Christmas: যীশুর জন্মের আগে রোম থেকে জার্মানি সর্বত্র পালন হত শীতকালীন উৎসব, পরে ক্রিসমাস পালন করা হতে থাকে যীশুর জন্মদিন হিসেবে.....
প্রতীকী ছবি
মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস উৎসব (History Of Christmas) পালিত হয়। এই পবিত্র উৎসবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকে। বাঙালির কাছে ক্রিসমাস মানে ঘুরতে যাওয়া, পিকনিক করা। ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস উৎসব পালনের রীতি বিশ্বে অনেক পুরনো। এর যেমন একটা ধর্মীয় বিষয় রয়েছে। তেমনই ক্রিসমাসে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃতিও দেখা যায়। খ্রিস্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এই দিনে তাঁদের উপাস্য যীশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যীশু হলেন একজন ধর্মীয় নেতা, যাঁর শিক্ষা মেনে চলেন খ্রিস্টানরা। এদিন ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। একে অপরকে উপহার বিনিময় করেন খ্রিস্টানরা। গির্জায় গিয়ে তাঁরা প্রার্থনা করেন। পরিবারের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার রীতিও দেখা যায়। এদিন তাঁরা এও বিশ্বাস করেন যে সান্তাক্লজ এসে তাঁদের উপহার দিয়ে যাবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যীশুর আগমনের (History Of Christmas) কয়েক শতাব্দী আগেই প্রথমদিকে ইউরোপীয়রা শীতকালে এই দিনটি পালন করতেন। ২২ ডিসেম্বরের পর থেকেই উত্তর গোলার্ধে ধীরে ধীরে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে এবং রাতের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। সূর্যালোকের সময় বাড়ার ফলে, এই সময়েই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উৎসব পালন করার রীতি দেখা যেত। অন্যদিকে, ইউরোপের অন্যতম দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় ২১ ডিসেম্বর থেকেই বড়দিন পালনের রীতি দেখা যেত। এই সময়ে তাঁরা বাড়িতে আগুন জ্বালাতেন এবং ১২ দিন ধরে পালন করা হত বড়দিন। ডিসেম্বরে শেষে ইউরোপে যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে থেকেই উৎসবের এমন মেজাজ দেখা যেত। এই সময় তাঁরা গবাদি পশুকে হত্যা করে, তাদের মাংস খেত। সঙ্গে থাকত মদ এবং বিয়ার। অন্যদিকে জার্মানিতে শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে তাদের দেবতা উডেনকে সম্মান জানাতে বড়দিন পালন করা হত, জার্মান জাতির বিশ্বাস ছিল যে ওডেন আকাশ পথে গমন করতেন এবং মানুষের ভাগ্য় নির্ধারণ করতেন।
অন্যদিকে, রোমে এই উৎসব এক মাস (History Of Christmas) ধরে পালন করা হত। রোমান ধর্মে কৃষি দেবতা ছিলেন সাটুরনালিয়া। তাঁরই সম্মানে শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু করে পুরো একমাস ধরে পালন চলত উৎসব। এই সময়ে ক্রীতদাসদেরও সাময়িক স্বাধীনতা দেওয়া হত। তাঁদের ছুটি দেওয়া হত। একই সঙ্গে শীতকালে রোমানরা জুভেনালিয়া নামের একটি উৎসব পালন করতেন। এই উৎসবে রোমান শিশুদের সম্মান একটি ভোজের ব্যবস্থা করা হত এবং সেখানকার উচ্চ বংশজাতরা ২৫ ডিসেম্বর সূর্যদেবতা মিত্রার জন্মদিন পালন করতেন। বিশ্বাস করা হয়, মিত্রা হলেন একজন শিশু দেবতা। যিনি একটি শিলা থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মিত্রার জন্মদিন ছিল বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন। তাই এটা স্পষ্ট, শুধুমাত্র যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবেই যে বড়দিন এমনটা নয়, বড়দিন পালনের ইতিহাস দেখলে আমরা বুঝতে পারছি যে যীশুর জন্মের আগেও বড় দিন পালনের রীতি ইউরোপে ছিল।
প্রথমদিকে যীশুর জন্ম সেভাবে উদযাপন করা হয়নি। চতুর্থ শতাব্দীতে গির্জার সঙ্গে যুক্ত ধর্মীয় কর্তা ব্যক্তিরা প্রথম যীশুর জন্মদিনকে ছুটি হিসেবে পালন করা সিদ্ধান্ত নেন। জানা যায়, বাইবেলে যীশুখ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে কোনও তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। অন্যদিকে কিছু সূত্রে দাবি করা হয়, যে যীশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল বসন্ত কালে। তবুও পোপ জুলিয়াস-১, ২৫ ডিসেম্বর বেছে নেন যীশুখ্রিষ্টের জন্মদিন হিসেবে। এর পরবর্তীকালে এই প্রথাটি ৪৩২ সালের মধ্যে মিশরে এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই ২৫ ডিসেম্বর যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন হিসেবে পালন করা হতে থাকে। অর্থাৎ শীতকালীন উৎসবের যে প্রথা সেই রীতি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে ইউরোপ। শীতকালীন উৎসবটা কেন্দ্রীভূত হতে থাকে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে। এখানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন গির্জার ধর্ম প্রচারকরা। তাঁরা সেভাবেই ২৫ ডিসেম্বর যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
ইংল্যান্ড আমেরিকায় নিষিদ্ধ হয়েছিল ক্রিসমাস
অন্যদিকে, ১৭ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে ইউরোপে ক্রিসমাস (History Of Christmas) উদযাপনের পদ্ধতি অনেকটাই বদলে যায়। ১৬৪৫ সালে ইংল্যান্ড দখল করেন অলিভার ক্রোমওয়েলের বাহিনী। এই সময় তাঁরা অবক্ষয় থেকে ইংল্যান্ডকে বাঁচানোর জন্য সে দেশের জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই তাঁরা ক্রিসমাসকে বাতিল বলে ঘোষণা করেন। পরবর্তীকালে রাজা দ্বিতীয় চার্লস ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসলে, ফের ক্রিসমাসের প্রচলন শুরু হয়। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দিকে ক্রিসমাস ছুটির দিন ছিল না। ১৬৫৯ থেকে ১৬৮১ সাল পর্যন্ত সে দেশের বস্টনে বড়দিন উদযাপন নিষিদ্ধ ছিল। যে কেউ ক্রিসমাস পালন করলে তাঁকে জরিমানা পর্যন্ত করা হত। পরবর্তীকালে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আমেরিকায় ক্রিসমাস পালন শুরু হয়।
অন্যদিকে ক্রিসমাস উৎসবের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সান্তাক্লজ। আবার সান্তাক্লজ নামের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, সেন্ট নিকোলাস নামে এক সন্ন্যাসীর কথা। যিনি ২৮০ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। সেন্ট নিকোলাস, তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সমস্ত সম্পদ দরিদ্র এবং অসুস্থদের সাহায্য করার জন্য বিতরণ করেছিলেন। এই সময় তিনি গ্রামাঞ্চলগুলিতে ভ্রমণ করতেন ও সেখানকার বাচ্চা ছেলে, অসুস্থ রোগী এবং নাবিকদের কাছে তাঁর সমস্ত সম্পত্তি বিতরণ করে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে ওই সেন্ট নিকোলাস সকলের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত হতে থাকেন। পরবর্তীকালে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে নিউইয়র্কে সেন্ট নিকোলাস আমেরিকার সংস্কৃতির মধ্যে প্রবেশ করেন। সেন্ট নিকোলাসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাচ নাগরিকরা সেন্টার ক্লাস নামে ডাকতেন। পরবর্তীকালে সেন্টার ক্লাস নাম থেকে আসে সান্তাক্লজ।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।