img

Follow us on

Wednesday, Oct 09, 2024

Durga Puja 2024: ত্রিদেবের তেজ থেকে উদ্ভব হল অষ্টাদশভূজা এক নারীমূর্তির, ইনিই মাতা কাত্যায়নী

Mata Katyayani: মহাষষ্ঠীতে আরাধিত হন দেবী কাত্যায়নী! তিনিই বধ করেন মহিষাসুরকে

img

দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় তৈত্তিরীয় আরণ্যক গ্রন্থে (সংগৃহীত ছবি)

  2024-10-07 11:23:15

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিমালয়ের কোলে ঘন অরণ্য ঘেরা এক ঋষির আশ্রম। কাত্য গোত্রধারী ওই ঋষির নাম কাত্যায়ন। দীর্ঘদিন তিনি মাতা অম্বিকাকে (Durga Puja 2024) নিজের কন্যা রূপে পাওয়ার জন্য তপস্যায় রত ছিলেন। পুরাণে কথিত আছে, দেবী তাঁর এই তপস্যায় প্রসন্ন হয়েছিলেন এবং তাঁকে এরূপ বর দিয়েছিলেন যে, যখন দেবতাদের প্রয়োজন হবে, তখন তিনি তাঁর কন্যা রূপে অবতীর্ণ হবেন। বামন পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুরের কাছে স্বর্গরাজ্য হারিয়ে বিতাড়িত দেবতারা শরণাপন্ন হয়েছিলেন ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের। মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমে এই ত্রিদেবের তেজ থেকে উদ্ভব হয় অষ্টাদশ ভূজা এক নারীমূর্তির, ইনিই মাতা কাত্যায়নী। নবরাত্রির মহাষষ্ঠীর দিন আরাধিতা হন দেবী কাত্যায়নী। মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমে সমস্ত দেবগণ নিজেদের অস্ত্র দ্বারা সাজাতে শুরু করলেন মাতা কাত্যায়ানীকে। শিব দিলেন তাঁর ত্রিশূল, ভগবান বিষ্ণু প্রদান করলেন তাঁর সুদর্শন চক্র, অগ্নি দিলেন শক্তি, বায়ু দিলেন ধনুক, সূর্য দিলেন তীরভরা তূণীর, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, কুবের দিলেন গদা, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা ও কমণ্ডলু, কাল দিলেন খড়্গ ও ঢাল এবং বিশ্বকর্মা দিলেন কুঠার ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। এইভাবে সমস্ত দেবতা তাঁদের অস্ত্র তুলে দিলেন দেবীর হাতে মহিষাসুর বধের নিমিত্তে।

মহিষাসুরের সঙ্গে দেবীর যুদ্ধ (Durga Puja 2024)

পুরাণে কথিত আছে, এরপর দেবী (Durga Puja 2024) গেলেন মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। মহিষাসুরের দু'জন চর দেবীকে দেখে মহিষাসুরের নিকটে গিয়ে তাঁর রূপ বর্ণনা করলেন। দেবীর রূপে মুগ্ধ মহিষাসুর দেবীকে লাভ করতে চাইলেন। মাতা কাত্যায়নী তখন শর্ত দিলেন যে, তাঁকে লাভ করার পূর্বে যুদ্ধে পরাস্ত করতে হবে। শুরু হল মহিষাসুরের সঙ্গে মাতা কাত্যায়নীর এক প্রবল যুদ্ধ। মাতা কাত্যায়নী ছিলেন তাঁর বাহন সিংহের ওপর সওয়ার, অন্যদিকে মহিষাসুর ছিলেন মহিষের রূপে। পুরাণে আরও উল্লেখ রয়েছে, যুদ্ধ চলাকালীন মাতা কাত্যায়নী (Mata Katyayan) পা দিয়ে তীব্র আঘাত করেন ওই ছদ্মবেশী মহিষকে। আঘাতে মহিষাসুর ধরাতলে পতিত হলে, মাতা কাত্যায়নী তাকে ত্রিশূল দ্বারা বধ করেন। এভাবেই মাতা কাত্যায়নী হয়ে ওঠেন 'মহিষাসুরমর্দিনী'। যে মহিষাসুরমর্দিনীকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর সম্পন্ন হয় দুর্গাপুজো (Durga Puja 2024)। যে মহিষাসুরমর্দিনীর স্তব প্রত্যেক মহালয়ার ভোরবেলায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে আমরা শুনতে পাই। পুরাণ অনুযায়ী, দেবতারা যুদ্ধ শেষে মাতার কাত্যায়নীর উদ্দেশে পুষ্পবৃষ্টি করেন। রম্ভাপুত্র মহিষাসুরের অত্যাচারে যে দেবতারা স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, তাঁরাই আবার স্বর্গরাজ্যের অধিকার ফিরে পেলেন মাতা কাত্যায়নীর কৃপায়।

শাক্তরা মনে করেন, মাতা কাত্যায়নী যোদ্ধাদেবী, ঠিক মাতা চণ্ডী বা ভদ্রকালীর মতোই

বামন পুরাণে উল্লেখিত এই আখ্যান বরাহ পুরাণ এবং দেবী ভাগবত পুরাণেও একইভাবে উল্লেখ করা আছে। অন্যদিকে কালিকা পুরাণ অনুযায়ী, দেবী কাত্যায়নী তিনবার মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। আদি সৃষ্টিকল্পে অষ্টাদশভূজা উগ্রচণ্ডী রূপে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। দ্বিতীয় সৃষ্টিকল্পে ষোড়শভুজা ভদ্রকালী রূপে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। আবার তৃতীয় সৃষ্টিকল্পে দশভূজা দেবী দুর্গা রূপে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। মহিষাসুর তৃতীয়বার বধ হওয়ার পর দেবীর আশীর্বাদে তিনি চিরতরে দেবীর পদতলে স্থান পান। বেদের অন্য একটি আখ্যান অনুযায়ী, কাত্যায়নী ও মৈত্রেয়ী ছিলেন শতপথ ব্রাহ্মণের রচয়িতা ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের দুই স্ত্রীর নাম। শাক্তরা মনে করেন, মাতা কাত্যায়নী (Mata Katyayan) যোদ্ধাদেবী ঠিক মাতা চণ্ডী বা ভদ্রকালীর মতোই। মহর্ষি পতঞ্জলি রচিত 'মহাভাষ্য' গ্রন্থে মাতা কাত্যায়নীকে সৃষ্টির আদি শক্তিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।

দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় তৈত্তিরীয় আরণ্যক গ্রন্থে

দেবী কাত্যায়নীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় তৈত্তিরীয় আরণ্যক গ্রন্থে। মার্কন্ডেয় রচিত 'দেবী মাহাত্ম্যে' মাতা কাত্যায়নীর দিব্যলীলার বর্ণনা রয়েছে, এর সাথে সাথে দেবী ভাগবত পুরাণেও মাতা কাত্যায়নীর লীলা বর্ণিত হয়েছে। আবার বৈষ্ণবদের ভাগবত পুরাণেও মাতা কাত্যায়নীর পূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। ভাগবত পুরাণে এটি কাত্যায়নী ব্রত নামেই পরিচিত। ব্রজের গোপীরা শ্রী কৃষ্ণকে পতি রুপে পেতে এই ব্রত উদযাপন করত। মাঘ মাস জুড়ে এই ব্রত চলত। যমুনা নদীর তীরে মাতা কাত্যায়নীর মাটির মূর্তি তৈরী করে দীপ, ফল, চন্দন, ধূপ দ্বারা মাতার আরাধনা করার পরম্পরা ছিল উত্তর ভারতে। আবার একই ভাবে মকর সংক্রান্তিতে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল উৎসবে মাতা কাত্যায়নীর পুজো চালু রয়েছে।


রোগ-ভয়-ব্যাধি সমস্ত কিছু মাতা হরণ করে নেন বলেই ভক্তদের ধারণা

মাতা কাত্যায়নীর (Mata Katyayani) স্বরূপ শৌর্য, তেজ এবং পরাক্রমের প্রতীক বলেই বিবেচিত হয়। পুরাকালে মাতা কাত্যায়নী যেমন মহিষাসুরকে বধ করে আসুরিক শক্তি তথা অশুভ শক্তির বিনাশ করেছিলেন, ঠিক একইভাবে ভক্তদের জীবন থেকে সমস্ত অশুভ শক্তিকে তিনি বিনষ্ট করেন এবং আসুরিক যা কিছু প্রবৃত্তি সেটাও তিনি ধ্বংস করেন বলেই বিশ্বাস রয়েছে ভক্তদের। মাতার এই রূপের উপাসনা করলে সমস্ত অশুভ প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করা যায়, জীবনের সমস্ত বাধাবিঘ্ন দূর হয়, রোগ, ভয়, ব্যাধি সমস্ত কিছু মাতা হরণ করে নেন বলেই ভক্তদের ধারণা। মাতা কাত্যায়নীর ভক্তরা নৈবেদ্যতে মায়েরা (Mata Katyayani) উদ্দেশ্যে মধু নিবেদন করেন। এতে মা সন্তুষ্ট হন।

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

madhyom bangla

Durga Pujo

bengal durga puja

hindu festivals

durga puja 2024

ma durga

ma mahamaya

festivals of bengal


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর