Durga Puja 2023: একচালার প্রতিমায় দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, অসুর আছে, নেই শুধু কার্তিক-গণেশ!

চৌধুরীবাড়িতে নবাবি আমলে শুরু হওয়া পুজোর ঐতিহ্য আজও অমলিন
Durga_Puja_2023
Durga_Puja_2023

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তালিবপুরের চৌধুরীবাড়়ি। বনেদি পরিবার। সেই বাড়ির মেয়ে কল্যাণী। সারা বছর স্বামীর ঘরে থাকলেও পুজোর কটা দিন তাঁর জন্মভিটেয় কুলদেবতার কাছে না থাকলে তাঁর মন ভালো থাকে না। সেই ছোটবেলায় স্কুলশিক্ষক বাবা পাঁচকড়ি চৌধুরীর মুখে সে শুনেছিল বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস। দিনক্ষণ আর তাঁর মনে নেই। তবে, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের কথা। তাঁদের পূর্বসূরি দুজন মহিলা এই পুজোর (Durga Puja 2023) সূচনা করেছিলেন। তাঁরা তন্ত্রসাধনা করতেন। একচালার প্রতিমা। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, অসুর থাকলেও কার্তিক, গণেশ নেই। এই পুজোর সূচনাপর্ব থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। কার্তিক, গণেশ কেন নেই, তার ব্যাখ্যা সঠিকভাবে কেউ দিতে পারেননি।

চট্টোপাধ্যায় থেকে চৌধুরী কীভাবে?

এখন চৌধুরীবাড়ির পুজো বললেও আদতে তাঁদের পদবী ছিল চট্টোপাধ্যায়। এই পরিবারের সন্তান রূপচাঁদ চট্টোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদের নবাবি দরবারে সুপ্রসিদ্ধ গায়ক ছিলেন। নবাবি আমলেই তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান গেয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই আর্থিকভাবে তিনি বেশ কিছুটা সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর আমলেই এই বাড়িতে দুর্গাপুজো অনেক জাঁকজমকভাবে হত। বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই পুজোয় (Durga Puja 2023) অংশ নিতে আসতেন। সেই সময় অষ্টমী আর নবমীতে পুজোয় ছাগ বলি হত। পুজোর কদিন কয়েকশো মানুষের পাত পড়ত এই বাড়িতে। আর রূপচাঁদের মতো স্বনামধন্য গায়কের বাড়ি হওয়ায় পুজোর সময় ফি বছর গানের আসরও বসত। আশপাশের গ্রামের মানুষের ভিড়ে সেই আসর গমগম করত। তাঁর উত্তরসূরী ছিলেন পঞ্চানন্দ চট্টোপাধ্যায়। গায়ক হিসেবে তিনিও যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। তাঁর প্রতিভার জন্যই চট্টোপাধ্যায় থেকে চৌধুরী উপাধি দেওয়া হয়। নবাবি আমলে পাওয়া সেই পদবীই এখনও এই পরিবারের সদস্যরা বহন করে চলেছেন। মন্দিরের উঁচু দালান, মাটির দেওয়াল, খড়ের চাল ফি বছর ঠিক করা হত। চৌধুরীবাড়়ির বর্তমান বংশধর স্কুল শিক্ষক জয়ন্ত চৌধুরীর কথায়, আমাদের প্রপিতামহ ইন্দ্রভূষণ চৌধুরীর সময় থেকেই ছাগ বলি বন্ধ হয়ে আখ, চালকুমড়ো বলি শুরু হয়।

এখনও বলির শঙ্খচিল আকাশে ওড়ে

শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই এখনও ষষ্ঠীর দিন সকালে ধোপাপুকুরে গিয়ে ঘটে জল ভরা হয়। সেই ঘট মন্দিরে রেখে পুজো হয়। রাতে ষষ্ঠীর কল্পনা হয়। মহা সপ্তমীর দিন কলাবউকে বাড়ির ঠাকুরঘরে গঙ্গার জলে স্নান করানো হয়। এরপর মন্দিরের সামনেই উঠানে নিয়ে এসে এক কোণে কলা বউয়ের পুজো হয়। পরে, মন্দিরে মা দুর্গার ডানদিকে এক কোণে কলা বউকে রাখা হয়। প্রতিদিন মায়ের ভোগ হিসেবে প়ঞ্চব্যঞ্জন পদ ও মাছের ভোগ (Durga Puja 2023) নিবেদন করা হয়। আগের ছাগ বলি আর নেই। এখন সপ্তমী, অষ্টমীর দিন চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। আর মহাষ্টমীতে চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। তবে, যখন গ্রাম বাংলায় ঘড়ির চল ছিল না, তখন এই বলির আগে আকাশে নিয়ম করে শঙ্খচিল আর শিয়াল আসত। তারা আসার পরই নির্দিষ্ট একটি সময়ের পরই বলিদান হত। এখনও বলির শঙ্খচিল আকাশে ওড়ে। পরিবারের সকলের সঙ্গে কল্যাণী তাঁর দুই সন্তানকে তা দেখিয়েছেনও।

নবমীর দিন আখ আর চাল কুমড়ো বলি

এই চৌধুরীবাড়ির বর্তমান বংশধর সত্যব্রত চৌধুরী, দেবব্রত চৌধুরী, ধর্মব্রত চৌধুরী। ধর্মব্রত চৌধুরী এখন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। খুব ছোট থেকেই তিনি এই পুজো করে আসছেন। কোনও কামার নয়, চৌধুরী পরিবারের সদস্যের হাতেই মা বলিও গ্রহণ করেন। পুজো (Durga Puja 2023) শেষে বাড়িতে মায়ের ভোগ খাওয়ানো হয়। নবমীর দিন আখ আর চাল কুমড়ো বলি হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত সন্ধ্যায় লুচি, ক্ষীর, ছানা ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন খই, দই ভোগ নিবেদন করা হয়। পাড়ার ছেলেমেয়েরা সাত সকালে স্নান করে নতুন জামাকাপড় পরে মন্দিরে চলে আসেন। বেলপাতায় সরের কলমে কালি দিয়ে মা দুর্গার নাম লিখে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে মায়ের পায়ে তা নিবেদন করেন। বিকেলের দিকে ধোপা পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। একাদশীর দিনে বাপেরবাড়ি ছেড়ে যেতে কল্যাণীর চোখ ছল ছল করে।

মা দুর্গার নিরঞ্জন হয় না

তালিবপুর ডাঙাপাড়ায় মাটির দোতলা বাড়িতে পাঁচকড়ি চৌধুরীর ভরা সংসার। তাঁর চার সন্তান সত্যব্রত, কল্যাণী, দেবব্রত এবং ধর্মব্রত। তিন ভাই, বোন মিলেই এই পুজোর আয়োজন করতেন। পাঁচকড়ি চৌধুরী বহু বছর আগে গত হয়েছেন। রূপচাঁদের উত্তরসূরী হিসেবে কল্যাণীর পাশাপাশি সত্যব্রত, ধর্মব্রত ও তাঁর সন্তানরা এখনও নিয়মিত গান, বাজনার রেওয়াজ করেন। এখন আর খড়ের চালের মন্দির নেই। সেখানে মাথা তুলেছে ইট, সিমেন্টের কংক্রিটের মন্দির। দেবব্রত আর ধর্মব্রত এখন সেই পুরানো ঐতিহ্য মেনেই দুর্গাপুজো করে আসছে্ন। তবে, করোনাকালের সময় থেকেই চৌধুরীবাড়ির মা দুর্গার (Durga Puja 2023) আর নিরঞ্জন হয় না। পরিবারের বর্তমান বংশধর তথা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ধর্মব্রত চৌধুরী বলেন, মায়ের আদেশ মেনেই আর নিরঞ্জন হয় না। এখন বছরের চারদিন নয়, সারা বছর ধরেই মায়ের পুজো হয়।

 

দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles