Aparajita Puja: দশমীর দিনে অস্ত্রপূজন করতেন হিন্দু রাজারা, জানুন নেপথ্য-কাহিনি?
আগেকার দিনে নবরাত্রির পরই রাজারা যুদ্ধযাত্রা করতেন। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সাধারণত নবরাত্রির পরেই এই অপরাজিতা পুজোর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। অবশ্য উদ্দেশ্য বিজয়সংকল্পের পুজো। প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু রাজারা যুদ্ধে জয়ী হতে দেবী শক্তির আরাধনা করতেন। দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) দশমীর দিনেই এই অপরাজিতা পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সকাল সকাল স্নান সেরে এক্কেবারে পুজোতে বসে পড়তে হয়। বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রে একটু আবেগ বেশি থাকে। এরপর চলে সিঁদুর খেলা, মন্ত্রপাঠ, ঘট বিসর্জনের রীতি। কিন্তু এসব চলার মধ্যেই অপরাজিতা গাছের পুজো হয়। পুজো শেষে অপরাজিতা (Aparajita Puja) লতা হাতে জড়িয়ে নেওয়া হয়।
অপরাজিতা (Aparajita Puja) গাছের পুজো কেন হয়? কেনই বা অপরাজিতা লতা আমরা বাঁধি নিজেদের হাতে। কার্যত দেবী দুর্গার (Durga Puja 2024) দশমীর পুজোতে বিজয়লাভের সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা নিয়ে হয় অপরাজিতা পুজো। কথিত রয়েছে, আগেকার দিনে নবরাত্রির পরই রাজারা যুদ্ধযাত্রা করতেন। দিনটা হত বিজয়া দশমীর দিনেই। যুদ্ধের জন্য এই সময়টাকেই বেছে নিতেন রাজারা। তার অবশ্য একটা কারণ ছিল। আচার্য চাণক্য বা কৌটিল্য তাঁর ‘অর্থশাস্ত্র’-এ লিখেছেন, এই সময় হল যুদ্ধযাত্রার শ্রেষ্ঠ সময়। পণ্ডিত রঘুনন্দন তাঁর ‘তিথিতত্ত্ব’ গ্রন্থেও একই কথা বলেছেন। ওখানে বলা হয়, রাজা যদি দশমী তিথির পর যুদ্ধযাত্রার সূচনা করেন, তাহলে পরাজয় সম্ভব নয়। তাই যুদ্ধে অপরাজেয় থাকতে এদিনেই যাত্রা করতেন রাজারা। বিজয়কে আলিঙ্গনের প্রত্যাশা নিয়েই করা হত অপরাজিতা পুজো। একই সঙ্গে চলত রাজাদের বিজয়কে বরণের রীতিনীতি। এই ধারা আজও প্রতীকী রূপে প্রবহমান।
সাদা অপরাজিতা গাছকে বিজয়া দশমীর পুণ্য তিথিতে পুজো করা হয়। গাছটিকে দেবীরূপে কল্পনা হয়, ঠিক যেমনটা মহা সপ্তমীতে (Durga Puja 2024) নবপত্রিকাকে স্নান করানোর সময় উপাচার করা হয়। নবপত্রিকা যেমন নব দুর্গার প্রতীক, মা দুর্গার বৃক্ষরূপ ভেবে পুজো করা হয়, একই ভাবে অপরাজিতা গাছকে দেবীর বিজয়ের প্রতীকরূপে পুজো করা হয়। অশুভ শক্তির উপর শুভ শক্তির জয়ের প্রতীক, আসুরিক সমস্ত শক্তির বিনাশের প্রতীক। ফুল, বেলপাতা দিয়ে পুজো হয় অপরাজিতা গাছের। অনেকে আবার ঘটস্থাপন করেও পুজো করে থাকেন। পুজোর ফললাভের জন্য হাতে অপরাজিতা লতা বাঁধার রীতির কথা তো আগেই বলা হয়েছে।
পুজোর (Durga Puja 2024) সময় দেবীর উদ্দেশে প্রার্থনা জানানো হয়, ‘‘হে অপরাজিতা দেবী, তুমি সর্বদা আমার বিজয় যাত্রাকে অক্ষুণ্ন রাখ। শত্রুপক্ষকে বিনাশ করার মতো পর্যাপ্ত ক্ষমতা আমাকে প্রদান করো। অশুভ সমস্ত শক্তি যেন পরাভূত হয় আমার কাছে। আমাকে তুমি অপ্রতিরোধ্য করে তোল। আমার সমস্ত আত্মীয়, পরিবার, পরিজন , মিত্রদের মঙ্গল করো। শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করে বিজয় লাভের জন্য আমি তোমাকে দক্ষিণ হাতে ধারণ করছি। তুমি শত্রু নাশ করে নানা সমৃদ্ধির সাথে আমাকে বিজয় দান কর। আমার জীবন যেন সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয়। রামচন্দ্র যেমন অত্যাচারী রাবণের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন, আমিও যেন সেইরূপ জয় লাভ করতে পারি"।
রামায়ণে দশমীর (Durga Puja 2024) তিথিতেই রাবণ বধ হয়েছিলেন। আবার এই তিথিতেই মহিষাসুর বধ হন। একই ভাবে মহাভারতে এই তিথিতেই পান্ডবরা অজ্ঞাত বাস শেষে শমী বৃক্ষের কোটর থেকে তাঁদের লুকিয়ে রেখে যাওয়া অস্ত্র বের করেন। দশমীতে অস্ত্রপূজন করা হয়। আবার এই তিথিতেই কুবের অযোধ্যায় স্বর্ণবৃষ্টি করেছিলেন বলেই পৌরাণিক মত রয়েছে। বিজয়, সমৃদ্ধির জন্য মাতৃ আরাধনা করেই যুদ্ধ যাত্রার রীতি ছিল প্রাচীন ভারতীয় হিন্দু রাজাদের মধ্যে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।