Nabin Bhaskar: দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর দুই বোনের কথা জানেন?
দক্ষিণেশ্বর মন্দির, নবীন ভাস্করের তৈরি তিনটি মা কালীর বিগ্রহ (ইনসেটে) (সংগৃহীত ছবি)
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দক্ষিণেশ্বর (Dakhineswar) মন্দিরের মা ভবতারিণীকে দর্শন করতে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করেন। কিন্তু, এই মূর্তি তৈরি হওয়ার আগে আরও দুটি মূর্তি তৈরি করেছিলেন শিল্পী নবীন ভাস্কর। মা ভবতারিণীর সঙ্গে আজও কলকাতায় পূজিত হন আরও দুটি মূর্তি। সেই মূর্তি দুটি কোথায়? কী নামে ডাকা হয় তা অনেকের কাছে অজানা। মা ভবতারিণীসহ তিনটি কষ্টি পাথরের মূর্তিকে তিন বোন বলা হয়। তবে, তাঁদের বোন বলার নেপথ্যে কী কারণ আছে? এই ঘটনার বিষয়ে জানতে গেলে একটু ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে হবে।
জানা গিয়েছে, কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণার পুজো দিতে যাচ্ছিলেন কলকাতার (Dakhineswar) জানবাজারের রানি রাসমণি। ঠিক যাত্রার প্রাক্কালেই মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। স্বপ্নে স্বয়ং মা কালী রানিমাকে কাশিধামে না গিয়ে বরং কলকাতাতেই গঙ্গাতীরে একখানা মন্দির নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। মায়ের নির্দেশ পেয়ে জমি খোঁজা শুরু করলেন। অবশেষে বরানগরের পাশে দক্ষিণেশ্বর গ্রামে গঙ্গার ধারে মিলল জমি। সেই জমিতেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে রানিমা মন্দির নির্মাণে মন দিলেন। কিন্তু শুধু মন্দির হলেই তো হবে না। মায়ের মূর্তিও তো গড়াতে হবে। কার ওপর দায়িত্ব দেবেন এই মূর্তি নির্মাণের? শুরু হল খোঁজ। শেষ পর্যন্ত বরাত পেলেন কাটোয়ার কাছে দাইহাঁটের নবীন ভাস্কর। তিনি তখন সদ্য যুবা হলেও তাঁর শিল্পনৈপুণ্যতার প্রশংসা সারা কলকাতা শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল। জনশ্রুতি আছে, কেবলমাত্র পেশাদার ভাস্কর হিসেবে নবীন এ কাজ করেননি। যেরকম ভক্তি থাকলে মায়ের এমন রূপ ফুটিয়ে তোলা যায়, সেরকম ভক্তিভাবই ছিল তাঁর কাজে। একজন সাধকের মতোই এ কাজে মগ্ন হয়েছিলেন তিনি। বিহার থেকে এল বিশেষ কষ্টি পাথর। কলকাতায় এসে নবীন ভাস্কর সেই পাথর কেটে তৈরি করলেন মূর্তি।
জানা যায়, সে সময় হবিষ্যান্ন খেয়ে নিষ্ঠা সহকারে মূর্তি তৈরির কাজ শেষ করেছিলেন নবীন। কিন্তু কাজ যেন শেষ হয়েও শেষ হল না। মূর্তি নির্মাণ হয়ে গেলে রানি রাসমণি (Dakhineswar) মাতৃমূর্তি দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু, মূর্তি পছন্দ হয়নি তাঁর। আসলে সেই মূর্তিটি দক্ষিণেশ্বরের গর্ভগৃহের বেদীর তুলনায় ছোট হয়েছিল। এরপর আবার মূর্তি নির্মাণের কাজে হাত লাগালেন নবীন। হাত লাগালে তাতেও দেখা দিয়েছিল আর-এক সমস্যা। সেই মূর্তিটি আবার গর্ভগৃহের মাপের থেকে কিঞ্চিৎ বড় হয়ে গিয়েছিল। তাই পুনরায় মূর্তি তৈরি শুরু করেছিলেন নবীন। তবে তৃতীয়বার যে মূর্তি নির্মিত হল, আমরা আজও সেই রূপেই মায়ের দর্শন পাই দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে। এই মা'ই হলেন জগদীশ্বরী কালীমাতা ভবতারিণী ঠাকুরানী।
জানা যায়, নবীন ভাস্কর (Dakhineswar) একই কষ্টি পাথর খণ্ড থেকেই মোট তিনটি মূর্তি তৈরি করেছিলেন। তবে, আর দুটি মূর্তি কোথায় আছে? শোনা যায়, নবীন ভাস্কর নির্মিত সবচেয়ে বড়ো মূর্তিটি হেদুয়ার গুহ বাড়িতে নিস্তারিণী কালী নামে পূজিতা হন। আর সবচেয়ে ছোট মূর্তিটি বরানগরের প্রামাণিক ঘাট রোডে দে প্রামাণিক পরিবারে ব্রহ্মময়ী কালী নামে পূজিতা হচ্ছেন। জনশ্রুতি আছে, এই ব্রহ্মময়ী কালীকে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ ছোট মাসি এবং নিস্তারিণী কালীকে বড় মাসি বলে ডাকতেন। জানা গিয়েছে, মা ভবতারিণীর মূর্তি নির্মাণের পর থেকেই নবীন ভাস্কর সারা বাংলাতে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।