মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গি (Dengue) জ্বর এডিস ইজিপ্টাই নামক মশাবাহিত রোগ। এই জ্বর সাধারণত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় (Pacific ocean) দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় দেশগুলিতে দেখা যায়। মূলত বর্ষাকালে জমা জলে বংশ বিস্তার করে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা। ডেঙ্গি জীবাণুবাহী এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশা কামড়ালে, আক্রান্ত ব্যক্তি ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হন। অনেক সময় ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তিকে এডিস মশা (Aedes Mosquito) কামড়ালে, সেই মশাটিও ডেঙ্গি জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। চিকিৎসকদের মতে, সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সাধারণত ১.৫ লাখ থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত প্লেটলেট থাকে। কিন্তু ডেঙ্গি আক্রান্ত ব্যক্তির প্লেটলেট নেমে যায় ৫০ হাজারের নীচে। তাই ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর জীবনে ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান? খান এই চার ধরণের খাবার
ডেঙ্গি জ্বরের লক্ষণ: সাধারণত মশার কামড়ের ৪ থেকে ৭ দিন পর ডেঙ্গির লক্ষণ প্রকট হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা ১০ দিনও হতে পারে। জ্বর হওয়ার ৪ থেকে ৫ দিন পর শরীরজুড়ে ত্বকে র্যাশ দেখা যায়। এটা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গি জ্বরে তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। মাংশপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। ব্যথার তীব্রতার জন্য মনে হয় এই বুঝি হাড় ভেঙে গেল। তাই এই জ্বরের আর এক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার' (Break Bone Fever)।
ডেঙ্গি জ্বরের আর একটি প্রকার হল হেমোরেজিক জ্বর (Hemorrhagic Fever) । এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গি জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। মলত্যাগের সময় রক্তক্ষরণ হতে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে অসময়ে ঋতুস্রাবের মতো ঘটনাও ঘটে।
ডেঙ্গি জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গি শক সিনড্রোম। এর ফলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া,নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়, শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়। এমন আরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন রোগী।
ডেঙ্গি রোগ প্রতিরোধের উপায়:
ডেঙ্গি জ্বর প্রতিরোধের জন্য ভারতে কোনও ভ্যাকসিন মেলে না। ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া নামে একটি ভ্যাসসিন আবিষ্কার হলেও এর ব্যবহার খুবই কম। এডিস মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচলেই ডেঙ্গির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই ডেঙ্গির হাত থেকে বাঁচতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
- জলের পাত্র ঢাকা রাখা উচিত।
- প্রতি সপ্তাহে বাড়ির যেসব পাত্রে জল জমে থাকে, সেগুলি পরিষ্কার করতে হবে। যেমন বালতি, ফুলের টব, নারকেলের খোলা। যেসব জায়গায় জল জমে, সেসব জায়গাও পরিষ্কার করতে হবে।
- মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচতে ফুল হাতা জামাকাপড় পরা প্রয়োজন।
- মশা তাড়ানোর ধূপ ও মশারি ব্যবহার করতে হবে।
- শরীরে মশা কামড় প্রতিরোধক ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন।
ডেঙ্গির প্রতিকার:
- ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
- যথেষ্ট পরিমাণে জল, শরবত, ডাবের জল ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। রোগীর খাদ্যতালিকায় খিচুড়ি, যব এবং মসুর ডালের মতো উচ্চফাইবার যুক্ত খাবার রাখা প্রয়োজন।
+ There are no comments
Add yours