img

Follow us on

Tuesday, Jan 21, 2025

Gangasagar Mela 2025: গঙ্গাসাগরের স্নানে কেন পুণ্য হয়, পৌরাণিক কাহিনিতে ভগীরথ কেন গঙ্গাকে এনেছিলেন?

Mythological Story: মকর সংক্রান্তিতে কেন গঙ্গাস্নান করা হয়, জানেন?

img

গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান। নিজস্ব চিত্র।

  2025-01-14 07:51:47

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৪৪ বছর পর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে পূর্ণ মহাকুম্ভ মেলার শুভ পুণ্যস্নান শুরু হয়েছে। একই ভাবে সারা ভারতে কুম্ভের পরেই বঙ্গের সাগরদ্বীপের গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela 2025) জগদ্বিখ্যাত। এই মেলা অনুষ্ঠিত হয় পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে। বলা হয় দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় মেলা। আবার এই সময় থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন থেকে উত্তরায়ণের পথে ধাবিত হয়। এই তিথিতে বৃহস্পতিও অত্যন্ত শুভ জায়গায় অবস্থান করে। এই মাহেন্দ্রক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। গঙ্গাসাগরে স্নান করে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দিলে মনের সকল বাসনা পূর্ণ বলে মনে করা হয়। গঙ্গাকে কীভাবে সাগরের সঙ্গমে আনা হয়েছিল এবং পুজো করা হয়েছিল সেই পৌরাণিক কাহিনি (Mythological Story) এখনও লোকমুখে প্রচলিত। স্থাননাম এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্বের বিচারে গঙ্গাসাগর হিন্দুশাস্ত্রে শ্রেষ্ঠ তীর্থ ধামের মধ্যে অন্যতম।

কোন তিথিতে গঙ্গা সাগরে পুণ্যস্নান (Gangasagar Mela 2025)?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela 2025) চলবে আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। মকর সংক্রান্তি লাগবে ১৪ জানুয়ারি দুপুর ২টো ৫৮ মিনিট থেকে এবং পুণ্যস্নান করার সময় লাগবে সকাল ৬টা ৫৮ মিনিটে। ওই মুহূর্ত চলবে সকাল ৬টা ৫৮ মিনিট থেকে ১৫ জানুয়ারি সকাল ৬টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত। প্রত্যেক বছরের মতো লক্ষ লক্ষ ভক্তরা পুণ্যের আশায় সাগরসঙ্গমে স্নান করবেন। গঙ্গায় স্নান করে ভক্তরা কপিলমুনির আশ্রমে দেবেন পুজোও। সমস্ত পাপ ধুয়ে নতুন ভাবে জীবনে পুণ্য সঞ্চয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তীর্থযাত্রী এবং ভক্তগণ। জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পেয়ে ক্ষুদ্র আত্মা পরমাত্মায় বিলীন হয়ে যেতে চান ভক্তরা। আর এই জন্য ভক্তরা মনে করেন ‘সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার’।

মেলাকে ঘিরে বিশ্বাস করা হয় যে কেউ যদি মাহেন্দ্রক্ষণে গঙ্গাসাগরে ডুব দেন তবে ১০০টি অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সমান পুণ্য হয়। এই স্নান একটি বৈদিক আচার স্বরূপ। এই পুণ্যস্নান হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভক্তরা গঙ্গাসাগর মেলায় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যেমন- গঙ্গা নদীতে ডুব দেওয়া এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে থাকেন। প্রাচীন মহাভারতে এই গঙ্গা-সাগর-ভগীরথ-কপিলমুনির গল্প কথা রয়েছে। আজকের সাগরদ্বীপ বহুপুরাতন হিন্দু সংস্কৃতি বহন করেছে। তাই তো লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি তীর্থযাত্রীদের সমাগম হয়।

জ্যোতিষশাস্ত্রে মকর সংক্রান্তির বিরাট গুরুত্ব

মকর সংক্রান্তিতে (Gangasagar Mela 2025) জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে সূর্য দেবতা এক রাশি থেকে অন্যরাশিতে চলন শুরু করে। আবার হিন্দুপঞ্জিকা ও পুরাণ  (Mythological Story) মতে সূর্য এদিন থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে এবং এখানে টানা একমাস অবস্থান করেন। মকর হল শনিঘর। সূর্য এবং শনি একে অপরের ঠিক বিপরীতে অবস্থান করে। শনি হলেন আবার সূর্য দেবের পুত্র। মকর সংক্রান্তি থেকে সূর্য তাঁর ছেলের উপর রাগ কমিয়ে দেয় এবং একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রসারিত করে। একেই শুভ সময় বলে ধরা হয়। অপর দিকে মকর সংক্রান্তি হল দীর্ঘ শীতের অবসান, একই সঙ্গে নতুন ফসল কাটার সময়। হিন্দুধর্ম মতে একেই সূর্যের উত্তরায়ণ হিসেবে ভাবা হয়। সকল অশুভ সময়ের অবসান হয় এবং শুভ সময়ের সূচনা হয়। এই সময় থেকে দিন বড় হতে শুরু করে এবং রাত ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে জ্যোতিষ অনুশীলন এবং জ্যোতির্বিদ্যাগত দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ “প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি সংবেদনশীল, কিন্তু স্থিতিশীল”, বললেন সেনাপ্রধান

ভগীরথের গঙ্গা আনয়ন

গঙ্গাসাগরের (Gangasagar Mela 2025) এই মেলা এবং তীর্থস্থান সম্পর্কে পৌরাণিক (Mythological Story) গল্পগাঁথা রয়েছে। বলা হয়, যেদিন মহাদেবের কেশ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়ে ঋষি কপিলমুনির আশ্রমে পৌঁছে গিয়েছিল সেই দিনটি ছিল মকর সংক্রান্তি। পৌরাণিক গল্পের আদলে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির মন্দির এখনও লক্ষ্য করা যায়। শোনা যায় মূল মন্দির সাগর গর্ভে অনেক আগেই তলিয়ে গিয়েছে। পরবর্তী সময়ে বর্তমান মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। এই কপিলমুনিকে ভাগবান বিষ্ণুর অবতার বলা হয়।

কপিলমুনির অভিশাপে ভস্ম হয়ে গিয়েছিল সাগরের ৬০ হাজার পুত্র

এই কপিলমুনির সময়ে ইক্ষাকু বংশের রাজা সাগর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র ৯৯ বার এই রাজার যজ্ঞ দেখে ভয় পেয়ে আটকানোর ফন্দি করেন। রাজা সাগর যজ্ঞের ঘোড়াকে ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং ঘোষণা করে ছিলেন এই ঘোড়া যে যে রাজ্যের উপর দিয়ে যাবে তাঁরা সাগরের জয় স্বীকার করতে হবে। একইভাবে ঘোড়াকে রক্ষা করতে ৬০ হাজার পুত্রকে পাঠিয়ে ছিলেন। দেখা গিয়েছে একটি ঘোড়া হারিয়ে যায়, এরপর ওই ঘোড়া পাওয়া যায় কপিলমুনির আশ্রমে। কার্যত ইন্দ্র ঘোড়াকে কপিলমুনির আশ্রমে লুকিয়ে রাখেন কৌশল করে। তারপর রাজার ছেলেরা কুপিলমুনিকে কুকথা বলে সম্বোধন করেন। ফলে মুনি ক্ষিপ্ত হয়ে চোখের তীক্ষ্ণ ক্ষোভের আগুনে ৬০ হাজার ছেলেকে ভস্ম করে দেন। এরপর বহু বছর ধরে অভিশাপ থেকে মুক্তি পাননি রাজা সাগর। পরে সূর্যবংশের পরবর্তী বংশধর রাজা ভগীরথ কপিল মুনির আশ্রমে পৌঁছে গিয়ে ক্ষমা চান। তিনি পিতৃপুরুষের মুক্তির জন্য আশীর্বাদ কামনা করেন। তখন গঙ্গাকে (Gangasagar Mela 2025) কঠিন তপস্যার মাধ্যমে গঙ্গাকে নিয়ে আসার কথা বলে ভগীরথকে মুক্তির পথ দেখান কপিলমুনি।

শ্রাদ্ধ, প্রদীপ প্রজ্বলন, পিন্ডদান হয়

রাজা ভগীরথ তপস্যা করে গঙ্গাকে হিমালয় থেকে সমুদ্রে নিয়ে আসেন। ফলে গঙ্গার প্রবহমান জলধারায় মুক্তি লাভ করেন সাগরের ৬০ হাজার পুত্র। আত্মমুক্তির তাই পীঠস্থান হল গঙ্গাসাগর। সমস্ত পাপের স্খলন হয় গঙ্গাস্নানে। সাগর রাজার নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জায়গার সাগর নামকরণ করা হয়েছে। একই ভাবে রাজা ভগীরথের নামে নদীর নাম হয় ভাগীরথী। সমুদ্র এবং দ্বীপের নামে নামকরণ হয়েছে সাগরদ্বীপ। হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্রধাম। এখানে স্নানের সঙ্গে সঙ্গে শ্রাদ্ধ, প্রদীপ প্রজ্বলন, পিন্ডদান এবং পূজা আচার সব করা হয়। এককথায় হিন্দুদের কাছে মোক্ষধাম গঙ্গাসাগর (Gangasagar Mela 2025)।   

 

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

Tags:

Madhyom

bangla news

Bengali news

ganges

news in bengali

Gangasagar Mela 2025

bhagirath


আরও খবর


খবরের মুভি


ছবিতে খবর