ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশীতে মুক্তি লাভের আশায় পুজো করা হয়।
ভূত চতুর্দশী
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi 2022) তিথিতে পালিত হয় ভূত চতুর্দশী। এই তিথিকে আবার অনেকে নরক চতুর্দশী বলেও জানেন। দীপাবলির একদিন আগে ও ধনতেরসের একদিন পর ভূত চতুর্দশী পালিত হয়। এই তিথিটি ছোট দীপাবলি, রূপ চতুর্দশী বা নরকা পুজো নামেও পরিচিত। এদিন মৃত্যুর দেবতা যম ও কৃষ্ণের পুজো করা হয়। অকাল মৃত্যুর ভয় থেকে বাঁচতে নরক চতুর্দশীতে পুজো করা হয়। কার্তিক কৃষ্ণ চতুর্দশীতে, দীপাবলির এক দিন আগে এই পুজো হলেও চলতি বছর তিথি গোলযোগে ২৪ অক্টোবর দীপাবলির দিনেই ভূত চতুর্দশী পালিত হবে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথি ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ৩ মিনিট থেকে শুরু হবে এবং ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৫টা ২৭ মিনিটে এই তিথি শেষ হবে। এ বছর উদায় তিথির কারণে ২৪ অক্টোবর ভূত চতুর্দশী পালিত হবে।
আরও পড়ুন: দীপাবলিতে ফিরছিলেন বাড়ি, মধ্যপ্রদেশে বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু ১৫ জন শ্রমিকের
ভূত চতুর্দশী বা নরক চতুর্দশীতে মুক্তি লাভের আশায় পুজো করা হয়। এ দিন সূর্যোদয়ের আগে উঠে স্নান করার প্রথা রয়েছে। মনে করা হয় এর প্রভাবে যমলোকের দর্শন করতে হয় না। বিষ্ণু পুরাণ ও শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ অুযায়ী নরকাসুর নামক এক অসুর নিজের শক্তির দ্বারা দেবী-দেবতা ও মনুষ্যদের অতিষ্ট করে তুলেছিল। ১৬ হাজার স্ত্রী এবং সাধুকে বন্দি বানিয়ে রেখেছিল নরকাসুর। এরপর মুনি- ঋষিরা কৃষ্ণের দ্বারস্থ হন। নরকাসুরের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেন কৃষ্ণ। কিন্তু শুধু স্ত্রীর হাতে মৃত্যুর অভিশাপ পেয়েছিল নরকাসুর। এ কারণে কৃষ্ণ নিজের স্ত্রী সত্যভামাকে সারথী করেন এবং তাঁর সাহায্যে নরকাসুরের বধ করেন। যে দিন নরকাসুরের বধ হয়েছিল সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথি। তাই তিথিকে নরক চতুর্দশী বলা হয়।
আবার এই তিথিটিকে ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi 2022) বলার পিছনের ব্যখ্যা হল, মনে করা হয় এই তিথিতে সন্ধ্যা নামলেই অশরীরী প্রেতাত্মারা বেরিয়ে আসে। তাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে এই তিথিতে গৃহস্থ বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। আবার আর একটি প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই তিথিতে চৌদ্দ পুরুষের আত্মার আসা যাওয়া থাকে। মনে করা হয় তাঁদের যাতায়াতের পথ আলোকিত রাখার জন্যই প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করার প্রথা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ভূত চতুর্দশীর দিনে ১৪ শাক খাওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। শাস্ত্র মতে এদিন ওল, কেও, বেতো কালকাসুন্দা, নিম, সরষে শালিঞ্চা বা শাঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ঘেঁটু বা ভাঁট, হিঞ্চে, শুষনি, শেলু শাক খাওয়া হয় এদিন। এই শাক খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কিছু ব্যাখ্যাও রয়েছে। ১৪ শাক ঋতু পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন রোগ মোকাবিলায় সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়ায়।
তবে শাস্ত্র মতে, ১৪ শাক খেয়ে সন্ধেবেলা ১৪ প্রদীপ জ্বালালে দূরাত্মা ও অন্ধকার দূর হয়। অন্য দিকে অশুভ আত্মাদের থেকে রক্ষা পেতে ভূত চতুর্দশী তিথিতে মন্ত্র জপের নিয়ম রয়েছে। মন্ত্রটি হল, ‘শীতলঞ্চ সমাযুক্ত সকণ্টক দলান্বিত। হরপাপ সপামার্গে ভ্রাম্যমাণঃ পুনঃ পুনঃ’।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।