King Suratha: মেধস মুনির আশ্রমেই দুর্গাপুজো প্রথম শুরু হয়েছিল, কে করেছিলেন জানেন?
রাজা সুরথই বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর প্রথম উদ্যোক্তা এবং প্রথম সংগঠক। সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আর শিউলি ফুলের গন্ধই বলে দেয়, মা আসছেন। পুজোর এই চারটে দিনের জন্যই যেন সারা বছর হা পিত্যেশ করে বসে থাকা। কিন্তু যে উৎসব ঘিরে এত আয়োজন, এত উন্মাদনা, এত আবেগ, তা শুরু হয়েছিল কার হাতে? এই প্রশ্নটা আমাদের অনেককেই মাঝে মধ্যে ভাবায়। আসুন, পুরাণ ঘেঁটে দেখে নিই, বাংলায় কে প্রথম এই দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) সূচনা করেছিলেন? পুরাণে উল্লেখ রয়েছে বলিপুর নামক একটি জায়গার নাম। অনেকেই জানিয়েছেন, এই বলিপুর আসলে বীরভূম জেলার বোলপুর শহর, যা ছিল রাজা সুরথের রাজধানী। মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী, মর্ত্যলোকের এই রাজা মর্ত্যবাসীদের মধ্যে দেবীর মাহাত্ম্য তথা লীলা প্রচার করেছিলেন। তিনিই ছিলেন বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর প্রথম উদ্যোক্তা এবং প্রথম সংগঠক। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক, কোন পরিস্থিতিতে, কেন রাজা সুরথ দুর্গাপুজো শুরু করেন? এবং কোথায় তা শুরু করেন?
দেবী মাহাত্ম্যে এবং মার্কন্ডেয় পুরাণে রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্ত বংশীয় রাজা অর্থাৎ চিত্রগুপ্তের বংশধর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তাঁর রাজত্ব, সম্পত্তি সব কিছুই হারিয়েছিলেন। দাস-দাসী, আত্মীয়স্বজন, তাঁর পোষ্য জন্তু জানোয়ারদের কাছেও তিনি মর্যাদা হারিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এরা কেউ তাঁর কথা শুনত না। অসহায় রাজা মনের দুঃখে রাজ্য ছাড়েন। যদুবংশীয় এই রাজা বৈরাগী হয়েছিলেন। রাজ্য ছাড়ার পর তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয় এক বণিকের। ওই বণিকও ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, একেবারে দেউলিয়া ছিলেন তিনি। বণিকের নাম ছিল সমাধি বৈশ্য। তাঁর নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজনের প্রতারণার জন্যই তিনি দেউলিয়া হয়েছিলেন বলে পুরাণে জানা যায়। একদিকে এক ভাগ্যহীন রাজা (King Suratha), অন্যদিকে এক ভাগ্যহীন বণিক। দুজনের সাক্ষাৎ যেন দৈব নির্ধারিত ছিল। তাঁদের সাথে যোগাযোগ হয় মেধস মুনির।
একটি মত অনুযায়ী, মেধস মুনির আশ্রম বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার করলডাঙা পাহাড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশের হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান হল এই পাহাড়ের উপর অবস্থিত মেধস মুনির আশ্রম। প্রতি বছর দুর্গাপুজোতে (Durga Puja 2024) ভক্তদের ভিড়ে ঠাসা থাকে এই আশ্রম। শিব মন্দির, চন্ডী মন্দির সমেত অনেকগুলি মন্দির রয়েছে এখানে। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা এই আশ্রম ভেঙে দেয়। পরবর্তীকালে এই আশ্রম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশে হিন্দুদের অন্যতম বড় এই তীর্থস্থান থেকেই বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। অপর একটি মত অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর শহরের কাছে গড় জঙ্গল নামক স্থানে ছিল মেধস মুনির আশ্রম। আশ্রমের অবস্থান নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও এই মেধস মুনির আশ্রমেই যে দুর্গাপুজো প্রথম শুরু হয়েছিল, এ ব্যাপারে পন্ডিত থেকে ঐতিহাসিক সকলেই একমত।
রাজা সুরথ এবং বণিক সমাধি বৈশ্য দুজনে মেধস মুনির শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের ভাগ্য বিপর্যয়ের কথা মুনিকে শোনাতে থাকেন। মেধস মুনি তাঁদের দেবী মাহাত্ম্য শোনান। মহিষাসুরমর্দিনীর স্তব করে শোনান। মুনি পরামর্শ দেন, একমাত্র দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার আরাধনা এবং পুজো করলেই তাঁদের ভাগ্য ফিরবে। মুনির পরামর্শ মতো রাজা সুরথ ও বণিক সমাধি বৈশ্য মাটির প্রতিমা নির্মাণ করে ওই আশ্রমেই দুর্গাপুজো করেন। কথিত আছে মাতৃ আরাধনার পর রাজা সুরথ (King Suratha) তাঁর রাজত্ব পুনরায় ফেরত পেয়েছিলেন, পরিবার পরিজনের কাছে তাঁর মর্যাদা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অপরদিকে বণিক সমাধি বৈশ্যও একই ভাবে সৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে, হারানো সমস্ত কিছু ফেরত পেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার মেধস মুনির আশ্রমে এই পুজো বসন্ত কালে সংঘটিত হয়েছিল। শরৎকালের দুর্গাপুজো শ্রী রামচন্দ্রের অকাল বোধনের কারণে হয়।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।