Hindu Bengali worship: দেবী দুর্গার পুজোতে ষষ্ঠী-সপ্তমী-অষ্টমী-নবমী-দশমী কীভাবে পালিত হয় জানেন?
দেবী দুর্গার আরাধনা। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু বাঙালির (Hindu Bengali worship) সবথেকে বড় উৎসব হল দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022)। সম্প্রতি কয়েক বছর আগে বাঙালির এই মহোৎসব পেয়েছে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমাও। এই উৎসব শুধুই আর ধর্মীয় উৎসবে সীমাবদ্ধ নেই। এই উৎসব আজ হয়ে উঠেছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের উৎসব। যদিও মহালয়া থেকেই পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। দেবীপক্ষের সূচনা থেকেই শুরু হয় পুজো। পুজোর এই কয়েক দিন, মানুষ তাঁর জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট ভুলে উৎসবে মেতে ওঠেন। মহাষষ্ঠী থেকে মহাদশমী, দুর্গাপুজোর এই পাঁচ দিনে বহু নিয়ম মেনে মা দুর্গার আরাধনা করা হয়। জেনে নিন দুর্গা পুজোয় কবে কোন কোন নিয়ম পালন করা হয়।
মহাষষ্ঠীতে দেবীর বোধন
মহাষষ্ঠীর দিনই শুরু হয়ে যায় দেবীর আরাধনা। দেবীপক্ষের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে মা দুর্গার বোধন করা হয়। এই রীতির সঙ্গে জড়িত আছে এক পৌরাণিক কাহিনি। বোধনের অর্থ জাগ্রত করা। জাগ্রত করা হয় দেবীকে। মা দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কথিত আছে, শরৎকালে দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। লঙ্কার রাজা রাবণকে পরাজিত করার জন্য দেবীর আশীর্বাদ কামনায়, তিনিই এই সময় দুর্গার অকাল বোধন করেন। বোধনের মাধ্যমেই দুর্গাকে আবাহন করা হয়। আর তাতে রামচন্দ্রকে সাহায্য করেছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা।
মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা বা কলা বউ স্নান
সপ্তমীতে কলা বউ স্নানের রীতি প্রচলিত আছে। একেই বলা হয় নবপত্রিকা। নবপত্রিকার অর্থ হল নটি পাতা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে নটি গাছ দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয়। এই নটি গাছ মা দুর্গার নয় শক্তির প্রতীক। গাছগুলি হল-কলাগাছ, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, ডালিম, অশোক, মান ও ধান। সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকাকে স্নানের জন্য নদী বা পুকুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর লাল পাড় সাদা শাড়িতে মুড়িয়ে ঘোমটা দিয়ে বধূর আকারে সেটিকে গণেশের পাশে স্থাপন করা হয়। অনেকেই বলে থাকেন, নবপত্রিকার পুজো প্রকৃতপক্ষে শস্যদেবীর পুজো। ফসলের উর্বরতার সঙ্গে একটা প্রত্যক্ষ যোগ থাকে এই পুজোতে।
মহাষ্টমীর অঞ্জলি
মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী-এই তিনদিনই পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া যায়। কিন্তু অষ্টমীর অঞ্জলিকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেন বাঙালিরা। হাত ভরে ফুল নিয়ে পুরোহিতের বলা মন্ত্র উচ্চারণের পর, হাতে ধরে থাকা ফুল-পাতা দেবীর চরণে অর্পণ করা হয়। অঞ্জলি দেওয়ার মাধ্যমে মায়ের প্রতি নিজেদের বিশ্বাস, শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন ভক্তরা। সকলেই মায়ের আশীর্বাদ চান। অশুভ শক্তির বিনাশ চেয়ে শুভ শক্তির প্রকাশ চান।
কুমারী পুজো
অষ্টমী বা নবমী তিথিতে বহু জায়গায় কুমারী পুজোর রীতি পালিত হয়। শাস্ত্রমতে, এক থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত, যেসব মেয়েরা ঋতুচক্রে পা দেয়নি তাদের দেবী রূপে পুজা করা হয়।
সন্ধি পুজো
মহাঅষ্টমীর সমাপ্তি ও মহানবমীর সূচনার সন্ধিক্ষণে করা হয় সন্ধিপুজো। মনে করা হয়, মহাঅষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে বধ করেছিলেন। তাই এই সময় দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পুজো করা হয়। সন্ধিপুজোর সমস্ত মন্ত্রই চামুণ্ডা দেবীর মন্ত্র। সন্ধিপুজোয় দেবীকে ১০৮ পদ্ম এবং ১০৮ দীপ জ্বালিয়ে পুজো করা হয়।
বিজয়া দশমীতে সিঁদূর খেলা
বিজয়া দশমীতেই সকলকে কাঁদিয়ে মা দুর্গা শ্বশুরবাড়ি পাড়ি দেন। বিজয়ার দিনে সিঁদুর খেলা দুর্গাপুজোর এক বিশেষ অনুষ্ঠান। পতিগৃহে রওনা দেওয়ার আগে উমাকে বরণ করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। তাই, দশমীর দিন ঘরের মেয়েকে সিঁদূরে রাঙিয়ে, মিষ্টি মুখ করিয়ে, পান, ধান, দূর্বা দিয়ে বরণ করা হয়। দেবীর বরণের পরই গৃহবধূরা (Hindu Bengali worship) মেতে ওঠেন সিঁদূর খেলায়।
দেবীর বিসর্জন
প্রতিমা পুজার অন্তিম পর্যায় বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই মাটির প্রতিমা প্রকৃতিতে লীন হয়। নৌকায় করে মাঝ নদীতে নিয়ে গিয়ে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। আর শুরু হয় মায়ের অপেক্ষা। পরের বছর মায়ের আগমনের এক বছরের অপেক্ষা। শুরু হয় দিন গোনা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।