সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা কয়েক লাখ! কে এই রুমা দেবী?
রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করছেন রুমা দেবী। সংগৃহীত ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মানুষের কর্মই তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ করে। ভালো কর্ম যে কোনও মানুষের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে সক্ষম। আজকের প্রতিবেদন তেমনই একজনকে নিয়ে, যিনি তাঁর কর্ম প্রতিভায় নিজেকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন, তিনি রুমা দেবী (Success Story)।
কে এই রুমা দেবী?
রুমা দেবী রাজস্থানের বারমের জেলার একজন বাসিন্দা। রাজস্থান হস্তশিল্প যেমন শাড়ি, বিছানার চাদর, কুর্তা এবং অন্যান্য পোশাক তৈরিতে উন্নত এক রাজ্য। দেশ-বিদেশের সমস্ত জায়গায় রাজস্থান আজ তার হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। এই রাজস্থানী হস্তশিল্পের একজন কারিগর তথা শিল্পী হলেন রুমা দেবী। তাঁর নিজস্ব একটি গ্রুপ আছে যারা বর্তমানে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত বারমের, জেলমের এবং বিকানের জেলার প্রায় ৭৫টি গ্রামের ২২ হাজার মহিলাকে কর্মসংস্থান প্রদান করছে (Success Story) এবং তাঁদের শিল্প সিঙ্গাপুর, জার্মানি এবং কলম্বোর ফ্যাশন উইকেও প্রদর্শিত হয়েছে।
সাফল্যের রাস্তা মোটেও সহজ ছিল না (Success Story)
বর্তমানে অনেক মহিলাই তাঁদের নিজস্ব শিল্পীসত্তা এবং কাজের নিরিখে দেশ-বিদেশ জুড়ে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন। কিন্তু আর কয়েকজন সাধারণ মানুষের মতো রুমা দেবীর সফলতার রাস্তা (Success Story) কখনও সহজ ছিল না। এর পিছনে আছে এক কঠিন জীবন সংগ্রামের কাহিনি। ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে রাজস্থানের বারমের জেলার রাতওয়াসার গ্রামে পিতা খেতারাম এবং মাতা ইমরাতি দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রুমা দেবী। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই মাকে হারান তিনি। তার পর তাঁর পিতা আবার একটি বিয়েও করেন। রুমা বেড়ে ওঠেন তাঁর ৭ বোন ও এক ভাইয়ের সাথে। রুমাদেবী তাঁর মামার কাছে বড় হন। সেই গ্রামেরই একটি সরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। রাজস্থানে পানীয় জলের খুব সমস্যা থাকায় রুমা দেবী ১০ কিলোমিটার দূর থেকে গরুর গাড়িতে বসে পানীয় জল নিয়ে আসতেন। এরপর মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাঁর বিবাহ হয় বারমের জেলার মঙ্গল বেরি গ্রামের বাসিন্দা টিকুরামের সাথে।
কীভাবে তিনি সফলতা (Success Story) অর্জন করেন?
১৯৯৮ সালে গ্রামীণ বিকাশ এবং চেতনা সংস্থা তৈরি হয়েছিল। এই এনজিওর লক্ষ্য ছিল গ্রামের হস্তশিল্পগুলির মাধ্যমে মহিলাদের স্বনির্ভর করা। ২০০৮ সালে রুমা দেবী এই এনজিওর সাথে যুক্ত হন। এরপর শুরু হয় তাঁর কঠোর পরিশ্রম। নতুন নতুন ডিজাইন এবং আরও নানা হস্তশিল্পের এক খ্যাতনামা শিল্পী হিসেবে রুমা দেবী নাম অর্জন করেন। এর পর তাঁকে সেই এনজিওর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। বর্তমানে সেই এনজিওর সঙ্গে প্রায় ২২ হাজার মহিলা যুক্ত৷ এইসব নারীরা ঘরে বসেই তাঁদের হস্তশিল্প তৈরি করেন। রুমা দেবী তাঁদের হস্তশিল্প তৈরি করা পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে সব রকম সহায়তা করে থাকেন। সেইসব নারীদের ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার প্রায় কোটি টাকা (Success Story)।
রুমা দেবীর অর্জিত সম্মান (Success Story)
রুমা দেবী ভারতের মহিলাদের জন্য সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'নারী শক্তি পুরস্কার ২০১৮' তে পুরস্কৃত হন। এমনকি রুমা দেবীকে ১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি আমেরিকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনের হাওয়ার্ড ইন্ডিয়া সম্মেলনেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখান থেকে হাওওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুদের হস্তশিল্পের পণ্য তৈরি শেখানোর সুযোগ পান। সেখানে পাশাপাশি তাঁর পণ্য প্রদর্শনেরও সুযোগ পেয়েছিলেন। রুমা দেবী সোশ্যাল মিডিয়াতেও খুব সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন। তাঁর বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ারের সংখ্যা কয়েক লাখ। ফেসবুকে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ। ট্যুইটারে তাঁকে অনুসরণ করেন ৬ হাজার ৫০০ মানুষ।
সম্প্রতি রুমা দেবী তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একসাথে তাঁর কুঁড়েঘরে থাকার ছবি এবং তার ইউরোপ ভ্রমণের ছবি প্রকাশ করেছেন। ২০১৫-১৬ সালে অনুষ্ঠিত জার্মানির বৃহত্তম বাণিজ্য মেলা, যেখানে অংশগ্রহণের জন্য ফি প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা, সেখানে রুমা দেবী ও তাঁর গ্রুপকে বিনামূল্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল (Success Story)।
রুমা দেবীকে নিয়ে লেখা হয় একটি বইও
সম্প্রতি নিধি জৈন নামক এক লেখিকা 'হাউসলে কা হুনার' নামক একটি বই প্রকাশ করেন, যা রুমা দেবীকে নিয়ে লেখা। বইটিতে রুমা দেবীর সংগ্রাম এবং তাঁর সাফল্যের পুরো কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। কীভাবে তিনি একটি গ্রাম থেকে উঠে এসে বিদেশেও তাঁর শিল্পকে তুলে ধরেছেন এবং বিদেশে পৌঁছে হাজার হাজার নারীকে স্বাবলম্বী করেছেন (Success Story), তার উল্লেখ এই বইতে আছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।