাবারে রাশ টানতে হবে। কারণ ম্যালেরিয়া হলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও পাকস্থলীতে। অন্ত্রেও প্রভাব পড়ে। ফলে হজম শক্তি কমে। তাই কী ধরনের খাবার খাওয়া হবে, সেটা নির্বাচন জরুরি। আবার পুষ্টিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়। তাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম জাতীয় প্রাণীজ প্রোটিন কখনই বাদ দেওয়া যাবে না। তাই স্ট্রু, স্যুপ জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডিম সিদ্ধ নিয়মিত খেতে হবে। যাতে সহজে এই প্রাণীজ প্রোটিন হজম হয়। আবার শরীরের পেশি শক্তিশালী হয়। দুর্বলতা কমে।
পাশপাশি, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে ভিটামিন বি এবং সি জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে দিতে হবে। লেবু, বিট জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। তাতে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে মোকাবিলা সহজ হবে। তবে ময়দা ও পনির জাতীয় খাবারে রাশ টানতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ফাইবার জাতীয় খাবার অনেক সময়েই হজম হয় না। তাই অন্য ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে (World Malaria Day 2024)।
কীভাবে ম্যালেরিয়া রুখবেন?
পতঙ্গবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, ম্যালেরিয়া রুখতে প্রয়োজন প্রশাসনের সক্রিয়তা ও জনসচেতনতা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ম্যালেরিয়া আটকানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। নিয়মিত এলাকা পরিষ্কার রাখতে হবে। জল জমতে দেওয়া চলবে না। পার্ক হোক বা বাগান, অপরিচ্ছন্ন থাকলেই মশা বংশবিস্তার করবে। আর মশার উপদ্রব বাড়লে, ম্যালেরিয়ার দাপট বাড়বে। তাই এলাকা পরিষ্কার করা জরুরি। কোনও এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত একাধিক হলে, সেই এলাকায় প্রশাসনিক স্তর থেকে সতর্কতা জারি করতে হবে। কারণ, তাতে এলাকাবাসী সচেতন হবেন। মশারি টাঙিয়ে ঘুমোবেন, জ্বর হলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন। এই বাড়তি সতর্কতা প্রচারের দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবেই ম্যালেরিয়ার (World Malaria Day 2024) দাপট কমানো সম্ভব।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।