Bengali New Year: বঙ্গাব্দের প্রবর্তক শশাঙ্ক, বাঙালির আবেগের সঙ্গে পয়লা বৈশাখকে এক সুতোয় বাঁধলেন রবীন্দ্রনাথ
পয়লা বৈশাখ, বাঙালির চিরন্তন আবেগ।
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ, পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh), বাংলা নববর্ষের শুরু। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু মুছে নতুনকে স্বাগত জানানোর দিন। বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী চৈত্র মাস থেকে নতুন বছর শুরু হলেও বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসেবে নতুন বছর শুরু হয় বৈশাখ মাস থেকে। সূর্য মেষ রাশিতে প্রবেশ করা থেকেই শুরু হয় নতুন বাংলা বছর। অর্থাত্ মেষ সংক্রান্তি বা চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিনটি পয়লা বৈশাখ নামে পরিচিত। পৃথিবীর সব দেশেই পালন করা হয় নববর্ষ। চলে আনন্দ-অনুষ্ঠান, নাচগান। প্রকৃতপক্ষে এ বর্ষবরণের উৎসব। পয়লা বৈশাখ (বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন তথা বাংলা নববর্ষের শুরু। এই দিনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশে বিশাল জাঁকজমক করে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেয়। এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল অথবা ১৫ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পালিত হয়। সেই মতো এই বছর ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ পালিত হচ্ছে।
বাংলা নববর্ষের (Poila Baisakh) ইতিহাস নিয়ে রয়েছে নানা মত ও মতামত। রাজা শশাঙ্কের সময় সপ্তম শতাব্দীতে বাঙালি যুগ শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া চন্দ্র ইসলামি বর্ষপঞ্জি ও সৌর হিন্দু বর্ষপঞ্জির সমন্বয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও মত রয়েছে। এছাড়াও, কিছু গ্রামীণ অংশে, বাঙালি হিন্দুরা তাদের যুগের শুরুর কৃতিত্ব সম্রাট বিক্রমাদিত্যকে দেয়। তারা বিশ্বাস করে যে বাংলা ক্যালেন্ডার শুরু হয়েছিল ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে।
বঙ্গাব্দের প্রবর্তক শশাঙ্ক, এই ধারণা মানতে গেলে ইতিহাসের পাতায় ফিরতে হবে ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ দিকে। ঘুরে আসতে হবে আজকের বহরমপুর শহরের কর্ণসুবর্ণতে। সেই সময়ে শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে একজন সামন্ত রাজা। পরবর্তীকালে তিনি সার্বভৌম গৌড়ের শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন বঙ্গভূমিতে। এই তত্ত্ব অনুসারে, ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে রাজা শশাঙ্ক মারা যাওয়ার ৪৫ বছর আগে বঙ্গাব্দ চালু হয়। অঙ্কের দিক থেকে, বঙ্গাব্দের সঙ্গে ইংরেজি সালের ব্যবধানও ঠিক ৫৯৩ সালের। নতুন বছরে, অর্থাৎ ১৪৩১ সালের সঙ্গে ইংরেজি ২০২৪ সালের ব্যবধানও ৫৯৩ বছরের। তবে এই তত্ত্বের সমালোচকরা বলেন যে ওঁর আমলে বাংলা ভাষা চালুই হয়নি। তাই বাংলার জন্য আলাদা সন চালু হওয়া বাড়াবাড়ি ভাবনাচিন্তা।
বাঙালির সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh)। এই দিনে বাঙালি যেন তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে আরও একটু বেশি জড়িয়ে ধরে। নিজের শিকড়ের আরও কাছাকাছি এদিন আসে বাঙালি সমাজ। বাঙালি মেয়েরা শাড়ি ও ছেলেরা ধুতি-পাঞ্জাবি বা পাজামা-পাঞ্জাবিতে সেজে বাঙালির ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটান। তার সঙ্গে বাঙালি খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা মারা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই দিনটি কাটান বাঙালিরা।
দূর অতীতে নববর্ষে বাংলায় তেমন কোনও অনুষ্ঠান হত না। পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) মানে ছিল হালখাতার দিন। ‘হাল’ শব্দটি সংস্কৃত ও ফারসি, দু’টি ভাষাতেই পাওয়া যায়। সংস্কৃত ‘হল’ শব্দের অর্থ লাঙল। তার থেকে বাংলায় এসেছে হাল। আর ফারসি ‘হাল’ মানে নতুন। আজকের পয়লা বৈশাখে সে কালে নববর্ষ পালনের উৎসব হত না, এটি ছিল ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার দিন। এই দিনটি নতুন আর্থিক বছরের সূচনা করে। লোকেরা হালখাতা নামে নতুন অ্যাকাউন্টের খাতাও খোলে। এখনও বাংলার ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রথম দিনটাকে হালখাতা হিসেবে পালন করে থাকেন। তার সঙ্গে দোকানে লক্ষ্মী-গণেশের পুজো ও ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। তাই বাংলা নববর্ষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে হালখাতা। বাঙালির ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই হালখাতা। পুরনো বছরের সব হিসেব মিটিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় নতুন খাতায় হিসেব-নিকেশ করা।
আরও পড়ুন: শুরু হল হিন্দু নববর্ষ 'বিক্রম সংবত ২০৮১', জানেন এর তাৎপর্য?
নববর্ষে ভাল ফসল ফলনের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন চাষিরা। এই দিনে মানুষ পবিত্র নদীতে স্নান করে পুজো করে। ঘর পরিষ্কারের পর তৈরি হয় আল্পনা। নতুন বছরের প্রথম দিনে মন্দিরে গিয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ নেওয়া হয়। এইদিন বিশেষ খাবার প্রস্তুত করা হয়। এই দিনে গরু পুজো , নতুন কাজের শুরু, শুভ বৃষ্টির জন্য মেঘ পুজো ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ। পয়লা বৈশাখে মানুষ সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য সূর্য দেবের পাশাপাশি গণেশ ও মা লক্ষ্মীর পুজো করে।
তবে যেভাবে বা যখন থেকেই বাঙালি পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh) পালন করুক না কেন যিনি বাঙালির প্রাণের সঙ্গে এদিনটিকে জুড়ে দিলেন, তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ। যা ছিল বাণিজ্যিক, তা কবিগুরু হাত ধরে চিরকালের জন্যে ধরা পড়ল আমাদের চিন্তা-চেতনার মধ্যে। তাঁর কবিতা, গান, প্রবন্ধ, নাটকে বার বার এসেছে নতুন বছরের স্বাগতবাণী। এ তাঁর কাছে নবজন্ম। পুরনো জীর্ণ জীবনের অস্তিত্বকে বিদায় দিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশের আনন্দ অনুভূতি। কবির আকুল আর্তি, "ওরে, নূতন যুগের ভোরে / দিস নে সময় কাটিয়ে বৃথা সময় বিচার করে"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।