ল্যাটা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে ডাকাতি করতে যেত 'রঘু ডাকাত'?
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বাংলার কোনও ডাকাত দলের সর্দারের নাম বলুন তো? যে কাউকে এই প্রশ্ন করলে মনের মধ্যে ভেসে ওঠে ‘রঘু ডাকাত’ নাম। ‘রঘু ডাকাত’ নামে কত উপন্যাস, কত গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এক কথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, এই নামটি একটি ‘মিথ’ হয়ে রয়েছে। তবে জানেন কি রঘু ডাকাত মাত্র একজন ছিল না। বর্ধমান থেকে হুগলি, কলকাতা থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনার জঙ্গলগুলিতে একাধিক রঘু ডাকাতের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রত্যেক রঘু ডাকাত-ই মা কালীর (Goddess Kali) ভক্ত। কালী আরাধনার (Kali Puja) পরেই তারা ডাকাতি করতে যেত।
‘রঘু ডাকাত’ সম্পর্কে নানা রোমাঞ্চকর গল্প
খগেন্দ্রনাথ মিত্র এবং যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তর লেখা থেকেই ‘রঘু ডাকাত’ সম্পর্কে নানা রোমাঞ্চকর তথ্য পাওয়া যায়। যেমন, নৈহাটির রঘু ডাকাতের কথা। সে সময় নৈহাটি থানার দারোগা ছিলেন দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দারোগাবাবু অনেক চেষ্টা করেও বাগে আনতে পারছিলেন না রঘু ডাকাতকে। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, যেভাবেই হোক রঘু ডাকাতকে তিনি ধরবেন। হঠাৎ করেই কিছুদিন পর দারোগাবাবুর কাছে একটি চিরকূট এল। তাতে লেখা রয়েছে, ‘খুব শীঘ্রই আপনার সঙ্গে আমার দেখা হবে দারোগাবাবু’। তলায় লেখা, ইতি আপনার সেবক রঘু। এর বেশ কিছুদিন পর এলাকার জমিদারবাবুর নাতির অন্নপ্রাশন। আমন্ত্রিত হয়েও উপস্থিত থাকতে পারেননি দারোগাবাবু। একদিন দুপুরে আহারের পর নিজের চেয়ারে বসে ভাত ঘুম দিচ্ছিলেন তিনি। সে সময় হঠাৎ এক জেলে উপস্থিত হল দুই হাতে দুটো মাছ নিয়ে এবং নিজের ধুতিতে বেঁধে রাখা এক টুকরো কাগজ বের করে দারোগাবাবুকে দিল। যেখানে লেখা ছিল, ‘‘আমার নাতির অন্নপ্রাশনে আপনি আসতে পারেননি, তাই আপনাকে দুটো বড় মাছ পাঠালাম।’’ তলায় ছিল জমিদারবাবুর স্বাক্ষর। বেশ কিছু দিন পর আবার একটি চিরকূট পেলেন দারোগাবাবু। তাতে লেখা রয়েছে, ‘‘আপনার সঙ্গে দেখা করে ভালো লাগল, মাছ দুটো কেমন খেলেন?’’
মা সারদার পথ আটকেছিলেন রঘু ডাকাত?
রঘু ডাকাতের প্রচলিত কাহিনি থেকে জানা যায়, তাঁর বাবাকে নীলকর সাহেবরা হত্যা করেছিল। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নাকি সে ডাকাত হয় এবং নীলকর সাহেবদের লুট করে তা গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করত। অর্থাৎ বাঙালির রবিনহুড বলতে গেলে সেটা রঘু ডাকাত-ই। জনশ্রুতি রয়েছে, হুগলির রঘু ডাকাত নাকি একবার সারদা মায়ের পথ আটকেছিল সিঙ্গুরের কাছে। এরপর ভীষণ দর্শনা মা কালী প্রকট হলে, রঘু ডাকাত সারদা মায়ের কাছে ক্ষমা চায়। মাকে রাতে চালকড়াই ভাজা খেতে দেয়।
রঘু ডাকাতের কালীপুজোয় নরবলি!
অপর এক রঘু ডাকাত বারাসতের জঙ্গলে থাকত বলে জানা যায়। তার কালীপুজো (Kali Puja) আজও ধুমধাম করে হয়। বারাসত শহর থেকে দু'কিলোমিটার দূরে কাজিপাড়া অঞ্চলে এই পুজো হয়, বটগাছের ঝুরি দ্বারা ঘেরা ভগ্ন এক মন্দিরে। স্থানীয়রা এই কালীকে জাগ্রত বলে মনে করেন। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কেতুগ্রামের অট্টহাস সতীপীঠেও নাকি রঘু ডাকাত কালীপুজো করত। তারপর ডাকাতির উদ্দেশ্যে সংলগ্ন এলাকাগুলিতে অভিযান চালাত। জনশ্রুতি অনুযায়ী, রঘু ডাকাত বৈষ্ণব ছিল। তবুও সে শক্তির উপাসনা করত। সাধক রামপ্রসাদের সঙ্গেও রঘু ডাকাতের সাক্ষাতের কথা প্রচলিত রয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে, রঘু ডাকাতের কালীপুজোতে নরবলি হত। তারপরে রঘু ডাকাত ল্যাটা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে ডাকাতি করতে যেত।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।