সিউড়ির বসাক বাড়ির দুর্গাপুজো মানেই দুই বাংলার মিলন ক্ষেত্র
সিউড়ির বসাক বাড়ির দুর্গা প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বীরভূমের সিউড়ি শহরের বুকে বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোগুলির (Durga Puja 2023) মধ্যে অন্যতম সিউড়ির বসাক বাড়ির দুর্গাপুজো। শহরের ঐতিহ্যপূর্ণ পুজোর মধ্যে এটি একটি। সব থেকে নজর কাড়ে যে বিষয়টি, সেটি হল এই দুর্গাপুজো মানেই দুই বাংলার মিলন ক্ষেত্র। এর রীতিনীতি পালিত হয়ে আসছে ওপার বাংলার রীতিনীতি মেনেই। পঞ্চমীর দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো।
কত বছরের পুরনো এই দুর্গাপুজো? কী এর ইতিহাস?
আনুমানিক কত বছরের পুরনো এই বসাক বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023), তা এখনও সঠিক জানা যায়নি। সিউড়িতে বসাক বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয় বসাক পরিবারের তৎকালীন প্রধান যামিনী বসাকের হাত ধরে। আজ এই পুজোর ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলেছেন তাঁরই বংশধররা। পরিবারের বর্তমান সদস্য মৌমিতা বসাক জানান, এই পুজোর ইতিহাস বহু বছরের পুরনো। এটি শুরু হয় প্রথমে বাংলাদেশের ঢাকার ধামরাই গ্রামে। পঞ্চমীর দিন থেকেই পুজো শুরু হয়ে যেত, এখনও সেটাই হয়ে আসছে। আগে মাটির মূর্তিতে পুজো হলেও বর্তমানে দেবীর চিরস্থায়ী পিতলের মূর্তিতেই তা হয়ে থাকে। পাঁচদিন ধরে চলত পুজো। আর দশমীতে বিসর্জন করা হত (Durga Puja 2023)। সময় বদলের সাথে সাথে বাংলাদেশের এই পুজোর স্থানও পরিবর্তিত হয়েছে। দেশ ভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে আসেন বসাক পরিবারের তৎকালীন সদস্যরা। আর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়িতে আবার নতুন করে শুরু হয় বাংলাদেশের ধামরাই গ্রামের সেই ঐতিহ্যবাহী পুজো। কিন্তু রীতিনীতিতে কোনও ভেদাভেদ হয়নি আজও। সেই পুরনো নিয়ম ধরে আজও পুজো হয় বসাক বাড়িতে। বাংলাদেশের সেই ধামরাই গ্রামের দুর্গা বেদির আদলেই তৈরি হয়েছে সিউড়ির বসাক বাড়ির দুর্গা বেদি। আর যে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি হুবহু বাংলাদেশের পুরনো মন্দিরটির আদলেই। সামনে আছে একটি বিশাল নাট মন্দির।
আগেই দেবী মনসার পুজো
সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি রীতিতে এখানে পুজো শুরু হয়। বসাক পরিবার যখন দেশভাগের সময় এপার বাংলায় আসে, তখন সঙ্গে করে নিয়ে আসে তাদের পূজিতা দেবী মনসার ঘট। আর সেই ঘটকে এই মন্দিরেই প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই থেকে আজও দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের মন্দিরের মতোই পঞ্চমীর দিন সর্বপ্রথম দেবী মনসার পুজো শেষ করে দুর্গাপুজো আরম্ভ হয়। পুজোর পাঁচটি দিন বীরভূমের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের সমাগম ঘটে এই বসাক বাড়িতে। আগে বাংলাদেশ থেকে বসাক বাড়িতে পরিচিতরা এলেও এখন আর কেউ আসেন না বলেই জানান পরিবারের সদস্যরা। পুজোর কটা দিন আনন্দে মেতে ওঠেন সবাই। দিন বদল হলেও আজও সেই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলেছে এই বসাক বাড়ির প্রাচীন পুজো (Durga Puja 2023)।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।