img

Follow us on

Saturday, Oct 12, 2024

Durga Puja 2024: বঙ্কিমচন্দ্রের দৃষ্টিতে দেবী দুর্গা হলেন স্বদেশমাতা বঙ্গভূমি জননীভূমি

Bangabhumi Jananibhumi: বঙ্কিমচন্দ্রের 'আমার দুর্গোৎসব' বর্তমান সময়ে কেন প্রাসঙ্গিক জানেন?

img

বাঁ দিকে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং ডান দিকে দেবী দুর্গা। সংগৃহীত চিত্র।

  2024-10-08 07:16:27

ড. সুমন চন্দ্র দাস

বঙ্গদেশে দুর্গোৎসব (Durga Puja 2024) মাতৃ আরাধনা হল দেশমাতৃকার পুজো। এই দুর্গাদেবী দেশমাতৃকা হলেন বাঙালি সন্তানের প্রসূতি মাতা বঙ্গভূমি বঙ্গপ্রতিমা। এই স্বদেশ দুর্গাদেবী মাতৃকা শুধু বঙ্গদেশের মাতৃভূমি নন, সমগ্র ভারতবর্ষের মাতৃসাধনার প্রকৃত আরাধ্য দেবী এবং শক্তির প্রকাশ। তাই তো বঙ্গভূমি তথা ভারতবর্ষ শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নয়, এটি ভারতীয় জাতি সম্প্রদায়ের মাতৃভূমি (Bangabhumi Jananibhumi)। দেবীদুর্গা হলেন স্বদেশমাতা তথা ভারতমাতা। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের কাছে দেবী দুর্গার স্বরূপ কেমন ছিল? এই বিষয়ে আলোচ্য প্রবন্ধে মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করব। পরাধীন ভারতে দুর্গোৎসবের স্বরূপ কেমন ছিল, তাই এখানে আলোচ্য বিষয়।

সন্তানপালিনি, দুর্গতি নাশিনি দুর্গা(Durga Puja 2024)

বঙ্কিমচন্দ্র 'কমলাকান্তের দপ্তর' প্রবন্ধ সংকলনে 'আমার দুর্গোৎসব' (Durga Puja 2024) নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এই প্রবন্ধে কমলাকান্ত আফিম খেয়ে নেশা করে প্রলাপ করলেও মূলত বঙ্গভূমির স্বরূপকে আরাধ্য মৃন্ময়ী দুর্গার চিন্ময়ী বঙ্গজগদ্ধাত্রীকেই সন্ধান করেছেন। কার্যত কমলাকান্ত ভট্টাচার্য আফিম খেলেও সপ্তমীর শারদীয়ায় স্বদেশ মাতৃকার বন্দনাকে পরাধীন ভারতবর্ষের সম্মুখে দ্বেষকদলিনী, সন্তানপালিনি, দুর্গতি নাশিনী, পাপতাপভয়শোকনাশিনী মাতৃশক্তিকে অত্যন্ত ভক্তি দিয়ে উপস্থাপনা করেছেন। ঋষি বঙ্কিমের এই স্বদেশ বঙ্গভূমিতে বঙ্গপ্রতিমার রূপকে শুধু তাঁর সময়ে সীমাবদ্ধ রাখেননি, স্বাধীনতা উত্তর ভারতবর্ষ তথা একবিংশ শতকের ভারতবর্ষের জন্য এখনও কীভাবে প্রাসঙ্গিক, সেই কথাই তুলে ধরেছেন।

সাম্রাজ্যের আগ্রাসনে নিমজ্জিত মৃন্ময়ী

বঙ্গে ধর্ম দর্শন সংস্কৃতি প্রবাহের মধ্যে শাক্ত মত একটি অতি প্রাচীন ধর্মপন্থা। কমলাকান্ত সপ্তমী পুজোর (Durga Puja 2024) দিন প্রতিমা কেন দেখতে গেলেন, এই কথা বলে বঙ্গভূমির বঙ্গপ্রতিমার স্বরূপ আত্মচৈতন্যকে মন্থন করেছেন। মাকে অন্বেষণ করতে গিয়ে বঙ্গভূমিতে নিজের অস্তিত্ব স্বরূপ বলেন, “কালের স্রোতে দিগন্ত ব্যাপিয়া প্রবলবেগে ছুটিতেছে-আমি ভেলায় চড়িয়া ভাসিয়া যাইতেছি।” এই কালস্রোত হল অনন্ত অকূল অন্ধকার এবং কালসমুদ্রে নিতান্ত একা মাতৃহীন কমলাকান্ত, বঙ্গজননীকে আত্মানুসন্ধান করতে এসেছেন। কিন্তু এই মা কমলাকান্তের কাছে, “আমার জননী জন্মভূমি-এই মৃন্ময়ী মৃত্তিকারূপিনী-অনন্তর-ভূষিতা-এক্ষণে কালগর্ভে নিহিতা।” পরাধীন বঙ্গদেশের বঙ্গপ্রতিমাকে শুধু রাজনৈতিক ভাবে ব্রিটিশ পরাধীনতাকে বিশ্লেষণ করতে অন্ধকার সমুদ্রের কালস্রোতে নিহিত থাকা জননী বঙ্গভূমির কথা বলেননি, বঙ্গভূমিতে বিদেশী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যের আগ্রাসনে নিমজ্জিত মৃন্ময়ী মৃত্তিকারূপিনী অনন্তরত্নে ভূষিতা প্রতিমাকে স্মরণ করেছেন। কমলাকান্ত সেই বঙ্গদেশের বঙ্গ জননীকে চিনতে চাইছেন, যে মা বিদেশী ধর্ম-সংস্কৃতির রাজনৈতিক শাসনের কবলে বঙ্গদেশরই কালগর্ভে অন্তর্লীন হয়ে আছেন। অন্তর্লীন মা শক্তিকে জাগ্রত করে কালগর্ভ থেকে তুলে এনে বঙ্গজননীকে (Bangabhumi Jananibhumi) প্রতিষ্ঠা করাই হল তাঁর আসল উদ্দেশ্য।

সুবর্ণময়ী বঙ্গপ্রতিমা

দুর্গোৎসবের (Durga Puja 2024) এই মা হলেন দশভূজা, তাঁর পদতলে শত্রু নিস্পিড়ীনে নিযুক্ত। এই মূর্তি নানা প্রহরণপ্রহারিণী শত্রু মদ্দিনী, বীরেন্দ্রপৃষ্ঠবিহারিনী, দক্ষিণে লক্ষ্মী বামে বিদ্যাজ্ঞানমূর্তিময়ী সঙ্গে বলরূপী কার্তিক এবং কার্যসিদ্ধিরূপী গনেশ উপস্থিত। এই দেবীর স্বরূপ হল, সুবর্ণময়ী বঙ্গপ্রতিমা। উল্লেখ্য এই বঙ্গপ্রতিমার স্বরূপ হল মৃন্ময়ী মৃত্তিকারূপিনী দেবী দুর্গা মা। এই শক্তি রূপী সর্ব মঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে হলেন সপ্তমী পুজোর দুর্গা এবং একই সঙ্গে বঙ্গদেশের জননী জন্মভূমি। তাই বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সমকালে বাঙালি দুর্গোৎসবের দুর্গা মায়ের স্বরূপের স্পষ্ট রূপটিকে ভারতীয়দের মননের অনন্তজলমগ্ন থেকে বিশ্ব-বিমোহিনী মূর্তি জগতের সামনে প্রকাশ করেছেন। দেবী দুর্গার এই হল যথার্থ রূপ। দুর্গোৎসবের দুর্গা মা হলেন বঙ্গ জননীকে স্বদেশ মাতৃকা। বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্ত মায়ের দেখা এই রূপ এখনকার পশ্চিমবঙ্গের জন্য ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। বঙ্গদেশের ছয় কোটি বঙ্গ সন্তানের দ্বাদশ কোটি জোড় হাতে নবরাগঙ্গিনি নববল ধারিনি নবদর্পে দর্পিণি নব স্বপ্নদর্শিনি মাকে গৃহে ডাকছেন। এই মা হলেন স্বদেশ চেতনার বিশেষ চৈতন্য।

মায়ের প্রকাশই বঙ্গভূমি

এই মাকে বঙ্গদেশের সন্তানরা মা প্রসূতি রূপে ডাকবেন এবং ধাত্রি ধরিত্রি ধনধান্য দায়িকেও ডাকবেন। এই দেবী সিন্ধু পূজিত সিন্ধু-মথনকারিনি, শত্রু বধে দশভূজে দশ প্রহরণ-ধারণি এবং অনন্ত শ্রী কালস্থায়িনি। আবার মাকে বলেছেন, তুমি অনন্ত শক্তি প্রদায়িনি মাতা শক্তি দাও তোমার সন্তানদের। এই শক্তি আরাধনা ও আত্মানুসন্ধান শুধু পরাধীন ভারতবর্ষের চিন্তা চৈতন্যের কালসীমার মধ্যে আবদ্ধ নয়, পাঁচশ বছরের মুসলমান শাসন, দুইশ বছরের ইংরেজ শাসন, চৌত্রিশ বছরের বামপন্থী শাসন এবং তের বছরের তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনের পরও পশ্চিমবঙ্গে প্রাসঙ্গিক। বঙ্গভূমি বঙ্গপ্রতিমা জননীকে উত্থান করতে হবে। বাংলাদেশে উগ্র মুসলমান ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে দুর্গাপুজো প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। তাই বঙ্কিমের বঙ্গের স্বরূপ কতটা সুরক্ষিত সেটাও প্রাসঙ্গিক।  

না হয় ডুবিব মাতৃহীনের জীবনে কাজ কি?

সাংস্কৃতিক সামাজিক ধর্মীয় রাজনৈতিক পরাধীনতা থেকে বঙ্গভূমির বঙ্গপ্রতিমাকে মুক্ত করতে তাই দেবী দুর্গার শক্তি সাধনা হল স্বদেশ বঙ্গভূমি দেশমাতৃকার সাধনা। এই সপ্তমীতে শারদীয়া দেবী শক্তির আরাধনা হল স্বদেশ বঙ্গভূমির বঙ্গপ্রতিমার সাধনা। এই সাধনাই যথার্থ সাধনা। তাই বলেছেন "না হয় ডুবিব মাতৃহীনের জীবনে কাজ কি? আইস, প্রতিমা তুলিয়া আনি..।" এই উক্তি নিছক শুধুমাত্র মাতৃ আরাধনার শক্তি নয়, এটি হল এক রাষ্ট্র ভাবনার স্বদেশ মাতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভাবনা। মাতৃভূমির স্বাধীনতা জাতীয়তাববোধ সার্বভৌমত্ব আত্ম অভিমান এবং স্বদেশ গৌরবের প্রতীক স্বরূপ বঙ্গদেশ তথা অখন্ড ভারত রাষ্ট্রের কল্পনা এই দুর্গোৎসবের দেবী আরাধনায় লুকিয়ে আছে। এই দেবী দুর্গার মাতৃসাধনা (Durga Puja 2024) পরবর্তী কালে দেশমাতৃকার বন্দনা স্বরূপ সারা ভারতবর্ষে বন্দেমাতরম্ ধ্বনিতে মুখরিত হয়। আজকের পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী ঐক্যের মূলমন্ত্র দেবী দুর্গার বন্দনা।

স্বধর্মকে বঙ্গদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে

বঙ্কিমচন্দ্রের সময়কার শুধু পরাধীন ভারতবর্ষেই নয়, স্বাধীনতা উত্তর পচাত্তর বছর পরেও জাতীয়তাবাদী দেশমাতৃকার আরাধনা-বন্দনা এখনও প্রাসঙ্গিক। বঙ্গদেশ অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে দেশমাতৃকার আরাধনায় দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী (Durga Puja 2024) শক্তিকে করা দরকার। তাই বঙ্কিমের লেখা আজও প্রাসঙ্গিক। সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ কমিউনিস্ট রাজনীতি এই দেবী দুর্গার শক্তি সাধনার রূপকে বিকৃত করেছে। হিন্দু পূজাচারকে 'শুভ শারদীয়া' নামকরণ করেছে। স্বদেশমাতা বঙ্গভূমির বঙ্গপ্রতিমাকে জননী না বলার অপচেষ্টা বঙ্গভূমি তথা ভারতভূমির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই বিষয় আজ থেকে ১৮০ বছর আগেই বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং বুঝতে পেরেছিলেন। তাই বঙ্গের বাঙালি সমাজকে দেবী শক্তির উপাসনা ও বঙ্গজননীর সাধনাই একমাত্র সঠিক পথ। তাই এই বঙ্গভূমির সংস্কৃতি ধর্ম ও দর্শনকে কালের সমুদ্রে ডুবে থাকা পাঁক থেকে উদ্ধার করতে বঙ্কিমচন্দ্রের ভাবনায় উজ্জীবিত হতে হবে। দেবী দুর্গার চিন্ময়ীরূপকে বঙ্গভূমির স্বদেশ জননীর বন্দনার দ্বারাই পূর্ণতা আসবে। বাঙালি সমাজ সংস্কৃতি ও স্বধর্মকে বঙ্গদেশে (Bangabhumi Jananibhumi) পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এই বঙ্গদেশর বঙ্গভূমিতে বঙ্গপ্রতিমা হল স্বদেশ ভারত মাতা। দেবী দুর্গার আহ্বানে সকল অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটুক শুভ শক্তির উদয় ঘটুক। 

বন্দে মাতরম্‌

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

news in bengali

durga puja 2024

Bankim Chandra Chattopadhyay

swadesh mata

bangabhum্‌ jananibhumi


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর